কোচবিহারের উত্তম কুমার (Uttam Kumar) ব্রজবাসীকে এনআরসি নোটিস পাঠানোর পরেই উত্তাল হয়েছিল বাংলার রাজনৈতিক মহল। উত্তমকুমার ব্রজবাসী কোচবিহারের প্রায় ৫০ বছরের বাসিন্দা। তাকে অসম থেকে এই নোটিস পাঠানোয় সরব হয়েছিলেন তৃণমূলের নবীন থেকে প্রবীণ সমস্ত নেত্রীবৃন্দ। দলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ বলেছিলেন বাংলা বিরোধী বিজেপি পিছনের দরজা দিয়ে চোরের মত বাংলায় ঢুকতে চাইছে।
বাংলা ও বাঙালি বিদ্দ্বেষের প্রতিবাদে গত ১৬ তারিখ মমতা অভিষেকের নেতৃত্বে মিছিলে অংশ নিয়েছিল তৃণমূলের তাবড় নেতারা। আগামীকাল ২১ এ জুলাই তৃণমূল শহীদ দিবস। মঞ্চ প্রস্তুত, হয়তো মুখ্যমন্ত্রী আজ মঞ্চ পরিদর্শনে যাবেন। তার সাথে থাকছে নয়া চমক। উত্তম কুমার ব্রজবাসীকে আগামীকালের মঞ্চে হাজির করে বিজেপির বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি দিতে চায় তৃণমূল।
উত্তম কুমার ব্রজবাসী, কোচবিহারের দিনহাটার সদিয়ালের কুঠি গ্রামের একজন ৫০ বছর বয়সী রাজবংশী সম্প্রদায়ের সদস্য, যিনি জন্ম থেকেই বাংলায় বসবাস করে আসছেন। তাঁর পূর্বপুরুষরা পাঁচ প্রজন্ম ধরে এই অঞ্চলে বসবাস করছেন। তবুও, অসমের কামরূপ জেলার বিদেশী নাগরিক নির্ধারণ ট্রাইব্যুনাল তাঁকে এনআরসি নোটিস পাঠিয়ে ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
নোটিসে দাবি করা হয়েছে যে, তিনি ১৯৬৬ থেকে ১৯৭১ সালের মধ্যে অসমে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছেন, যদিও উত্তম কুমার দাবি করেছেন যে তিনি কখনোই অসমে যাননি। তিনি ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড এবং তাঁর পিতার ১৯৬৬ সালের ভোটার তালিকার প্রমাণ সহ সমস্ত বৈধ নথি পেশ করেছেন। এই ঘটনা রাজ্যের রাজনীতিতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
তৃণমূল কংগ্রেস এই নোটিসকে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের ‘বাংলা-বিরোধী’ নীতির অংশ হিসেবে দেখছে। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার অভিযোগ করেছেন যে, বিজেপি বাংলায় এনআরসি ও নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন (সিএএ) এর মাধ্যমে বাঙালি পরিচয় ও অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স-এ পোস্ট করে বলেছেন, “এটি গণতন্ত্রের উপর একটি পরিকল্পিত আক্রমণ। অসমের বিজেপি সরকার বাংলায় এনআরসি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, যেখানে তাদের কোনো এখতিয়ার নেই।” তৃণমূলের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে বলা হয়েছে, “উত্তম কুমার ব্রজবাসীকে অপরাধীর মতো তাড়া করা হচ্ছে। তিনি সমস্ত বৈধ নথি পেশ করেছেন, তবুও তাঁকে ১৯৬৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ভোটার তালিকার প্রমাণ দিতে বলা হচ্ছে।”
২১ জুলাইয়ের শহীদ দিবসে উত্তম কুমারের কলকাতায় উপস্থিতি তৃণমূলের জন্য একটি প্রতীকী পদক্ষেপ। এই দিনটি তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ ১৯৯৩ সালের এই দিনে পশ্চিমবঙ্গ যুব কংগ্রেসের ১৩ জন কর্মী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। তৃণমূল এই দিনটিকে শহীদ দিবস হিসেবে পালন করে।
উত্তম কুমার কে এই মঞ্চে যে এসে তৃণমূল এই বার্তাকে আরও জোরালো করে তুলতে চায় যে, বাংলার মানুষ বিজেপির ‘বিভাজনকারী’ নীতির কাছে মাথা নত করবে না। তৃণমূলের এক্স পোস্টে বলা হয়েছে, “উত্তম কুমার ব্রজবাসীর আগমন বিজেপিকে একটি স্পষ্ট বার্তা—বাংলা কখনো মাথা নত করবে না।
তৃণমূলের পোস্টে আরও বলা আছে ,”আপনারা নোটিস পাঠাতে পারেন, কিন্তু আমাদের নাম মুছে ফেলতে পারবেন না, আমাদের ঘর ছিনিয়ে নিতে পারবেন না, আমাদের ইতিহাস পুনর্লিখন করতে পারবেন না।” কার্যত এই তৃণমূলের এই পদক্ষেপ বিজেপির বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক কৌশল মাত্র সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
তৃণমূলের দ্বন্দ্ব, অখিল গিরি বনাম উত্তম বারিক
দলের নেতারা দাবি করেছেন যে, বিজেপি বাংলার মানুষকে ভয় দেখাতে এবং তাদের পরিচয় মুছে ফেলতে চায়। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেছেন, “উত্তম কুমার একজন ভারতীয় নাগরিক এবং রাজবংশী সম্প্রদায়ের সদস্য। অসম পুলিশের তাঁকে নোটিস পাঠানোর কোনো অধিকার নেই।”
২১ এ জুলাইয়ের মঞ্চে উত্তম কুমারের উপস্থিতি কে কেন্দ্র করে চমক থাকবেই এবং তার সঙ্গে আর কি নতুন চমক যোগ হয় তা কালকের সভাতেই পরিষ্কার হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল উত্তম কুমারকে হাতিয়ার করে তৃণমূলের রাজনৈতিক চমক আসন্ন নির্বাচনে কাজে আসবে কিনা তা বলবে মানুষের রায়।