“সত্য কথা বলা একটি পাপ”— ফেসবুকে কান ধরে ছবি পোস্ট করে রাজনৈতিক মহলে তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর (TMC Councillor) তথা আইনজীবী পার্থসারথি মাইতি।
রবিবার বিকেলে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে তিনি একটি ছবি শেয়ার করেন, যেখানে দেখা যায় তিনি কান ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। সেই ছবির ক্যাপশনে তিনি লেখেন— “কান ধরে ভুল স্বীকার করছি— সত্য কথা বলা একটি পাপ।” এই এক বাক্যের মন্তব্যেই কার্যত আগুন জ্বলে ওঠে জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে।
সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, তমলুক পুরসভার প্রায় ২ কোটি টাকার ট্যাক্স এখনও বকেয়া রয়েছে। বকেয়া থাকা সংস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে একাধিক সরকারি দপ্তর, বিভিন্ন ব্যাংক এবং বেশ কয়েকটি বেসরকারি নার্সিং হোম। এর মধ্যে কয়েকটি নার্সিং হোম তৃণমূল নেতাদের মালিকানাধীন বলেই অভিযোগ উঠছে। ঠিক এই কারণেই বকেয়া ট্যাক্স প্রসঙ্গটি প্রকাশ্যে আনা মাত্রই শাসকদলের অস্বস্তি বেড়ে যায়।
বিজেপির কাউন্সিলর শর্বরী চক্রবর্তী এই প্রসঙ্গে সরব হয়ে বলেন, “তৃণমূল নেতাদের মদতেই এই বিপুল বকেয়া জমেছে। দুর্নীতির আড়াল করতে গিয়েই কাউন্সিলর পার্থসারথি মাইতিকে চুপ করানোর চেষ্টা হচ্ছে।” বিজেপির দাবি, তৃণমূলের নেতারা জনগণের টাকায় অনিয়ম ঢাকতে চাইছেন, আর যে কেউ এই দুর্নীতি প্রকাশ্যে আনলেই তাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
এই ঘটনার জেরে তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজিত রায় জানান, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে পার্থসারথি মাইতির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। তিনি স্পষ্ট বলেন, “দলের অভ্যন্তরীণ কোনও তথ্য বাইরে প্রকাশ করা শৃঙ্খলাভঙ্গ। এর পরিণতি মেনে নিতে হবে।”
ঘটনা নিয়ে সরাসরি মুখ খুলতে চাননি বিদ্রোহী কাউন্সিলর পার্থসারথি মাইতি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি একাধিক ভুয়ো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। এমনকি তাঁকে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। যদিও এই সমস্ত অভিযোগের বিষয়ে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব এখনও মুখ খোলেননি।
পুরসভার ট্যাক্স বকেয়া ইস্যু ঘিরে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক দড়ি টানাটানি। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনার ফলে তৃণমূলের ভেতরে অসন্তোষ আরও বাড়তে পারে। একইসঙ্গে বিরোধী শিবিরের হাতে দুর্নীতির নতুন অস্ত্র উঠে এসেছে।
পার্থসারথি মাইতির একটি ফেসবুক পোস্টই দেখিয়ে দিয়েছে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কতটা গভীর। ২ কোটি টাকার পুরসভার বকেয়া ট্যাক্স ইস্যু ঘিরে যেমন শাসকদল চাপে পড়েছে, তেমনি বিরোধীরা এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে মাঠ গরম করতে শুরু করেছে। এখন দেখার বিষয়— তৃণমূল নেতৃত্ব সত্যিই পার্থসারথি মাইতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয় কিনা, নাকি ক্রমবর্ধমান অস্বস্তি সামলাতে কোনও সমঝোতার পথে হাঁটে।