উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদে ভোটার তালিকায় জালিয়াতির এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে (Hasnabad)। অভিযোগ, বাংলাদেশি নাগরিক আকবর আলি গাজী এবং তাঁর স্ত্রী ফারহানা গাজী ২০১৭ সালে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন এবং হাসনাবাদে বসবাস শুরু করেন। ২০১৯ সালে, স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) নেতা গিয়াসউদ্দিন গাজীর সহায়তায় তারা ভারতের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেন এবং ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হন।
এরপর তারা জমি ক্রয় করেন এবং একাধিক নির্বাচনে ভোটও দিয়েছেন বলে জানা গেছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর এই দম্পতি বর্তমানে পলাতক। এই ঘটনা রাজ্যের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
হিন্দু ভয়েস এর এক্স-এ পোস্ট করা একটি তথ্য অনুযায়ী, আকবর আলি গাজী এবং ফারহানা গাজী ২০১৭ সালে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন এবং উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদে বসতি স্থাপন করেন।
২০১৯ সালে তৃণমূল নেতা গিয়াসউদ্দিন গাজীর সহায়তায় তারা ভোটার তালিকায় নাম তুলে ভারতীয় ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হন। এরপর তারা স্থানীয়ভাবে জমি ক্রয় করেন এবং একাধিক নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভোট দেন। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর গাজী দম্পতি পলাতক হয়েছেন, এবং তাদের খোঁজে পুলিশ তৎপরতা শুরু করেছে।
তবে, এই অভিযোগ এখনও সরকারিভাবে নিশ্চিত হয়নি, এবং তদন্তের মাধ্যমে এর সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন।রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াএই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিজেপি নেতা এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই ঘটনাকে তৃণমূল কংগ্রেসের ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের পৃষ্ঠপোষকতা’র প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেস অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার তালিকায় নাম তুলে নির্বাচনী সুবিধা নিচ্ছে। এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।” তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে এই ঘটনার তদন্ত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
তৃণমূল বলছে, “বিজেপি রাজনৈতিক স্বার্থে বাঙালি পরিচয়ের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে। ভোটার তালিকা তৈরি নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে, এবং তৃণমূলের কোনও নেতা এতে হস্তক্ষেপ করেননি।” তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের অভিযোগ বিজেপির বাঙালি-বিরোধী মনোভাবের প্রমাণ।”
পশ্চিমবঙ্গে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার তালিকায় নাম তোলার অভিযোগ নতুন নয়। ২০২২ সালে তৃণমূলের বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস একটি জনসভায় বলেছিলেন, “যারা তৃণমূলকে সমর্থন করে, কেবল তাদেরই ভোটার তালিকায় নাম তোলা হোক।” এই মন্তব্য ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয় এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগকে জোরালো করে।
এছাড়াও, উত্তর ২৪ পরগনা, মালদা এবং মুর্শিদাবাদের মতো সীমান্তবর্তী এলাকায় অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য নকল আধার কার্ড তৈরির অভিযোগ উঠেছে। মুম্বই পুলিশের তদন্তে দেখা গেছে, এই ধরনের অবৈধ প্রবেশকারীরা মালদা, মুর্শিদাবাদ এবং ২৪ পরগনার মাধ্যমে ভারতে প্রবেশ করে এবং ২,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকার বিনিময়ে নকল আধার কার্ড সংগ্রহ করে।
ইস্টবেঙ্গল দিবসের সকালেই শহরে আসছেন বাগানের এই ডিফেন্ডার
শুভেন্দু অধিকারী এই ঘটনার তদন্তের জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “ভোটার তালিকায় জালিয়াতি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। নির্বাচন কমিশনের উচিত এই বিষয়ে তাৎক্ষণিক তদন্ত শুরু করা এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।” তিনি জেলা নির্বাচনী আধিকারিকদের (DEO) পরামর্শ দিয়েছেন, রাজ্য সরকারের মৌখিক নির্দেশ অগ্রাহ্য করতে।