রাজ্যে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে একের পর এক কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সফরকে কেন্দ্র করে বাংলার রাজনীতি কার্যত তপ্ত। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে রাজনৈতিক মহলে তুঙ্গে উঠেছে বিতর্ক। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে প্রধানমন্ত্রীকে ‘রাজনৈতিক পর্যটক’ (Political Tourist) আখ্যা দিয়ে সরাসরি পাঁচটি প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়েছে। দলের দাবি, বাংলায় এসে শুধু নাটক সাজিয়ে ভোটের রাজনীতি করবেন না, বরং বাংলার মানুষ যেসব জ্বলন্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন, সেগুলির জবাব দিতে হবে।
প্রশ্ন ১: সংবিধান সংশোধন ও ইডি’র ভূমিকা
তৃণমূলের অভিযোগ, কেন্দ্র এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে (ED) রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে। পরিসংখ্যান তুলে ধরে দল জানিয়েছে, গত ১০ বছরে ইডি ৫৮৯২টি মামলার মধ্যে মাত্র ৮টিতে দোষী সাব্যস্ত করেছে। অর্থাৎ কনভিকশন রেট মাত্র ০.১৩ শতাংশ। অন্যদিকে বিজেপি নেতাদের ক্ষেত্রে ভিন্ন ছবি দেখা যায়। তৃণমূলের দাবি, বিরোধী শিবির থেকে বিজেপিতে যোগ দিতেই অধিকাংশ নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে বিজেপির ২৪০ জন সাংসদের মধ্যে ৯৪ জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে ৬৩ জন গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত। আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য হিসেবে বলা হয়েছে, মোদি মন্ত্রিসভার অন্তত ২৮ জন মন্ত্রীর বিরুদ্ধেও গুরুতর মামলা রয়েছে। তৃণমূলের প্রশ্ন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে সংবিধানের ১৩০তম সংশোধনী বিল এনে কেন শুধু বিরোধীদের টার্গেট করা হচ্ছে?
প্রশ্ন ২: ভোটার তালিকার ত্রুটি নিয়ে আক্রমণ
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ভোটার তালিকা নিয়েও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে তৃণমূল। দলের বক্তব্য, যে ভোটার তালিকার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে, তাতে যদি বড় ত্রুটি থাকে, তবে সেই নির্বাচনের বৈধতাই প্রশ্নের মুখে। তৃণমূলের দাবি, ভোটার তালিকা ‘ত্রুটিপূর্ণ’ হলে মোদির প্রধানমন্ত্রী থাকার নৈতিক অধিকার নেই। সেইসঙ্গে বর্তমান লোকসভা ভেঙে দেওয়ারও দাবি জানিয়েছে রাজ্যের শাসক দল।
প্রশ্ন ৩: বাংলা ভাষার অপমান
রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করেছে দিল্লি পুলিশের একটি মন্তব্য ও বিজেপি নেতাদের বক্তব্য। অভিযোগ, দিল্লি পুলিশ বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ আখ্যা দিয়েছে। অন্যদিকে বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য প্রকাশ্যে বলেছেন, ‘বাংলা নামে কোনও ভাষাই নেই।’ তৃণমূলের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী কি এই মন্তব্যকে সমর্থন করেন? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তবে কি বিজেপি দেশবিরোধী নয়? দলের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে, জাতীয় সংগীত ও জাতীয় গান—দুটিই বাংলায় লেখা।
প্রশ্ন ৪: বঙ্গভাষীদের উপর হেনস্থা
তৃণমূলের চতুর্থ প্রশ্ন, কেন্দ্রের ‘বিকশিত ভারত’ স্লোগানে বারবার বলা হয় ‘বিকশিত বাংলা ছাড়া বিকশিত ভারত সম্ভব নয়’। কিন্তু বাস্তবে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বারবার বাংলাভাষীদের হেনস্থা করা হচ্ছে। কোথাও তাদের বাংলাদেশি বলে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, কোথাও বা প্রান্তিক অবস্থায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এই বৈপরীত্যের জবাব চাইছে শাসক দল।
প্রশ্ন ৫: কেন্দ্রের বকেয়া টাকা
সবশেষে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল, বাংলার আর্থিক বঞ্চনা নিয়ে। দলের অভিযোগ, কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের বকেয়া এখন ১ লক্ষ ৯৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। মনরেগা, আবাস যোজনা, গ্রাম সড়ক যোজনা, জল জীবন মিশন—প্রতিটি ক্ষেত্রেই টাকা আটকে রাখা হয়েছে। তৃণমূলের দাবি, এটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল।
প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগেই রাজ্যের রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বেড়ে গেল তৃণমূলের এই পাঁচ প্রশ্ন ঘিরে। দল স্পষ্ট করেছে, শুধু জনসভা করে নাটক সাজালে চলবে না, বাংলার মানুষ যেসব বাস্তব সমস্যার মুখোমুখি, তার জবাবও দিতে হবে প্রধানমন্ত্রীর। এখন নজর থাকবে, বাংলায় এসে এই প্রশ্নগুলির উত্তর দিতে প্রধানমন্ত্রী কতটা প্রস্তুত হন।