আজই মিলবে আবাসের টাকা

রাজ্য সরকারের (Government) পক্ষ থেকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি আজ (today) বাস্তবে পরিণত হতে চলেছে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলা আবাস যোজনার (Abas yojana) অর্থ প্রদানের (payment) কাজ…

Abasa yojana scheme

রাজ্য সরকারের (Government) পক্ষ থেকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি আজ (today) বাস্তবে পরিণত হতে চলেছে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলা আবাস যোজনার (Abas yojana) অর্থ প্রদানের (payment) কাজ সম্পূর্ণ হবে, এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের লক্ষ্যেই আজ, মঙ্গলবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে আবাস প্রকল্পের (Schemes) টাকা প্রদান। ১২ লক্ষ পরিবার, অর্থাৎ প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ যারা এই প্রকল্পের আওতায় আসছেন, তারা আজ থেকে সেই টাকা পাবেন।

এদিন, নবান্ন সভাঘরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি নিয়ে একটি বৈঠক করবেন। তবে তার আগে, ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা করবেন তিনি। এটি হবে অর্থ প্রদান শুরু হওয়ার আনুষ্ঠানিক সূচনা। প্রথম কিস্তির অর্থ সুবিধাভোগীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বা পোস্ট অফিসের অ্যাকাউন্টে সরাসরি পাঠানো হবে। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে ৪০ হাজার টাকা এবং শেষ কিস্তিতে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। সব মিলিয়ে প্রত্যেক পরিবার পিছু ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হবে।

   

এই প্রকল্পটি রাজ্য সরকারের জন্য একটি বড় ধরনের পদক্ষেপ, কারণ এটি শুধু একটি আবাস প্রকল্প নয়, বরং সামাজিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নমূলক একটি কর্মসূচি। যেখানে দরিদ্র জনগণের জন্য একটি পাকা বাড়ির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের উদ্যোগের ফলে তাদের আর খোলামেলা আকাশের নিচে বসবাস করতে হবে না। আজ থেকে তারা নিজেদের একটি বাড়ির মালিক হবেন, যা তাদের সামাজিক ও আর্থিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করবে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার এই প্রকল্পের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের প্রায় ১২ লক্ষ পরিবার, প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ উপকৃত হবেন।’’ এর পাশাপাশি তিনি এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের অঙ্গীকারের কথা পুনরায় মনে করিয়ে দিয়েছেন। রাজ্য সরকার এই প্রকল্পের মাধ্যমে নিজেরাই পুরো অর্থ দেবে, কেন্দ্রের কোন সাহায্য ছাড়াই।

এই সিদ্ধান্তটি কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি মোড়, কারণ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে আবাস যোজনার (Abas yojana) অর্থ নিয়ে একাধিক বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। রাজ্য সরকার অভিযোগ করেছিল যে, কেন্দ্র যথাযথভাবে যৌথ প্রকল্পের অর্থ দিচ্ছে না। আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই প্রকল্পের নাম ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায়’ প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার নিয়ে রাজ্য সরকারের অসন্তোষ। রাজ্যের শাসকদল তাদের প্রশ্ন তুলেছিল, ‘‘কেন শুধু প্রধানমন্ত্রী মোদির নাম ব্যবহার করা হচ্ছে? এই যৌথ প্রকল্পে কেন কেন্দ্রের অংশীদারিত্বের কোন স্বীকৃতি নেই?’’

এছাড়া, কেন্দ্রের দাবি ছিল যে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় (Abas yojana) ঘর তৈরি না হলে তারা বরাদ্দ অর্থ দেবেন না। দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই টানাপোড়েনের পর রাজ্য সরকার ‘বাংলার বাড়ি’ নামে আলাদা প্রকল্প শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ থেকে বাংলা আবাস যোজনার টাকা সরাসরি সুবিধাভোগীদের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।

এই প্রকল্পের প্রথম কিস্তির অর্থ আগামী তিন থেকে চারদিনের মধ্যে সুবিধাভোগীদের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাবে। রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, এই টাকা সরাসরি সুবিধাভোগীদের ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়া হবে, যাতে টাকা সঠিকভাবে এবং দ্রুততার সঙ্গে পৌঁছে যায়। এতে এই পরিবারগুলির বাড়ি নির্মাণের কাজ দ্রুত শুরু হবে। প্রথম কিস্তির পর পর্যায়ক্রমে পরবর্তী কিস্তির টাকা পাওয়া যাবে, এবং পরিশেষে সমস্ত টাকা ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পরিপূর্ণ হবে।

এই প্রকল্পের ফলে রাজ্য সরকারের কাছে রয়েছে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাব। রাজ্য সরকার দীর্ঘদিন ধরে এর ওপর কাজ করছে, এবং এর মাধ্যমে রাজ্য সরকার স্থানীয় অর্থনীতিকেও শক্তিশালী করতে পারবে। ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দিয়ে সুবিধাভোগী পরিবার তাদের বাড়ির জন্য নির্মাণ শুরু করবে, যা স্থানীয় নির্মাণ শিল্পকে চাঙা করবে। তাছাড়া, এই অর্থ প্রয়োগ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সরবরাহকারী এবং নির্মাণ শ্রমিকদের জন্যও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

এই প্রকল্পটি শুধু পাকা ছাদ পাওয়া নয়, বরং রাজ্যের দরিদ্র জনগণের জন্য একটি নতুন আশার আলো। প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরির সুযোগ করে দেবে। সেইসঙ্গে, এই টাকার মাধ্যমে তাদের আরও উন্নত জীবন যাপনের সুযোগ হবে। এর ফলে তারা শুধু একটি বাড়ির মালিক হবেন না, বরং তাদের সামাজিক সম্মানও বৃদ্ধি পাবে।

রাজ্যের এই ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই গণমানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। প্রায় ১২ লক্ষ পরিবার এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছেন, এবং তাদের প্রত্যাশা এখন পূর্ণ হতে চলেছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে যে, এই প্রকল্পের আওতায় বাড়ি নির্মাণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পূর্ণ সহায়তা দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই উদ্যোগের মাধ্যমে রাজ্যের জনগণের জন্য একটি বৃহৎ সামাজিক কল্যাণ কর্মসূচি চালু করেছেন, যা নিঃসন্দেহে বাংলার উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

অতএব, আজ থেকে শুরু হওয়া বাংলা আবাস যোজনার (Abas yojana) অর্থ প্রদান প্রকল্পটি শুধুমাত্র একটি অর্থনৈতিক উদ্যোগই নয়, বরং এটি রাজ্যের জনগণের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সূচনা।