পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি থেকে উত্তরপ্রদেশে কাজে গিয়ে মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় (Tragic Road Accident) প্রাণ হারিয়েছেন দুই পরিযায়ী শ্রমিক। মৃতদেহ দু’টি হলো ফরিদা বিবি (৩০) এবং তার বড় ছেলে জাহানসিম সাহা (১২)। এছাড়া পরিবারের আরও তিনজন সদস্য গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই দুর্ঘটনা কাঁথি ও আশেপাশের এলাকায় গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে।
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কাঁথির দেশপ্রাণ ব্লকের চলতি গ্রাম পঞ্চায়েতের খাগড়াবনি এলাকার জাহাঙ্গীর সাহা পরিবারের পাঁচ সদস্য উত্তরপ্রদেশে রাজমিস্ত্রির কাজে গিয়েছিলেন। সেখানে তারা একটি আত্মীয় বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য যাচ্ছিলেন। শনিবার দুপুরে ট্রেন থেকে নেমে অটো-রিকশায় করে আত্মীয় বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন তারা।
পুলিশ জানিয়েছে, সেই সময় একটি প্রাইভেট গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অটোর সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ করে। দুর্ঘটনায় অটোর মধ্যে থাকা ছয়জন যাত্রী গুরুতর আহত হন। আহতদের রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা ঘটনাস্থলেই মা এবং ছেলেকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত তিনজন পরিবারের সদস্য বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
পরিবারের আত্মীয়রা জানান, ফোনে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তারা কাঁথি থেকে উত্তরপ্রদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। “ক্ষেত্রের মানুষদের সহযোগিতা নিয়ে আমরা উত্তরপ্রদেশে পৌঁছেছি। কাজের জন্যই আমাদের পরিবার সেখানে গিয়েছিল। এই মর্মান্তিক ঘটনা সত্যিই হৃদয়বিদারক,” বলেছেন আত্মীয় সেখ হাবিব।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ ও তৃণমূল নেতা তরুন জানা পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “পরিবারের সদস্যদের প্রতি আমার সমবেদনা জানাচ্ছি। আমরা সবরকম সহযোগিতা করব, যাতে আহতরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন এবং মৃতদের শেষকৃত্যের সকল প্রক্রিয়ায় সাহায্য করা যায়।”
স্থানীয় এলাকায় এই দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রতিবেশীরা আহতদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সহায়তা করছে। পাশাপাশি পরিবারের অনেকে মৃতদেহ আনতে এবং আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে কাঁথি থেকে উত্তরের পথে রওনা দিয়েছেন।
উত্তরপ্রদেশে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা কাঁথি ও আশেপাশের গ্রামাঞ্চলে একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা দিচ্ছে। এলাকাবাসীরা সতর্ক থাকার পাশাপাশি পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বলছেন।
এই দুর্ঘটনা শুধু একটি পরিবার নয়, পুরো কমিউনিটির জন্যই গভীর শোক এবং উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং আহতদের চিকিৎসা ও মৃতদের পরিবারকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।