বিদ্বেষের বাংলাদেশে যাওয়ার ছক, ‘সাম্প্রদায়িক’ হুমায়ুনের!

হিন্দুদের কেটে ভাগীরথীর জলে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। অভিযোগ করেছেন, তৃণমূলের নেতৃত্বে মুসলিমদের স্থান দেওয়া হচ্ছে না। সাম্প্রদায়িক তকমা পাওয়া এই নেতা হলেন তৃণমূল…

Trinamool MLA Humayun Kabir’s Controversial Bangladesh Trip Amid Communal Allegations and New Party Plans

হিন্দুদের কেটে ভাগীরথীর জলে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। অভিযোগ করেছেন, তৃণমূলের নেতৃত্বে মুসলিমদের স্থান দেওয়া হচ্ছে না। সাম্প্রদায়িক তকমা পাওয়া এই নেতা হলেন তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর (Humayun Kabir)। এখন ঘাসফুল নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর তীব্র সংঘাত। তৈরি করেছেন বাংলাদেশে যাওয়ার ছক।

গত এক বছর ধরে উত্তাল বাংলাদেশ। পদ্মাপাড়ে এখন তীব্র ভারত-বিরোধিতা। পাশাপাশি চলছে হিন্দুদের উপর নির্যাতন। খুন, ধর্ষণ, লুটপাট থেকে শুরু করে মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর—সবই চলছে লাগাতার। কট্টরপন্থীদের চাপে বহু পুজো বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন। বাংলাদেশে হিন্দু-বিদ্বেষ কিংবা ভারত-বিরোধিতা নতুন কিছু নয়। প্রায় চার বছর আগে দুর্গাপুজোর সময় মৌলবাদীদের তাণ্ডবে একের পর এক মণ্ডপ ভাঙা হয়েছিল। হিন্দুদের বাড়িতে হামলা চলে, প্রাণহানিও ঘটে।

   

এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন দুর্গাপুজোর সময় বাংলাদেশে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। ভরতপুরের এই বিধায়ক খোলাখুলি জানিয়ে দিয়েছেন, “বাংলাদেশে অনেক আত্মীয়-পরিজন আছেন। তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে যাব। ভিসা পেলে যাব, না পেলে আর যাওয়া হবে না।”

তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে, পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকেই। হুমায়ুনের অভিযোগ, তাঁকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে পঞ্চায়েতের প্রার্থী তালিকা তৈরি করেছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই ক্ষোভ সাময়িকভাবে সামাল দেওয়া গেলেও এখন আর থামানো যাচ্ছে না। প্রকাশ্যে দলকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিনি নতুন দল গঠন করে ভোটে লড়বেন। কমপক্ষে ৫০টি আসনে প্রার্থী দিতে চান তিনি। এই ঘোষণার পরেই তৃণমূলের অন্দরে শুরু হয়েছে আলোড়ন। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদ ও মালদহ জেলায় হুমায়ুনের প্রভাব কতটা ক্ষতি করবে তৃণমূলের, তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিশ্লেষণ। তাঁর নজরে রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের কয়েকটি আসনও, যেখানে মুসলিম ভোটারদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। গত লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুর কেন্দ্রে গুজরাট থেকে ইউসুফ পাঠানকে প্রার্থী করার পরই তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে নতুন দল গঠনের ইঙ্গিত দেন।

Advertisements

২০২৬ সালের ভোটের আগে স্বাধীনতা দিবসের পর থেকেই মাঠে নামবেন হুমায়ুন কবীর। জানুয়ারির শুরু থেকেই শুরু হবে তাঁর দলের আনুষ্ঠানিক যাত্রা। দল গঠনের প্রশাসনিক প্রক্রিয়াও এগিয়ে চলেছে। হুমায়ুন জানিয়েছেন, “বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা আমার সঙ্গে রয়েছেন। দল তৈরির প্রাথমিক সব কাজ তাঁরাই সামলাচ্ছেন।” অগাস্ট থেকে জানুয়ারি—এই সময়ে চলবে প্রস্তুতির কাজ। এই সময়ের মধ্যে সপরিবারে বাংলাদেশ ভ্রমণের পরিকল্পনাও করেছেন তিনি।

অন্যদিকে, বিদ্রোহী বিধায়কের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছে তৃণমূল। “দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো”—এই প্রবাদে আস্থা রেখে হুমায়ুন কবীরকে দল থেকে বহিষ্কারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ পর্যালোচনা করে রিপোর্ট পাঠানো হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই নেওয়া হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের কার্যকলাপের উপর বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। তিনি আর কোন কোন বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদ ও মালদহ—এই দুই জেলার প্রায় এক ডজন বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন হুমায়ুন কবীর।