বাঘিনী ঝাড়গ্রামে(Jhargram), ১৬৩ ধারা (163-section) জারি, ঘুমপাড়ানি গুলি (Tranquilizer) ব্যবহারের অনুমতি। ঝাড়গ্রাম (Jhargram) জেলার বেলপাহাড়ি এবং জামবনি এলাকায় একের পর এক বাঘের উপস্থিতি নিয়ে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে, ঝাড়খণ্ড রাজ্যের পূর্ব সিংভূম জেলার চাকুলিয়া রেঞ্জে একটি বাঘিনী (Tigress) ঘুরে বেড়াচ্ছিল, যার ফলে ঝাড়গ্রাম জেলার বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষত, বেলপাহাড়ি এবং জামবনি অঞ্চলের পর্যটকরা একেবারে ভয়ে কাঁপছেন। বাঘের গতিবিধি এবং তার অবস্থানকে কেন্দ্র করে বন দফতর এবং প্রশাসন বিভিন্ন সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
বাঘিনীর উপস্থিতি এবং নজরদারি:
বাঘিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর ঝাড়গ্রাম(Jhargram) জেলা বন দফতর এবং ঝাড়খণ্ডের প্রশাসন একযোগে কাজ শুরু করে। বাঘিনীর গতিবিধি ট্র্যাক করতে গলায় একটি জিপিএস ট্র্যাকার লাগানো হয়েছিল, যার মাধ্যমে তার চলাফেরা মনিটর করা সহজ হয়েছে। সিমলিপাল জঙ্গল থেকে বাঘিনী কয়েকদিন আগে বেরিয়ে ঝাড়খণ্ডে চলে আসার পর তার অবস্থান ও গতিবিধি সম্পর্কে অধিক তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, বন দফতর আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করছে যাতে বাঘটি কোনো ক্ষতি না করে এবং নিরাপদে আবার তার স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরে যেতে পারে।
জঙ্গলে বাঘের তৎপরতা: ১৬৩ ধারা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা:
এদিকে, ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি এলাকায় জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৬৩ ধারা জারি করা হয়েছে। এই অঞ্চলের পর্যটকদের সতর্কতা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা বাঘের চলাচলের এলাকায় না যান। পর্যটকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য বন দফতর এবং পুলিশ যৌথভাবে বিভিন্ন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এছাড়া, বাঘিনীর নিরাপদ উৎখাতের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। বন দফতর ঘুমপাড়ানি গুলি (tranquilizer darts) ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে, যা বাঘকে অচেতন করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এর মাধ্যমে বাঘকে নিরাপদভাবে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরানো সম্ভব হবে।
মোষ আনা এবং টিম গঠন:
বাঘকে উৎখাত করার জন্য আরও একটি অভিনব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রশাসন মোষ আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মোষের সাহায্যে বাঘের মনোযোগ আকর্ষণ করা যাবে এবং তাকে নিরাপদভাবে অন্য দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। মোষ সাধারণত বাঘের খাদ্যের উৎস হতে পারে এবং এটি বাঘকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, প্রশাসন ৮০টি টিম তৈরি করেছে যারা বাঘের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করবে।
পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক:
এলাকার পর্যটকরা বাঘের উপস্থিতি নিয়ে চরম আতঙ্কে রয়েছেন। বেলপাহাড়ি, জামবনি অঞ্চলে প্রচুর পর্যটক এসে থাকেন, তবে এখন তারা আতঙ্কিত হয়ে বাড়ি ফিরছেন। কিছু পর্যটক জানিয়েছে যে, তারা বাঘের আতঙ্কের কারণে স্থানীয় পর্যটন স্থান পরিত্যাগ করেছেন। এই পরিস্থিতি স্থানীয় ব্যবসায়ীদেরও মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। পর্যটন শিল্পের অবস্থা তলানিতে পৌঁছেছে, কারণ পর্যটকরা এখন ভয়ের কারণে এই অঞ্চলে আসতে চাইছেন না।
নিরাপত্তা নিয়ে বন দফতরের উদ্বেগ:
বেলপাহাড়ি অঞ্চলের আশেপাশে যখনই বাঘের উপস্থিতি পাওয়া যায়, তখন বন দফতর যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। এখানে পর্যটক, স্থানীয় বাসিন্দা, এবং বন্যপ্রাণী তিনটি বিষয় একসাথে সম্পর্কিত। বন দফতর জানাচ্ছে যে, তাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে বাঘের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং একইসঙ্গে স্থানীয়দের জীবন রক্ষা করা। এজন্য বাঘের চলাচলের পথে বিশেষ নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং পর্যটকদের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
জঙ্গলমহলে বাঘের উপস্থিতি:
ঝাড়গ্রাম(Jhargram) জেলা এবং ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সীমানা লাগোয়া এই অঞ্চলটি বনাঞ্চল দ্বারা আচ্ছাদিত এবং এটি বন্যপ্রাণীসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত। এখানে বেশ কিছু বাঘ, সিংহ, এবং অন্যান্য মাংসাশী প্রাণীর উপস্থিতি রয়েছে। এই এলাকার বাঘ, বিশেষ করে বাঘিনী, যদি মানুষের কাছে চলে আসে তবে তা বিপদ সৃষ্টি করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে বন দফতর বাঘের গতিবিধি, পরিবেশ এবং অন্যান্য প্রাণীদের সুরক্ষা নিয়ে আরো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
বাঘের সংরক্ষণ: এক দীর্ঘমেয়াদী চ্যালেঞ্জ
ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি অঞ্চলের এই পরিস্থিতি শুধু তাত্ক্ষণিক সমস্যার সৃষ্টি করছে না, বরং এটি বাঘ সংরক্ষণ এবং বন্যপ্রাণী রক্ষার আরও একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। বন দফতর জানায় যে, বাঘের পরিবেশ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার প্রয়োজন। বর্তমানে বাঘের সংখ্যা কমে আসার কারণে বাঘের সংরক্ষণ নিয়ে আরও বেশি জোর দেওয়া উচিত। বাঘের মতো বড় মাংসাশী প্রাণী সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা এবং তাদের প্রাকৃতিক বাসস্থান রক্ষা করা জরুরি।
ঝাড়গ্রামের (Jhargram) বেলপাহাড়ি অঞ্চলে বাঘের উপস্থিতি জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, তবে প্রশাসন এবং বন দফতরের তৎপরতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, পাশাপাশি বাঘকে নিরাপদে উৎখাতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, বন্যপ্রাণী রক্ষা ও মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।