পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নারায়ণগড় থানার মকরামপুরে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) এক নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারী এক প্রাক্তন বিজেপি নেত্রী, যিনি কয়েক মাস আগে দলের সমস্ত কর্মসূচি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। নির্যাতিতার স্বামী জানিয়েছেন, আজ রবিবার সকালে তৃণমূলের পার্টি অফিসে ‘সমস্যার সমাধান’ করার নামে ডেকে তাঁর স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এই ঘটনায় এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছে।
নির্যাতিতার স্বামীর দাবি, তিনি ইমেলের মাধ্যমে নারায়ণগড় থানা এবং জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “আমার স্ত্রীকে তৃণমূল পার্টি অফিসে যেতে বলা হয়েছিল। সেখানে গেলে ওই তৃণমূল নেতা দরজা বন্ধ করে তাঁর সঙ্গে নোংরা ব্যবহার করে। আমার স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে।” তিনি আরও জানান, ঘটনার সময় তৃণমূলের এক কর্মী ও তাঁর মা সেখানে পৌঁছে তাঁর স্ত্রীকে উদ্ধার করেন এবং তাঁকে খবর দেন। পরিবারের অভিযোগ, কয়েক মাস আগে ওই মহিলা বিজেপি নেতৃত্বকে ফোন করে দল থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছিলেন। তবু তাঁর ওপর অত্যাচার বন্ধ হয়নি। স্বামী বলেন, “ওই তৃণমূল নেতা বলেছিলেন, বিজেপি ছাড়লে এসব থেকে মুক্তি মিলবে। কিন্তু তারপরও এই ঘটনা ঘটল।”
পাল্টা দাবি করেছেন অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা। তিনি বলেন, “একটি বিষয়ে মীমাংসার জন্য আজ দুই মহিলা ও এক যুবক আমার কাছে এসেছিলেন। কথা চলাকালীন হঠাৎ ওই যুবক আমার গায়ে হাত তোলেন। মারধরের পর তিনি ভিডিয়ো করতে শুরু করেন এবং চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘আপনি ধর্ষণ করলেন কেন?’ আমি এর বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।” অভিযুক্তের দাবি, এটি একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।
বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “যদিও ওই মহিলা চাপে পড়ে বিজেপি থেকে সরে গিয়েছেন, তবু তাঁর স্বামী যখন আমাকে ফোন করেন, আমরা সব রকম সহযোগিতা করেছি। এই ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমরা অভিযুক্তের গ্রেফতারির দাবিতে আন্দোলন করব।” অন্যদিকে, তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, “আইন আইনের পথে চলবে। আমাদের কাছে অভিযোগ এলে এবং ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে, আমরা দলগতভাবে ওই নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।”
মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার জানিয়েছেন, “দুই পক্ষের তরফেই আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত শুরু হয়েছে। আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি।” পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবে এখনও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে গেছে। বিজেপি এটিকে তৃণমূলের ‘গুন্ডামি’র প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরছে, যেখানে তৃণমূল এটিকে ‘বিজেপির ষড়যন্ত্র’ বলে দাবি করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনা এলাকার শান্তি নষ্ট করছে। একজন গ্রামবাসী বলেন, “এটা খুবই লজ্জার বিষয়। যারা নেতা, তাদের থেকে এমন আচরণ কেউ আশা করে না।”
নির্যাতিতার পরিবার এই ঘটনায় ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছে। স্বামী বলেন, “আমার স্ত্রী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। আমরা শুধু ন্যায় চাই।” এদিকে, তদন্তের অগ্রগতি এবং পুলিশের পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করছে এই মামলার পরবর্তী দিক। রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে সত্যতা উদঘাটনের দায়িত্ব এখন পুলিশের হাতে।
এই ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুরের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আগামী দিনে এই মামলা কী মোড় নেয়, তা দেখার জন্য এলাকাবাসী মুখিয়ে রয়েছে।