রাজ্যে SIR প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরই বিধানসভা নির্বাচনের ঘোষণা হতে পারে, এমন জল্পনা তুঙ্গে। তার আগেই নির্বাচনী উত্তেজনা জমে উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। তবে সব দলের প্রস্তুতিকে ছাপিয়ে সবচেয়ে কঠোর অবস্থানে দেখা যাচ্ছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে (TMC)।
বিপদে সাহায্য না পেয়ে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে প্রার্থী সনিয়া গান্ধী
সূত্রের খবর, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই বর্তমান বিধায়কদের কাজকর্ম পর্যালোচনা শুরু করেছে। ‘গতবার জিতেছিলেন কিনা সেটা বিবেচনা নয়’ বার্তা মাথায় রেখেই চলছে রিভিউ। এলাকায় SIR চলাকালীন কোন বিধায়ক কতটা সক্রিয় ছিলেন, মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন কিনা, সরকারি প্রকল্পের প্রচারে কতটা গুরুত্ব দিয়েছেন। সবই খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। দলের পরামর্শদাতা সংস্থাও সরেজমিনে বেরিয়ে গ্রাউন্ড সার্ভে করছে। প্রতিটি বিধায়কের জন্য আলাদা রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে।
সরকারের সাম্প্রতিক প্রকাশিত ‘উন্নয়নের পাঁচালি’ রিপোর্টও এলাকাভিত্তিক প্রচারে ব্যবহৃত হবে। ফলে কোন বিধায়ক তা কতটা গুরুত্ব দিয়ে পালন করছেন, সেটিও মূল্যায়নের তালিকায়। দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব চাইছে এমন প্রার্থী, যারা সৎ, পরিশ্রমী এবং মানুষের কাজে যুক্ত। ২৪ নভেম্বরের বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য ছিল আরও জোরালো, “কোনও দাদা ধরে টিকিট পাওয়া যাবে না। শুধু পারফরম্যান্স।”
ডোমকল ও তেহট্টে মৃত্যুজনিত কারণে নির্বাচন হয়নি। মুকুল রায়ের পদ খারিজে দলে বর্তমানে কার্যত ২১৯ জন অফিসিয়াল বিধায়ক। পাশাপাশি অন্য দল থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া ৫ জন বিধায়কও একই কঠোর রিভিউয়ের আওতায়।
কারা টিকিট হারানোর ঝুঁকিতে?
দলীয় সূত্রে উঠে এসেছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ, যেগুলোই নির্ধারণ করতে পারে কারা বাদ পড়বেন:
১. জনগণের অভিযোগে ঘেরা বিধায়করা
এলাকায় মানুষের অভিযোগ থাকলে সেই বিধায়ককে টিকিট দেওয়ার সম্ভাবনা কম।
২. ‘দলের নাম করে বাড়ি–গাড়ি বাড়ানো’
যাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত স্বার্থে দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে সম্পদ বৃদ্ধির অভিযোগ রয়েছে, তাদের ওপর বিশেষ নজর।
৩. দু’জন অভিনেতা বিধায়কের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
দুর্ব্যবহারের অভিযোগে দু’জন তারকা বিধায়কের টিকিট কাটা যেতে পারে।
৪. গোপনে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ?
যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, দলে থেকেও গোপনে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। “বিভীষণ” আচরণ করছেন, তাদের ক্ষেত্রে দল নরম হতে রাজি নয়।
তৃণমূল স্পষ্ট জানিয়েছে, বয়স বেশি হলেই যে টিকিট কাটা হবে, তা নয়। উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে বজবজের অশোক দেবকে। বয়স সত্তরের বেশি হলেও মাঠে নেমে কাজ করার প্রবণতা তাঁর রিভিউতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। নির্বাচনের আগে তৃণমূলের এই কঠোর রিভিউ স্পষ্ট করে দিচ্ছে। দল এবার শুধু জনপ্রিয় মুখ নয়, বিশ্বস্ত কাজের মানুষ চাইছে। ফলে তৃণমূলের ভেতরেই উত্তেজনা তুঙ্গে, কারা নবীকরণের তালিকায় থাকবেন, আর কারা বাদ পড়বেন? সবকিছু এখন নির্ভর করছে মাঠের কাজ, মানুষের প্রতিক্রিয়া এবং রিভিউ রিপোর্টের উপর।
