ভিন ধর্মে বিয়ে এবং ধর্মান্তরের পর এক নারীর আত্মহত্যা (Interfaith Marriage Violence) ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলার গলসিতে। মৃতার নাম সুলতানা পারভিন (ধর্মান্তরের পর নাম – সাথী নন্দী)। তিনি মুসলিম ধর্ম ত্যাগ করে হিন্দু যুবক প্রীতম নন্দীর সঙ্গে বিয়ে করেন এবং হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেন। জানা গেছে, সুলতানা পারভিনের দাদা সাবির উদ্দিন আহমেদ হলেন তৃণমূল কংগ্রেসের গলসি-২ ব্লকের সভাপতি। পরিবার মেনে না নেওয়ায়, একাধিক হুমকি ও অত্যাচারের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে দম্পতিকে।
বিয়ে ও ধর্মান্তরের পর শুরু হয় অত্যাচার
সূত্রের খবর অনুযায়ী, মুসলিম পরিবারে জন্ম সুলতানা পারভিনের। তিনি হিন্দু যুবক প্রীতম নন্দীর প্রেমে পড়েন। এক পর্যায়ে তারা বিয়ে করেন এবং সুলতানা ধর্মান্তরিত হয়ে ‘সাথী নন্দী’ নামে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত একেবারেই মেনে নিতে পারেনি তাঁর পরিবার। দাদা সাবির উদ্দিন আহমেদ রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রীতম ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা দায়ের করেন।
পরিস্থিতির চাপে পড়ে সাথী ও প্রীতম চেন্নাই পালিয়ে যান। সেখান থেকে পরে ফিরে এসে, আদালতে আত্মসমর্পণ করেন এবং আদালত সাথীর বক্তব্য অনুযায়ী তাঁদের একত্রে থাকার অনুমতি দেন। এরপর তাঁরা প্রীতমের বাড়িতে স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন শুরু করেন। কিন্তু সেখানেও তাঁদের উপর থেকে হুমকি ও মানসিক চাপ কমেনি।
প্রাণঘাতী হামলার দিন
২৬ জুন ২০২৫, সন্ধ্যা প্রায় ৫টা নাগাদ, অভিযোগ অনুযায়ী সাবির উদ্দিন আহমেদের ভাই ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও তার সঙ্গে থাকা মৌলবাদীদের একটি দল প্রীতম নন্দীর বাড়িতে হামলা চালায়। সাথীকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়। প্রীতমকে মারধর করা হয়। কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয় বলে স্থানীয়রা দাবি করেন।
আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত ও তার পিছনের কারণ
এরপর রাত প্রায় ২টা নাগাদ সাথী নন্দী আত্মহত্যা করেন। অনুমান করা হচ্ছে, দীর্ঘদিনের অত্যাচার, মানসিক চাপ এবং স্বামী ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তার প্রতি প্রশাসনের উদাসীনতার ফলে তিনি চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হন। মৃত্যুর আগে একাধিকবার ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করে সাথী জানিয়েছেন, তাঁর ভাই ও মৌলবাদী দলগুলি প্রীতম ও তাঁর পরিবারের জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছে। কিন্তু প্রশাসন বারবার নিরব থেকেছে।
আত্মহত্যার পর ফের হামলা
সাথীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ফের একবার মৌলবাদী দলগুলি হামলা চালায় প্রীতমের বাড়িতে। বাড়ি ভাঙচুর করা হয়, প্রীতমকে নির্মমভাবে মারধর করা হয়। পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করে। বর্তমানে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন, অবস্থা সংকটজনক বলে জানা গেছে।
Shocking news coming in from #PurbaBardhaman district of #WestBengal.
A Muslim girl named Sultana Parvin married a Hindu boy named Pritam Nandi. She embraced Hindu Dharma and became Sathi Nandi. But her family became angry over this.
Sultana Parvin’s elder brother Sabir Uddin… pic.twitter.com/pUTadOf8Lm
— Hindu Voice (@HinduVoice_in) June 28, 2025
প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের বিরুদ্ধে বড় ধরনের প্রশ্ন উঠেছে। সাথী নন্দী বারবার তাঁর নিরাপত্তা ও তাঁর স্বামীর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং, রাজনৈতিক প্রভাব ও ধর্মীয় মৌলবাদের চাপে পড়ে একটি তরুণীর জীবন চলে গেল, এমনটাই মনে করছেন প্রতিবেশীরা।
এই ঘটনা আবারও তুলে ধরল, ভিন ধর্মে বিয়ে এবং ধর্মান্তরের মতো ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে কীভাবে চরম হিংসা, হুমকি ও মানসিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে। সমাজ ও প্রশাসনের নিরবতা এবং রাজনৈতিক প্রভাবের জেরে একটি তরতাজা প্রাণ ঝরে গেল, যা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য গভীর প্রশ্ন তুলে দেয়।