১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল নিয়ে কেন্দ্র ও বিরোধীদের মধ্যে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব। প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীদের পদ থেকে অপসারণ সংক্রান্ত এই বিল নিয়ে সংসদে এবং রাজনীতির ময়দানে এখন চলছে চাপানউতোর। শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিল নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল তৃণমূল কংগ্রেস(TMC Boycotts JPC)। তারা জানিয়ে দিল, এই বিল নিয়ে গঠিত যৌথ সংসদীয় কমিটিতে (জেপিসি) কোনও প্রতিনিধি পাঠাবে না রাজ্যের শাসক দল। তাদের বক্তব্য, জেপিসি গঠন করা নিছকই ‘প্রহসন’, এবং এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে কোনও লাভ নেই।
লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিলটি প্রথম উপস্থাপিত হওয়ার পর থেকেই বিরোধিতার সুর চড়িয়েছিল তৃণমূল। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি অভিযোগ করেছিলেন, দুর্নীতি নির্মূল করার সদিচ্ছা থেকে নয়, বরং বিরোধীদের কণ্ঠরোধ এবং ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্যই এই বিল আনা হয়েছে। তাঁর কথায়, “প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সত্যিই গুরুতর অভিযোগ থাকলে তদন্ত হোক। কিন্তু শুধুমাত্র তদন্ত সংস্থার ইশারায় ৩০ দিন জেলে রাখলেই পদচ্যুতি করা গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক।” তিনি আরও প্রস্তাব দেন, “যদি কোনও মন্ত্রীকে ১৫ দিন হেফাজতে রাখতে হয়, তবে ১৫ দিনের মধ্যে যদি দোষ প্রমাণিত না হয়, তদন্তকারী আধিকারিকদের দ্বিগুণ সময় জেল খাটতে হবে।”
বিল অনুযায়ী, কোনও মন্ত্রী গুরুতর অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে টানা ৩০ দিন জেলে থাকলে তাঁর পদ খোয়া যাবে। এই বিধান থেকে বাদ যাবেন না প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীরাও। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে ঘোষণা করেছিলেন যে বিলটি যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হবে, বিরোধীদের দাবি মেনে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তকে ‘প্রহসন’ আখ্যা দিয়ে তৃণমূল জেপিসিতে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, “এই কমিটি ক্ষমতাসীন দলের ইচ্ছেমতো কাজ করবে, সুতরাং এর কোনও বাস্তবিক মূল্য নেই।”
শুক্রবার বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই বিলের পক্ষে সওয়াল করেন। তাঁর দাবি, রাজনৈতিক পরিসরে স্বচ্ছতা বজায় রাখার স্বার্থেই এই বিল আনা হয়েছে। তিনি নাম না করে তৃণমূলের দুই শীর্ষনেতা—পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। মোদীর বক্তব্য, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার নীতি গ্রহণ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।”
পাল্টা জবাবে তৃণমূল দাবি করে, বিজেপির নিজস্ব সাংসদদের মধ্যেই রয়েছে একাধিক গুরুতর অপরাধের অভিযোগ। তাদের হিসাব অনুযায়ী, বিজেপির ২৪০ জন সাংসদের মধ্যে ৯৪ জনের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল কেস রয়েছে এবং ৬৩ জনের বিরুদ্ধে রয়েছে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ। তৃণমূলের বক্তব্য, “দুর্নীতি বা অপরাধের অভিযোগ বিজেপির ঘরেও কম নয়। তাই স্বচ্ছতার নামে এই বিল কেবল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অস্ত্র।”
রাজনৈতিক মহলের মতে, তৃণমূলের এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত ইঙ্গিতপূর্ণ। বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’-র শরিক অন্যান্য দল এই পথে হাঁটবে কি না, সেদিকেই এখন নজর। বিলটি সংসদে পাস হলে তা দেশের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আনবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে তৃণমূলের জেপিসি বয়কটের সিদ্ধান্ত বিজেপি-বিরোধী রাজনীতিকে আরও তীব্র করবে বলেই অনেকে মনে করছেন।