পুরুলিয়া: আর এক সপ্তাহ। তারপরেই ২১ জুলাইয়ের শহিদ দিবসের সমাবেশ কলকাতার ধর্মতলায়। প্রতিবছরের মতো এবারও তৃণমূল কংগ্রেস সেই উপলক্ষে রাজ্যজুড়ে শুরু করেছে জোরদার প্রচার। একাধিক জেলায় লাগানো হয়েছে ব্যানার, পোস্টার, হোর্ডিং। কিন্তু সেই প্রচারের মাঝেই পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে ঘটে গেল এক চাঞ্চল্যকর ভুল, যা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর (TMC Poster Controversy)।
স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা রঘুনাথপুর শহরে ২১ জুলাইয়ের প্রচারে যে ব্যানার লাগিয়েছেন, তাতে জ্বলজ্বল করে লেখা হয়েছে প্রয়াত তৃণমূল নেতা ও প্রাক্তন টাউন সভাপতি সুধীর বাউরির নাম। যিনি আর বেঁচে নেই, সেই নেতার নাম দিয়ে পোস্টার প্রকাশ্যে আসতেই প্রশ্ন ওঠে শাসক দলের গাফিলতি নিয়ে। আর সেই ভুলকে কেন্দ্র করেই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক।
বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি। রঘুনাথপুর টাউন বিজেপি সভাপতি শান্তনু চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, “স্বর্গীয় মানুষকে টেনে আনার দরকার নেই। যাঁরা জীবিত, ময়দানে রয়েছেন, তাঁরাই এসে আমাদের সঙ্গে লড়ুক। ওরা বুঝে গেছে, মাটিতে ওদের আর পা রাখার জায়গা নেই। তাই যা পারছে তাই করছে।”
বিতর্কের জল গড়াতে দেখে শেষপর্যন্ত নিজেদের ভুল স্বীকার করে নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তারা দ্রুত ব্যানারে প্রয়াত সুধীর বাউরির নাম ঢেকে দেয়। দলের রঘুনাথপুর টাউনের সভাপতি বিষ্ণু মাহাত বলেন, “সুধীরবাবু আমাদের মধ্যে নেই। আবেগের বশে যুব তৃণমূলের জেনারেল সেক্রেটারি সত্যজিত্ বাউড়ির ভুল হয়েছিল। বিষয়টি জানার পর আমি তাঁকে স্পষ্ট বলেছি, এটা ভুল। দুঃখপ্রকাশ করতে হবে। উনি দুঃখও প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি মিটে গিয়েছে।”
তবে শুধুই ভুল স্বীকার নয়, প্রয়াত নেতার প্রতি সম্মান জানাতে নতুন কমিটি গঠনের কথাও জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “আমরা সুধীর বাউরি স্মৃতিরক্ষা কমিটি গঠন করব। সেই কমিটির সেক্রেটারি হবেন সত্যজিত্ বাউড়ি এবং আমি থাকব উপদেষ্টা হিসেবে।”
এই ঘটনায় দলের অন্দরেই একাংশ মনে করছেন, শহিদ দিবসকে সামনে রেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়াই এই ভুলের প্রধান কারণ। তবে বিরোধীরা বলছে, এটা গাফিলতির পরিণাম এবং দলের সাংগঠনিক অক্ষমতা স্পষ্ট করছে।
তবে ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। ধর্মতলায় সমাবেশে লাখো কর্মী-সমর্থকের জমায়েত নিশ্চিত করতে রাজ্যজুড়ে দফায় দফায় মিটিং, প্রচার, রোড শো চলছে। এই পরিস্থিতিতে একটি সামান্য পোস্টার ভুল নিয়ে যে রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা কতদূর প্রভাব ফেলবে দলীয় সমাবেশে—তা নিয়ে নানা মহলে চলছে আলোচনা।
তৃণমূল বলছে, এটা নিছকই এক আবেগঘন ভুল, আর বিজেপি বলছে—এটাই তৃণমূলের সাংগঠনিক চিত্র। ২১ জুলাইয়ের আগে এই ধরনের ঘটনা আরও কিছু চমক দিতে পারে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।