নদিয়ার ধানতলা থানার হালালপুর গ্রামে জমি দখল (land dispute) নিয়ে উত্তেজনা চরমে। অভিযোগ উঠেছে, তৃণমূল নেতা তথা প্রোমোটার অভিজিৎ সরকারের নেতৃত্বে একটি দুষ্কৃতী দল এক ৮৫ বছরের বৃদ্ধার হাত ভেঙে দিয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার সন্ধ্যায়। শুধু বৃদ্ধাই নন, তার পরিবারও এই হামলার শিকার হয়েছে। বৃদ্ধার ছেলেকে মারধর করা হয়, এবং পরিবারের মহিলা সদস্যদের শ্লীলতাহানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
ঘটনার সূত্রপাত জমি দখল নিয়ে। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, তৃণমূল নেতা অভিজিৎ সরকার বেআইনি ভাবে নয়নজলির জমি দখল করতে চান। সেই জমি দখলের বিরোধিতা করেন ওই বৃদ্ধা এবং তার পরিবার। এর ফলেই তাঁদের উপর হামলা চালানো হয়। বৃদ্ধা এবং তার ছেলে গুরুতর আহত অবস্থায় রাণাঘাট মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তৃণমূল নেতার ক্ষমতার অপব্যবহার
ঘটনাটি আরও চাঞ্চল্যকর হয়ে ওঠে যখন জানা যায় যে আক্রান্ত পরিবারটি নিজেরাও তৃণমূল সমর্থক। তৃণমূল নেতার হাতে দলেরই কর্মীদের এই ন্যক্কারজনক নির্যাতন নিয়ে এলাকায় ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার দলীয় কর্মীদের সতর্ক করে বলেছেন, দলীয় পদে থেকে জমি দখল বা প্রোমোটারি চলবে না। কিন্তু এই ঘটনা সেই নির্দেশের সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র তুলে ধরেছে।
থানায় অভিযোগ, কিন্তু অধরা অভিযুক্তরা
আক্রান্ত পরিবারের পক্ষ থেকে ধানতলা থানায় অভিজিৎ সরকার এবং তার দলবলকে অভিযুক্ত করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে অভিযোগ দায়ের হলেও এখনও অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। বরং, ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্তরা গা ঢাকা দিয়েছে বলে জানা গেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে এবং অভিযুক্তদের শীঘ্রই গ্রেপ্তার করা হবে।
রাজনৈতিক উত্তাপ বৃদ্ধি
এই ঘটনার পর হালালপুরে রাজনৈতিক উত্তাপ তীব্র আকার ধারণ করেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা এই ঘটনাকে তৃণমূল নেতাদের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির উদাহরণ হিসাবে দেখছেন। বৃদ্ধার উপর এমন নৃশংস হামলার ঘটনায় শুধু স্থানীয়রা নয়, জেলার বিভিন্ন প্রান্তেও সমালোচনা শুরু হয়েছে।
এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা শুনে দলকে সমর্থন করেছি। কিন্তু আজ দলেরই নেতা আমাদের উপর হামলা চালাচ্ছেন। এটা আমরা মেনে নিতে পারছি না।”
উচ্চ নেতৃত্বের নীরবতা
তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব এই ঘটনার বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি। তবে রাজ্যের শাসকদলের এমন অমানবিক ঘটনার জন্য বিরোধীরা সুযোগ হাতছাড়া করেনি। বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতারা এই ঘটনাকে তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসের রাজনীতি’র উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছেন। বিজেপির নেতা বলেন, “তৃণমূল নেতারা শুধু ক্ষমতা ধরে রাখতে চান। মানুষের সেবা নয়, তাদের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার।”
পরবর্তী পদক্ষেপ
পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযুক্তদের খুঁজে বের করার জন্য বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে, জমি দখলের অভিযোগেরও তদন্ত চলছে।
এই ঘটনায় শাসকদলের ইমেজে বড় আঘাত হানল বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেবেন কি না, তা এখন দেখার বিষয়।