কল্যাণকে কি ছেঁটেই ফেলল তৃণমূল? ইস্তফার নেপথ্য কারণ কী?

কলকাতা: তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরমহলে বহুদিনের চর্চিত কলহ ফের লাইমলাইটে৷ কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র ও শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তিক্ত সম্পর্ক নতুন নয়। কিন্তু এই প্রথম,…

কল্যাণকে কি ছেঁটেই ফেলল তৃণমূল? ইস্তফার নেপথ্য কারণ কী?

কলকাতা: তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরমহলে বহুদিনের চর্চিত কলহ ফের লাইমলাইটে৷ কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র ও শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তিক্ত সম্পর্ক নতুন নয়। কিন্তু এই প্রথম, সেই বিবাদ দলের সাংগঠনিক ভারসাম্যকে নাড়া দিল (TMC sidelined Kalyan)৷

রাজনীতির নবীনরাও জানেন, মহুয়া ও কল্যাণের সম্পর্কের মধ্যে দীঘদিন ধরেই চাপা আগুন জ্বলছে। বারবার প্রকাশ্যে মহুয়ার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন শ্রীরামপুরের সাংসদ। কখনও ব্যক্তিগত, কখনও সাংসদ হিসেবে তাঁর কাজ নিয়ে প্রকাশ্যেই ভর্ৎসনা করেছেন। কিছু দিন আগেই তিনি বলেছিলেন, “আমি না থাকলে দেখুন, মহুয়া কী করে সংসদে কাজ করে।” একইসঙ্গে SSC ও OBC সংরক্ষণ মামলা নিয়ে তাঁর সক্রিয় ভূমিকার কথাও মনে করিয়ে দেন তিনি।

   

অন্যদিকে একা মহুয়া নন, তৃণমূলের অনেক সাংসদই সংসদে মুখ খোলার সুযোগ পান না বলে অভিযোগ তুলেছেন কল্যাণের বিরুদ্ধে। দলীয় বৈঠকে নয়, ঘনিষ্ঠ মহলে সেই অসন্তোষের কথা প্রকাশ পেয়েছে বহুবার।

ইস্তফা ও ইঙ্গিত: আবেগ, না অভিমান?

সোমবার দলের লোকসভা চিফ হুইপ পদ থেকে ইস্তফা দেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। স্পষ্টভাবে বলেন, “মমতাদি অভিযোগ করেছেন লোকসভায় সমন্বয় ঠিকঠাক হচ্ছে না, তাই আঙুল তো আমার দিকেই উঠছে। আমি ছেড়ে দিলাম।”

তবে এখানেই থামেননি। সংযোজন করেন, “যাঁরা আমাকে গালাগাল দেয়, আমি কি সহ্য করব? দল আমাকেই দোষারোপ করছে। আমি দলকে জিতিয়েছি৷ দরকার পড়লে রাজনীতি ছেড়ে দেব।” সেই বক্তব্যের পরই প্রশ্ন উঠেছিল, কল্যাণ কি এক ধাক্কায় একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেললেন?

কিন্তু রাতেই তাঁর অবস্থানে কিছুটা পালাবদল। এক্স হ্যান্ডেলে একটি পুরনো লোকসভা ভিডিও পোস্ট করে তিনি দেখান, কীভাবে ২০২৩ সালে মহুয়া মৈত্রের পাশে দাঁড়িয়ে সংসদে সরব হয়েছিলেন তিনি। বার্তাটি পরিষ্কার, যাঁকে একদিন রাজনৈতিকভাবে আগলে রেখেছিলেন, তিনিই এখন কল্যাণের কাছে ‘অকৃতজ্ঞ’।

মমতার কঠিন বার্তা, দলে বদলের ইঙ্গিত

মঙ্গলবারই কল্যাণের ইস্তফা গৃহীত হয়। তাঁর পরিবর্তে লোকসভার নতুন চিফ হুইপ হন বসিরহাটের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার৷ যিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। রাজনৈতিক মহলে এই সিদ্ধান্তকে একপ্রকার ‘ক্লিয়ার সিগন্যাল’ বলেই ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।

Advertisements

কল্যাণ নিজেই জানিয়েছেন, কাকলিকে অনুরোধ করেছেন, সংসদে যেন তাঁর জন্য পিছনের সারির একটি আসন নির্দিষ্ট করা হয়। সঙ্গে অভিমানী সুরে বলেছেন, “আমার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। এবার দিদিই দল চালান।”

বিতর্কে মোড়া রাজনীতিকের মুখ

কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবন বরাবরই বিতর্কে মোড়া। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধর সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য ঘিরে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি। পাল্টা মহুয়া মৈত্র বলেছিলেন, “শু*য়োরের বাচ্চাদের সঙ্গে কখনও লড়াই করতে নেই। সে চাইবে লড়াই করতে। কিন্তু আপনি করলে নোংরাটা আপনার গায়েই লাগবে।”

যখন প্রশংসা শিবিরের বাইরে

ঠিক এমন এক সময়ে যখন তৃণমূলের ভিতরেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন কল্যাণ, তখনই শোনা গেল বিরোধী শিবিরের কণ্ঠে তাঁর প্রশংসা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বললেন, “কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষিত মানুষ। ২০১১-র আগে সিপিএমের বিরুদ্ধে তৃণমূলের লড়াইয়ে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।”

‘রাজনীতি ছেড়ে দেব’, আবার সেই চেনা সুর

বাংলা রাজনীতিতে ‘রাজনীতি ছেড়ে দেব’ কথাটি নতুন কিছু নয়। একাধিক নেতা এই কথা বললেও, বাস্তবে তাঁরা ফিরে এসেছেন নিজের দলে বা অন্য দলে। কল্যাণও বললেন। এবারও কি তবে সেটাই হবে?