কলকাতা: বাংলাভাষীদের উপর বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে ক্রমবর্ধমান হেনস্তা এবং ভাষাগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে মুখ খুলল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। ২১ জুলাইয়ের শহিদ দিবসের সভা থেকেই তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন ‘ভাষা আন্দোলন’-এর সূচনা হবে কলকাতার মেয়ো রোডে। সেই ঘোষণা অনুযায়ী, ২ আগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে তৃণমূলের ধারাবাহিক ধরনা কর্মসূচি, যা চলবে টানা পাঁচ মাস ধরে, ডিসেম্বরে এসে শেষ হবে এই বছরের আন্দোলন।
এই দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনের মূল স্থান নির্বাচিত হয়েছে মেয়ো রোডের গান্ধীমূর্তির পাদদেশ। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে বিস্তারিত সূচি। ধারাবাহিকভাবে দলের বিভিন্ন শাখা সংগঠন এই আন্দোলনে অংশ নেবে।
কর্মসূচির বিস্তারিত সূচি:
২ ও ৩ আগস্ট: সূচনা করবেন তৃণমূল মহিলা কংগ্রেস
৯ ও ১০ আগস্ট: ধরনায় তৃণমূল যুব কংগ্রেস
১৭ আগস্ট: তৃণমূল লিগাল সেল
২৩ ও ২৪ আগস্ট: জয় হিন্দ বাহিনী
৩০ ও ৩১ আগস্ট: কিষাণ ও ফার্ম ওয়ার্কার্স সেল
৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর: প্রোগ্রেসিভ হেল্থ অ্যাসোসিয়েশন
১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর: শিক্ষাবন্ধু সংগঠন
দুর্গাপুজো ও জন্মাষ্টমীর ছুটির জন্য কিছু দিন কর্মসূচি স্থগিত থাকবে।
১১ ও ১২ অক্টোবর: আইএনটিটিইউসি (শ্রমিক সংগঠন)
২৫ ও ২৬ অক্টোবর: আদিবাসী সেল
১ ও ২ নভেম্বর: সেকেন্ডারি টিচার্স অর্গানাইজেশন
৮ ও ৯ নভেম্বর: ওয়েবকুপা (WEBKUPA)
১৫ ও ১৬ নভেম্বর: প্রাইমারি টিচার্স অর্গানাইজেশন
২২ ও ২৩ নভেম্বর: তপশিলি জাতি ও অনগ্রসর শ্রেণির সংগঠন
২৯ ও ৩০ নভেম্বর: প্যারাটিচার্স সংগঠন
শেষ ধাপে অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলো:
৬ ও ৭ ডিসেম্বর: সংখ্যালঘু সংগঠন
১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর: হিন্দি সেল
২০ ও ২১ ডিসেম্বর: তৃণমূল ছাত্র পরিষদ, যার মাধ্যমে সমাপ্তি টানা হবে এবারের আন্দোলনের।
তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ধরনা কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হল বাংলাভাষীদের উপর যেভাবে অবিচার ও অসম্মানজনক আচরণ করা হচ্ছে বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যে, তার প্রতিবাদে সচেতনতা তৈরি করা এবং কেন্দ্রের উপর চাপ সৃষ্টি করা। দল মনে করছে, ভাষাগত অধিকারের প্রশ্নে এটা একপ্রকার ‘নতুন ভাষা আন্দোলন’।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২১ জুলাইয়ের সভা থেকে সরাসরি আক্রমণ শানিয়েছিলেন বিজেপি-র বিরুদ্ধে। তিনি বলেছিলেন, “আমাদের মাতৃভাষা বাংলা নিয়ে কেউ অপমান করলে, তার জবাব রাজপথেই দেওয়া হবে। বাংলা কোনও দিন মাথা নত করে না।”
এই ধারাবাহিক ধরনা কর্মসূচির মাধ্যমে রাজ্যজুড়ে তৃণমূল তার সংগঠনকে আরও সক্রিয় করতে চায় বলেও রাজনৈতিক মহলের অভিমত।
মেয়ো রোডের এই দীর্ঘস্থায়ী প্রতিবাদ কর্মসূচি বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচনা করতে চলেছে। তৃণমূলের এই উদ্যোগ ভাষাগত অধিকার রক্ষার এক রাজনৈতিক কর্মসূচি হলেও, এর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অভিঘাতও গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।