পঞ্চায়েত অফিসে তৃণমূলের প্রচার, গুপ্তিপাড়ায় সরব বিরোধী বিজেপি

হুগলির (Hooghly) গুপ্তিপাড়া দুই নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে এক অভূতপূর্ব ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত এই পঞ্চায়েত অফিসে দলীয় প্রচারের অভিযোগ উঠেছে,…

TMC Promotional Leaflets in Hooghly Panchayat Office Spark Political Row with BJP

হুগলির (Hooghly) গুপ্তিপাড়া দুই নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে এক অভূতপূর্ব ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত এই পঞ্চায়েত অফিসে দলীয় প্রচারের অভিযোগ উঠেছে, যা নিয়ে বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। পঞ্চায়েত অফিসের টেবিলে তৃণমূলের প্রতীক সম্বলিত লিফলেট ছড়িয়ে থাকায় এই বিতর্কের সূত্রপাত। এই ঘটনা গুপ্তিপাড়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তুলেছে।

কয়েকদিন আগে গুপ্তিপাড়া দুই নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে হাজার হাজার লিফলেট এসে পৌঁছায়। এই লিফলেটগুলিতে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের বিবরণ রয়েছে। এতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবির পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় প্রতীকও মুদ্রিত রয়েছে। এই লিফলেটগুলি পঞ্চায়েত অফিসের বিভিন্ন টেবিলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা গেছে। এই ঘটনা বিরোধী দল বিজেপির নজরে আসতেই তারা তীব্র আপত্তি জানিয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস একটি সাংবিধানিক সংস্থা, যা কোনও রাজনৈতিক দলের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। তৃণমূল কংগ্রেস এই অফিসকে তাদের দলীয় প্রচারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে বলে তারা দাবি করেছে।

   

গুপ্তিপাড়া দুই নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরোধী নেতা তথা বিজেপি সদস্য কাশীনাথ কোলে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, “গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস একটি সাংবিধানিক সংস্থা। এটি কোনও রাজনৈতিক দলের কার্যালয় নয়। তৃণমূল কংগ্রেস এই অফিসকে তাদের পার্টি অফিসে পরিণত করেছে। রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের প্রচার হতে পারে, তাতে কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু সেই প্রচারে তৃণমূলের দলীয় প্রতীক ব্যবহার করা সম্পূর্ণ অনৈতিক এবং অগ্রহণযোগ্য।” কাশীনাথ কোলে এই বিষয়ে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের কাজ সাংবিধানিক নিয়মের লঙ্ঘন। আমরা এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও ভাবছি।”

বিজেপির এই প্রতিবাদের পর মঙ্গলবার সকালে পঞ্চায়েত অফিসের বেশ কয়েকটি টেবিল থেকে লিফলেটগুলি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে, এই ঘটনা স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিজেপি নেতারা দাবি করেছেন, এই ঘটনা তৃণমূলের রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রমাণ। তারা এই বিষয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দায়ের করার পরিকল্পনা করছেন।

এই বিতর্কের বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। স্থানীয় তৃণমূল নেতারা এই বিষয়ে মুখ খুলতে অস্বীকার করেছেন। তবে, পঞ্চায়েত অফিস থেকে লিফলেট সরিয়ে ফেলার ঘটনা এই বিতর্কের তীব্রতা বাড়িয়েছে। অনেকে মনে করছেন, তৃণমূল এই ঘটনাকে গুরুত্ব না দিয়ে বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে, বিজেপির তীব্র প্রতিবাদের মুখে তৃণমূলের এই নীরবতা আরও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস একটি সাংবিধানিক সংস্থা, যার প্রধান কাজ হল গ্রামীণ উন্নয়ন এবং স্থানীয় জনগণের সুবিধার জন্য কাজ করা। এই অফিসগুলি সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন, জনকল্যাণমূলক কাজ এবং স্থানীয় সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী, এই অফিসগুলি রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ থাকবে। কোনও রাজনৈতিক দলের প্রচার বা দলীয় কার্যকলাপের জন্য এই অফিস ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। গুপ্তিপাড়ার ঘটনা এই নিয়মের লঙ্ঘন বলে বিজেপি মনে করে।

Advertisements

গুপ্তিপাড়ায় তৃণমূল কংগ্রেসের শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিজেপি এই অঞ্চলে তাদের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে। বিশেষ করে, স্থানীয় নির্বাচনগুলিতে বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে। এই ঘটনা এই দুই দলের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিজেপি এই ঘটনাকে তৃণমূলের ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে প্রচার করছে, যা স্থানীয় জনগণের মধ্যে তাদের সমর্থন বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

গুপ্তিপাড়ার স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে এই ঘটনা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ মনে করেন, রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের প্রচারে কোনও সমস্যা নেই। তবে, পঞ্চায়েত অফিসে দলীয় প্রতীক সম্বলিত লিফলেট রাখা অনুচিত। অন্যদিকে, কিছু বাসিন্দা এই ঘটনাকে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার অংশ হিসেবে দেখছেন। একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “পঞ্চায়েত অফিসে এই ধরনের কাজ হওয়া উচিত নয়। এটি জনগণের সেবার জায়গা, রাজনৈতিক প্রচারের নয়।”

এই ঘটনা গুপ্তিপাড়ায় রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। বিজেপি ইতিমধ্যেই আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। তারা জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দায়ের করার পরিকল্পনা করছে। এছাড়াও, এই ঘটনা নিয়ে স্থানীয় জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে বিজেপি প্রচার শুরু করতে পারে। তৃণমূলের নীরবতা এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। তবে, লিফলেট সরিয়ে ফেলার ঘটনা ইঙ্গিত দেয় যে তৃণমূল এই বিতর্ককে আরও বাড়তে দিতে চায় না।

গুপ্তিপাড়া দুই নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রচার সংক্রান্ত এই ঘটনা স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। পঞ্চায়েত অফিসের সাংবিধানিক নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিজেপির তীব্র প্রতিবাদ এবং আন্দোলনের হুঁশিয়ারি এই ঘটনাকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। ভবিষ্যতে এই ঘটনার প্রভাব স্থানীয় রাজনীতিতে কীভাবে পড়বে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে, এই ঘটনা গ্রামীণ প্রশাসন এবং রাজনৈতিক প্রভাবের মধ্যে সীমারেখা বজায় রাখার গুরুত্ব তুলে ধরেছে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News