শ্রাবণী মেলায় নজিরবিহীন নিরাপত্তা, ড্রোনে নজরদারি, পথে রাতভর পুলিশ বাহিনী

বৈদ্যবাটি: তারকেশ্বরের শ্রাবণী মেলাকে (Tarakeswar Shrabani Mela) ঘিরে এবছর রাজ্য সরকারের তরফে নেওয়া হয়েছে একাধিক নজরকাড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। গঙ্গাসাগর মেলার মতোই যাতে বিপুল সংখ্যক মানুষ…

শ্রাবণী মেলায় নজিরবিহীন নিরাপত্তা, ড্রোনে নজরদারি, পথে রাতভর পুলিশ বাহিনী

বৈদ্যবাটি: তারকেশ্বরের শ্রাবণী মেলাকে (Tarakeswar Shrabani Mela) ঘিরে এবছর রাজ্য সরকারের তরফে নেওয়া হয়েছে একাধিক নজরকাড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। গঙ্গাসাগর মেলার মতোই যাতে বিপুল সংখ্যক মানুষ নির্বিঘ্নে শ্রাবণী মেলায় অংশ নিতে পারেন, সেই লক্ষ্যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া নির্দেশে প্রশাসনিক স্তরে জোরদার প্রস্তুতি শুরু হয়।

নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রশাসনিক বৈঠকে হুগলি জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি, রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, অরূপ বিশ্বাস, পুলক রায় ও বেচারাম মান্না শ্রাবণী মেলার মূল যাত্রাপথ — বৈদ্যবাটি নিমাইতীর্থ ঘাট থেকে তারকেশ্বর মন্দির (প্রায় ৩৮ কিমি) — ঘুরে দেখেন। এরপর থেকেই পুলিশ ও প্রশাসনের মধ্যে চরম তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

   

১০ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ১৮ অগাস্ট পর্যন্ত চলবে এই ধর্মীয় মেলা। ভক্তরা জল মাথায় নিয়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে পৌঁছন তারকেশ্বরের বাবা তারকনাথের মন্দিরে। শুক্রবার, শনিবার ও রবিবার ভিড় সর্বাধিক থাকে। এই সুবিশাল জমায়েত নিয়ন্ত্রণে হুগলি গ্রামীণ পুলিশ ও কমিশনারেট থেকে প্রায় ৩ হাজার পুলিশ কর্মী মোতায়েন রয়েছেন।

তাদের মধ্যে রয়েছেন ২ জন সুপার, ৪ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ২০ জন ডিএসপি, ৩০ জন ইন্সপেক্টর, ১৫ জন মহিলা পুলিশ ও ১৬টি থানার অফিসার ইনচার্জ। মোট ১০টি পুলিশি সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয়েছে ভক্তদের সাহায্যের জন্য।

জলযাত্রীদের নিরাপত্তায় ৬টি ওয়াচ টাওয়ার থেকে ড্রোনের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারি চালানো হচ্ছে। রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ১০টি ড্রপগেট বসানো হয়েছে ভিড় সামাল দিতে। পাশাপাশি, কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত সহায়তার জন্য ৫০টি মোটর সাইকেল অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

Advertisements

পানীয় জলের ব্যবস্থা করেছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর, যার সঙ্গে পুলিশের সহযোগিতা রয়েছে। রাতভর জলযাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ধনেখালি ও তারকেশ্বর রুটে অতিরিক্ত বাস পরিষেবা চালু রাখা হয়েছে।

তারকেশ্বরের দুধপুকুর চত্বরে বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিকদের একটি দল মোতায়েন রয়েছে। শ্রাবণী মেলায় আগত দেশ-বিদেশের ভক্তদের সুবিধার্থে বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে রাজ্য সরকার, যেখানে মেলার সময়, পরিষেবা, রুট ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

ডিএসপি প্রিয়ব্রত বক্সী জানিয়েছেন, “লাখো মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সারা রাত রাস্তায় পুলিশ থাকছে। যেকোনও অসুবিধায় আমরা পাশে আছি।” হুগলি গ্রামীণ জেলার পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন জানান, “মুখ্যমন্ত্রীর গাইডলাইনের ভিত্তিতে যাবতীয় পরিকল্পনা করা হয়েছে।”

মন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, “গঙ্গাসাগরের মতো শ্রাবণী মেলাকেও আন্তর্জাতিক পর্যটনের কেন্দ্র করে তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই এবার মানুষের ঢল আরও বাড়বে।” ভবিষ্যতে এই মেলা রাজ্যের ধর্মীয় পর্যটনে বড় ভূমিকা নেবে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।