সংসদ নিয়ে মিথ্যাচার দেবের, দাবি বিজেপি কর্মীর

পশ্চিমবঙ্গের ঘাটাল অঞ্চলে বারবার বন্যার উপদ্রব সামলাতে গত দশক ধরে আলোচিত ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক তীব্র হয়ে উঠেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ দেব অধিকারী…

TMC MP Dev Faces BJP’s ‘Lies’ Charge Over Ghatal Master Plan Claims

পশ্চিমবঙ্গের ঘাটাল অঞ্চলে বারবার বন্যার উপদ্রব সামলাতে গত দশক ধরে আলোচিত ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক তীব্র হয়ে উঠেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ দেব অধিকারী (দেব) রবিবার এক্স পোস্টে দাবি করেছেন যে, তিনি গত ১০ বছর ধরে লোকসভার প্রতিটি অধিবেশনে এই মাস্টার প্ল্যানের (Ghatal Master Plan) পক্ষে প্রশ্ন তোলেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতার কথা তুলে ধরেন। তবে, এই দাবির উপর প্রশ্ন তুলে বিজেপি কর্মী অভিজিৎ বসাক তথ্যভিত্তিক প্রমাণ দেখিয়ে অভিযোগ করেছেন যে, দেবের এই দাবি মিথ্যা এবং তিনি সংসদে যথেষ্ট উপস্থিতি না থাকায় ঘাটালের জনগণের কল্যাণে কাজে ব্যর্থ হয়েছেন।

দেবের দাবি: মাস্টার প্ল্যানের জন্য দীর্ঘ লড়াই
দেব অধিকারী তাদের এক্স পোস্টে উল্লেখ করেছেন, “বিগত ১০ বছর ধরে লোকসভার সকল অধিবেশনে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান এর সপক্ষে সওয়াল করে এসেছি। অনেক চেষ্টার পরও কেন্দ্রীয় সরকার তাতে সাড়া দেয়নি। ২০২৪ সালে রাজ্য সরকার এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় এবং ৫০০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করে। ফেব্রুয়ারি ২০২৫ থেকে কাজ শুরু হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, এই মাস্টার প্ল্যানে ৭৮ কিলোমিটার ও ৫২ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং, বাঁধ নির্মাণ, সেতু, খাল কাটা, খালের সংস্কার, কৃত্রিম নদী তৈরি এবং জমি অধিগ্রহণের মতো বিস্তৃত কাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যার সময়সীমা কমপক্ষে ৪-৫ বছর।

   

দেব আরও জানিয়েছেন যে, ঘাটালে বন্যার পর জনগণের রাগ স্বাভাবিকভাবে জনপ্রতিনিধিদের উপর পড়ছে। তবে, তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে, দুর্যোগের এই সময়ে সরকার ও প্রশাসন সবসময় জনগণের পাশে রয়েছে। তবে, এই বক্তব্যের পর তাঁর উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যা রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে।

বিজেপির প্রতিবাদ: ১২% উপস্থিতি, কীভাবে সম্ভব?
অভিজিৎ বসাক, একজন বিজেপি কর্মী, দেবের দাবির বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। তিনি লিখেছেন, “ঘাটালের সাংসদ দেব অধিকারী লিখেছেন যে লোকসভার ‘সকল অধিবেশনে’ তিনি ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অথচ তথ্য বলছে যে ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে তিনি মাত্র ১২% দিন উপস্থিত ছিলেন। ১২% উপস্থিতির হার নিয়ে ‘সকল অধিবেশনে’ প্রশ্ন করা তো বাস্তবে সম্ভব নয়।” তিনি একটি চিত্রও শেয়ার করেছেন, যেখানে দেবের সংসদীয় উপস্থিতি ১২% দেখানো হয়েছে, যা জাতীয় গড় (৬৬%) এবং রাজ্য গড়ের তুলনায় অত্যন্ত কম।

এই তথ্যের ভিত্তিতে অভিজিৎ অভিযোগ করেছেন যে, দেব সংসদে যথেষ্ট উপস্থিতি না থাকায় ঘাটালের জনগণের সমস্যা তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, এই কম উপস্থিতির কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে যথাযথ মনোযোগ পাওয়া যায়নি, যা ঘাটালের বন্যা সমস্যার সমাধানে বাধা সৃষ্টি করেছে।

ঘাটালের বন্যা: মাস্টার প্ল্যান কতটা কার্যকর?
ঘাটাল অঞ্চল বারবার বন্যার উপদ্রবের শিকার হয়ে আসছে, বিশেষ করে দামোদর উপত্যকা নিগম (ডিভিসি) এর জল নিষ্কাশন নীতির কারণে। সাম্প্রতিক সময়ে ডিভিসি ৬০,০০০ কিউসেকের বদলে ৭১,০০০ কিউসেক জল নিষ্কাশন করেছে, যা আইনি চুক্তির লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই বন্যায় দুজনের মৃত্যু ঘটেছে এবং স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়েছে।

Advertisements

ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান এই সমস্যার সমাধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে নদী ড্রেজিং, খাল সংস্কার এবং বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে, এই প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, কারণ এটি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হতে আরও কয়েক বছর লাগবে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ
তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই অভিযোগের উত্তরে জানা গেছে যে, দেব অধিকারী সংসদে না থাকলেও তিনি ঘাটালের জন্য অন্য উপায়ে কাজ করেছেন। তবে, বিজেপি এই বিতর্ককে আরও তীব্র করতে চায় এবং দেবের উপর চাপ বাড়াতে প্রস্তুত।

স্থানীয় জনগণের মধ্যে এই বিতর্ক নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন যে, সংসদে উপস্থিতি না থাকলেও দেব রাজ্য সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করেছেন, যার ফলে মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। অন্যদিকে, অনেকে বিজেপির দাবির সমর্থনে বলছেন যে, কেন্দ্রীয় তহবিল না পাওয়ার কারণ হতে পারে দেবের কম উপস্থিতি, যা ঘাটালের জনগণের ক্ষতি করেছে।

ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে বন্যা নিয়ন্ত্রণে, তবে এর সফল বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক ঐক্য ও সঠিক পরিকল্পনা প্রয়োজন। দেব অধিকারীর উপর ওঠা প্রশ্ন তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও ঘাটালের জনগণের ভরসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আগামী দিনে এই বিতর্ক কী দিকে যায়, তা নির্ভর করবে তথ্য ও স্বচ্ছতার উপর।