রথের দড়িতে টান পড়েছে। দুর্গাপুজোর ঢাকে কাঠি পড়েছে। উৎসবের আমেজ। পর্যটনের ভরা মরশুম। পুজোর সময় ছুটি কাটাতে বাংলাদেশ যাচ্ছেন তৃণমূল বিধায়ক। একা যাবেন না, সপরিবারে বাংলাদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন তিনি। গত এক বছর ধরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক শীতল। বাংলাদেশের মাটিতে ভারতের বিরুদ্ধে তীব্র বিদ্বেষ। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সফর কেন? বিধায়কের পরিকল্পনা ঘিরে উঠছে নানা প্রশ্ন।
আলোচিত জনপ্রতিনিধির নাম হুমায়ুন কবীর (Humayun Kabir)। মুর্শিদাবাদের ভরতপুর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক। দলের সঙ্গে তাঁর এখন দূরত্ব তৈরি হয়েছে, যা শুরু হয়েছিল বছর দুয়েক আগে, পঞ্চায়েত ভোটের সময়। হুমায়ুনের অভিযোগ, তাঁকে সম্পূর্ণ আড়ালে রেখে পঞ্চায়েত ভোটের প্রার্থী তালিকা তৈরি করেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই সময় হুমায়ুনের ক্ষোভ সামাল দেওয়া গেলেও এখন আর হচ্ছে না। দলকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, তিনি আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে নতুন দল গঠন করে ভোটে লড়াই করবেন। কমপক্ষে ৫০টি আসনে তিনি প্রার্থী দিতে চান। তাঁর এই ঘোষণার পরেই তৃণমূলের অন্দরে ভূমিকম্প! কারণ, সংখ্যালঘু মুসলিম অধ্যুষিত জেলা মুর্শিদাবাদ, মালদায় হুমায়ুন কবীরের দল কতটা ভোট কাটবে, তার বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। হুমায়ুন কবীরের নজরে আছে উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের কয়েকটি আসন। উত্তরবঙ্গের এই দুই জেলাতেও মুসলিম ভোটারদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। গত লোকসভা নির্বাচনের সময় বহরমপুর কেন্দ্রে ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানকে গুজরাট থেকে এনে প্রার্থী করার পর ক্ষোভ উগরে হুমায়ুন কবীর বলেছিলেন, তিনি নতুন দল গড়বেন।
ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটের আগে হুমায়ুন কবীরের নতুন দল আসছে। স্বাধীনতা দিবসের পর কোমর বেঁধে ময়দানে নামবেন হুমায়ুন কবীর। আগামী বছরের শুরুর দিন থেকেই তাঁর দল যাত্রা শুরু করবে বলে জানিয়েছেন ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক। নতুন দল চালুর প্রশাসনিক কাজের জন্য কর্মীরাও প্রস্তুত। হুমায়ুন কবীর বলেন, “বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী আমার সঙ্গে আছেন। দল তৈরির প্রাথমিক সব কাজ তাঁরাই করবেন।” আগস্ট থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে সেই কাজ। মাঝে সপরিবারে ঘুরতে যাবেন হুমায়ুন কবীর, সীমান্ত পেরিয়ে পড়শি রাষ্ট্রে।
ছুটি কাটাতে বাংলাদেশে কেন? হুমায়ুন কবীর বলেন, “বাংলাদেশে অনেক আত্মীয়-পরিজন আছেন। তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে যাব।” সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, “ভিসা পেলে যাব, না পেলে আর যাওয়া হবে না।”
বাংলাদেশ সফর হোক বা না হোক—হুমায়ুন কবীরের নতুন দল হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তে তিনি অনড়। অন্যদিকে, দলীয় বিধায়কের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছে তৃণমূল।
“দুষ্টু গরুর থেকে শূন্য গোয়াল ভালো”—এই প্রবাদে আস্থা রেখে বিদ্রোহী বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে দল থেকে তাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলীয় শৃঙ্খলা ভাঙার অভিযোগগুলি পর্যালোচনা করে রিপোর্ট যাবে মমতার কাছে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে, ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের অবস্থানের উপর বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। তিনি আর কোন কোন বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, সেসব গোপনে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদ ও মালদা—এই দুই জেলার এক ডজন বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন হুমায়ুন কবীর।