তৃণমূল কাউন্সিলরের ভাই খুন, দিদির অনুগামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ

মিলন পণ্ডা, কাঁথি: তৃণমূল কাউন্সিলরের (Tmc Councillor) বিরুদ্ধে সুপারি কিলার দিয়ে ভাইকে খুন করার অভিযোগ উঠল৷ এই অভিযোগ করেছেন মৃতের স্ত্রী ও দাদা। মঙ্গলবার রাতে…

তৃণমূল কাউন্সিলরের ভাই খুন, দিদির অনুগামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ

মিলন পণ্ডা, কাঁথি: তৃণমূল কাউন্সিলরের (Tmc Councillor) বিরুদ্ধে সুপারি কিলার দিয়ে ভাইকে খুন করার অভিযোগ উঠল৷ এই অভিযোগ করেছেন মৃতের স্ত্রী ও দাদা। মঙ্গলবার রাতে তমলুক একটি বেসরকারি নার্সিংহোম থেকে মৃতদেহটি তমলুক হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর বাড়িতে পৌঁছায়। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সুপারি কিলার দিয়ে ভাইকে খুনের অভিযোগ তুললেন খোদ পরিবারের সদস্যরা।

বাড়িতেই একাধিক পুরুষের সঙ্গে অসামাজিক কাজের অভিযোগ ওই মহিলা কাউন্সিলারের বিরুদ্ধে। এমন বিস্ফোরক অভিযোগকারী কাউন্সিলরের ভাই। আবার মৃত্যুর আগে কাউন্সিলারের ভাইয়ের কথোপকথনের চাঞ্চল্যকর অডিও ভাইরাল। সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কাউন্সিলর৷

   

সোমবার সন্ধ্যা ৭ টা নাগাদ বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক ওই যুবককে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃত যুবক রামপদ দাস ( রাজু) (৪২)। তার বাড়ি কাঁথি পুরসভা মনেহরচকে। কাঁথি পুরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রীনা দাস।

মৃতের পরিবারের অভিযোগ, রিনা ও তার ঘনিষ্ঠ বাবু খাঁন (আলমারুফ খাঁন) মদতে দুষ্কৃতীকারীরা রামপদকে অপহরণ করে। কাঁথি হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয় বলে অভিযোগ।

মৃতের পরিবারের আরও অভিযোগ, কাউন্সিলর হওয়ার সুবাদে প্রায়ই গভীর রাত পর্যন্ত, বাড়িতে অনৈতিক কার্যকলাপ চালাত রীনা ও তার ঘনিষ্ঠরা। রীনার ছোট ভাই রামপদ তার প্রতিবাদ করে। ফলে রামপদ ও তার স্ত্রী শ্রাবণীর উপর রিনা দলবল নিয়ে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। স্ত্রী শ্রাবণীকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য রামপদ কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে যায়।

রিনা ও তার ঘনিষ্ঠ বাবু খানের মদতে, দুষ্কৃতীরা রামপদকে সেই হাসপাতাল থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। রামপদকে বেধড়ক মারধর করে ও আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয় বলে অভিযোগ।

মৃত রামপদ দাসের স্ত্রী শ্রাবণী দাস বলেন,  “বাবু খান ও রীনা দাস (তৃণমূলের কাউন্সিলর) মিলে আমার স্বামীকে খুন করেছে। আমার ননদ আমাকে মারধর করেছিল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। স্বামী হাসপাতালে ভর্তি করে বাইরে এলে রীণা দাস ও বাবু খাঁনের লোকজন মিলে তুলে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করে। তারপরে বিষক্রিয়া অবস্থায় স্বামীকে দেখতে পাওয়া যায়৷ গভীর রাতে আমার বাড়িতে বাবু খান আসতো। সঠিক বিচার চাই। বাবু খাঁনের যাবজ্জীবন সাজা চাই, ফাঁসি হলে আরও ভালো৷”

Advertisements

মৃত রামপদ দাসের দাদা কাঁথি আদালতের আইনজীবী চন্দ্রশেখর দাস বলেন, “আমাকে ফোন করে ভাই জানায় প্রচুর মারধর করেছে। আমার হাতে আগ্নেয়াস্ত্র (বন্দুক) ধরিয়ে ছবি তুলেছে। তুই আমার ছেলেটাকে দেখবি। আমার ভাইকে রীনা দাস খুন করেছে। বাবু খানের সহযোগিতায় আমার ভাই খুন হয়েছে। বাবু খান রাতে আমার বাড়িতে এসে রীনা দাসের সঙ্গে শারীরিক ও অসামাজিক কাজকর্ম করতো। আমি প্রতিবাদ করেছিলাম বলে আমাকে আগে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আমি এখন অন্যত্র ভাড়া বাড়িতে থাকি৷”

মৃত রামপদ দাসের দিদি বীনা মাইতি বলেন, “আমার ভাইকে খুন করা হয়েছে। প্রতিদিন রাত ১ টার সময় দলীয় কথাবার্তা হয়। অবিলম্বে ওদের শাস্তি চাই৷”

মৃত্যুর আগে রামপদ ফোনে এক সাংবাদিক ও দাদা চন্দ্রশেখরকে ঘটনার কথা কাঁদতে কাঁদতে জানায়। সেই চাঞ্চল্যকর অডিও ভাইরাল হয়েছে। দুষ্কৃতীরা রামপদকে বেধড়ক মারধর করে। রামপদর হাতে বন্দুক ধরিয়ে দিয়ে ছবি তোলে। দুষ্কৃতীকারীদের হাতে তরোয়াল ছিল এবং তারা হিন্দিতে কথা বলছিল। ভাইরাল অডিওতে এমনটাই বলতে শোনা গেছে রামপদকে। তবে এই অডিওর সত্যতা যাচাই করিনি kolkata 24×7.in।

অপরদিকে, কাউন্সিলার রিনা দাসও কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে ভাই ও তার স্ত্রী মারধর করেছে বলে কাউন্সিলরের পাল্টা দাবি। যদিও এই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

কাউন্সিলার (কাঁথি পুরসভা ৬ নং ওয়ার্ড়) রীনা দাস বলেন, “পাশে পিসির বাড়িতে গিয়ে ভাই (রামপদ দাস) তার স্ত্রী শ্রাবনী দাস প্রচুর মারধর করে। তারপরে আমি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। এরপর কি ঘটনা ঘটেছে আমি জানি না। কিছু নেতৃত্বরা আমার বাড়িতে রাজনীতি ঢুকিয়ে দিয়ে, পরিবার ভেঙে দিয়েছে। সেই সকল নেতারা যেন সাবধানে থাকেন৷ ভাইয়ের উপর আক্রমণ পুরোপুরি ভিত্তিহীন৷” যদিও কাউন্সিলর রীনা দাস মারধরের অভিযোগ কাঁথি থানায় দায়ের করেছেন।

কাঁথি থানার পুলিশ গোটা বিষয়টি নজরে রেখেছে বলে জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যেই তমলুকে রামপদ দাসের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। সেই রিপোর্টের দিকেই নজর রয়েছে সকলের। মৃতের পরিবার ও আত্মীয় পরিজনদের জোরালো দাবি, রামপদর মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী, তাদের যেন কঠোর শাস্তি হয়।