কলকাতা, ১৮ সেপ্টেম্বর: ভিন রাজ্যে আক্রান্ত বাঙালিদের (Migrant Workers) প্রশ্নে তৃণমূল কংগ্রেসের অবস্থান নিয়ে তীব্র সমালোচনায় মুখর হল বাংলা ও বাঙালির স্বার্থ রক্ষার দাবিদার সংগঠন ‘বাংলাপক্ষ’। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক গর্গ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেছেন, তৃণমূল কংগ্রেস আসলে বহিরাগত তোষণ করে বাংলার শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ বিসর্জন দিচ্ছে। তার ফলে রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা কমার বদলে আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে একটি ফেসবুক লাইভে বাংলাপক্ষের সাধারণ সম্পাদক গর্গ চট্টোপাধ্যায় এই ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণ শানান। তাঁর দাবি, রাজ্যের প্রশাসনিক স্তর থেকে ঠিকাদারদের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে, যাতে ভিন রাজ্য থেকে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজ দেওয়া হয়। এই ধরনের পদক্ষেপ রাজ্যের কর্মরত স্থানীয় শ্রমিকদের বিপদে ফেলবে বলেই দাবি করেন তিনি।
গর্গ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “যাঁরা এতদিন ধরে বাংলার শিল্পাঞ্চলে পরিশ্রম করছেন, তাঁদের কাজের জায়গা এখন বিপন্ন। কারণ মুখ্যমন্ত্রী যাঁদের ফিরিয়ে আনলেন, তাঁদের কাজ দিতে গিয়ে তৃণমূল সরকার আসলে স্থানীয় শ্রমিকদের ছাঁটাইয়ের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এর ফলে একদিকে যেমন স্থানীয় শ্রমজীবীরা কাজ হারাবেন, তেমনই অন্যদিকে কাজের খোঁজে তাঁদেরও ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে হবে। পরিণতিতে রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিকের প্রবাহ কমার বদলে আরও বাড়বে।”
বাংলাপক্ষের প্রশ্ন, বাংলার শিল্পাঞ্চলগুলিতে কেন বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক বা স্থানীয় শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে না? গর্গবাবুর অভিযোগ, এসব ক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেসের ‘বহিরাগত তোষণ নীতি’ কাজ করছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এই রাজ্যের সম্পদ, এই রাজ্যের প্রকল্প, অথচ কাজ পাচ্ছেন বাইরে থেকে আসা লোকজন— এটা কি বাংলার প্রতি অবিচার নয়?”
এই প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না এলেও, বাংলাপক্ষের এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে যথেষ্ট চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। তৃণমূল কংগ্রেস সাধারণত বাংলা ও বাঙালির স্বার্থ রক্ষার দাবিতে নিজেকে সবার আগে রাখলেও, এবার নিজেরাই ‘বাঙালির বঞ্চনার’ অভিযোগের মুখে পড়েছে।
বিগত কয়েক সপ্তাহে বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং মহারাষ্ট্রে একাধিক বাঙালি শ্রমিকদের উপর হওয়া হামলার ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভিন রাজ্যে কর্মরত বাঙালি শ্রমিকদের বাংলায় ফিরে আসার আবেদন জানান। সেই সুরাহার খোঁজে এই পদক্ষেপ হলেও, বাংলাপক্ষের মতে, বাস্তবিক প্রয়োগে রাজ্যের সাধারণ মানুষের স্বার্থ উপেক্ষিত হচ্ছে।
রাজনীতির ময়দানে এই বিতর্ক কতদূর গড়ায়, তা সময় বলবে। তবে বাংলাপক্ষের এই অভিযোগ নিঃসন্দেহে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য এক নতুন রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ।