পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে গুলি করে খুন তৃণমূল অঞ্চল সভাপতিকে

বোলপুর: রাজ্যের রাজনীতিতে ফের রক্তারক্তি! ভাঙড়ের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার বীরভূমের সাঁইথিয়ায় তৃণমূল অঞ্চল সভাপতিকে (TMC Leader) পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে গুলি করে খুনের…

Burdwan-1 Block Hatudewan Party Office: Kakali Ta Gupta’s Name Removed from Signboard

বোলপুর: রাজ্যের রাজনীতিতে ফের রক্তারক্তি! ভাঙড়ের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার বীরভূমের সাঁইথিয়ায় তৃণমূল অঞ্চল সভাপতিকে (TMC Leader) পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে গুলি করে খুনের অভিযোগ উঠল। মৃত নেতার নাম পীযূষ ঘোষ (৪২)। তিনি সাঁইথিয়া পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষের পাশাপাশি শ্রীনিধিপুর অঞ্চলের তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি ছিলেন।

শনিবার অর্থাৎ ১২ জুলাই রাত সাড়ে দশটা নাগাদ বাড়ি ফেরেন পীযূষ ঘোষ (TMC Leader)। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত এগারোটার পর একটি ফোন আসে তাঁর কাছে। ফোন পাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি বেরিয়ে যান কোমরপুর গ্রামের মোড়ের দিকে। অভিযোগ, সেখানেই তাঁকে খুব কাছ থেকে মাথায় গুলি করা হয়। গুলির শব্দে চমকে ওঠেন এলাকার বাসিন্দারা।

   

ঘটনার পর গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছিল। চিকিৎসকেরা তাঁকে (TMC Leader) মৃত বলে ঘোষণা করেন। খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকার তৃণমূল নেতা-কর্মীরা, আত্মীয়-পরিজনেরা হাসপাতালে ভিড় জমান। হাসপাতাল চত্বরে শোকের ছায়া।

ঘটনার খবর পেয়ে সাঁইথিয়া থানার পুলিশ এবং আমোদপুর ফাঁড়ির আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। রাতেই শুরু হয় তদন্ত। পুলিশ প্রাথমিকভাবে খুনের পিছনে রাজনৈতিক কারণ দেখছে। তবে এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। তদন্তে নেমে পুলিশ ইতিমধ্যেই দুই মহিলা এবং এক যুবককে আটক করেছে বলে খবর।

পরিবারের দাবি, রাজনৈতিক কারণেই খুন করা হয়েছে পীযূষ ঘোষকে। সম্প্রতি তাঁকে অঞ্চল সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেই পদ থেকেই তাঁকে সরাতে পরিকল্পিতভাবে ডেকে এনে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও কারও নামে এখনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, পীযূষ ঘোষ বেশ কিছু দিন ধরে তৃণমূলের হয়ে এলাকায় সক্রিয়ভাবে কাজ করছিলেন। জনপ্রিয়তাও বাড়ছিল। তাই তাঁকে নিয়ে রাজনৈতিক শত্রুতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে, কিছু দিন ধরেই পারিবারিক বা ব্যক্তিগত শত্রুতাও তৈরি হয়েছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

Advertisements

বীরভূমে এর আগেও একাধিক রাজনৈতিক খুনের ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে পঞ্চায়েত ভোটের আগে ও পরে এই জেলায় হিংসার ঘটনা নতুন কিছু নয়। তাই এই খুন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিনা তা নিয়ে জোরালো তদন্ত চলছে।

বর্তমানে পীযূষ ঘোষের দেহ বোলপুর মহকুমা হাসপাতালেই রয়েছে। ময়নাতদন্তের পরই মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এই ঘটনাকে ঘিরে সাঁইথিয়া, লাভপুর ও আশপাশের এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়েছে। পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে সম্ভাব্য অশান্তি এড়াতে।

সাঁইথিয়া থানার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘তদন্ত চলছে। আমরা প্রত্যেকটি দিক খতিয়ে দেখছি। খুব শীঘ্রই অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

তৃণমূল কংগ্রেসের তরফেও এখনও পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এই খুনের পেছনে বৃহত্তর গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব কিংবা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র লুকিয়ে থাকতে পারে।

এই ঘটনাকে ঘিরে ফের উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। প্রশ্ন উঠছে, পঞ্চায়েত নির্বাচন পেরিয়ে যাওয়ার পরও কেন থামছে না রাজনৈতিক হিংসা? পীযূষ ঘোষ খুনের তদন্ত কোন দিকে মোড় নেয়, সেদিকেই এখন তাকিয়ে জেলা তথা রাজ্যবাসী।