এবার রাষ্ট্রপতির কাছে দরখাস্ত নির্দোষ চাকরিহারাদের

পশ্চিমবঙ্গের হাজার হাজার ‘নির্দোষ’ শিক্ষক মঙ্গলবার (১১ জুন, ২০২৫) রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর (president) কাছে তাদের চাকরি পুনর্বহালের জন্য একটি আবেদনপত্র পাঠিয়েছেন। এই শিক্ষকরা গত ৩৪…

teachers are writing to president

পশ্চিমবঙ্গের হাজার হাজার ‘নির্দোষ’ শিক্ষক মঙ্গলবার (১১ জুন, ২০২৫) রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর (president) কাছে তাদের চাকরি পুনর্বহালের জন্য একটি আবেদনপত্র পাঠিয়েছেন। এই শিক্ষকরা গত ৩৪ দিন ধরে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন, কারণ সুপ্রিম কোর্টের একটি আদেশের ফলে ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগে প্রায় ২৬,০০০ শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর চাকরি বাতিল হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট (president) এই ‘নির্দোষ’ শিক্ষকদের বছরের শেষ পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিলেও, তাদের পুনর্বহালের জন্য নতুন পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষকরা রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

   

পটভূমি: ২০১৬ নিয়োগ কেলেঙ্কারি

২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন (ডব্লিউবিএসএসসি) রাজ্যের সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে ২৪,৬৪০টি পদের জন্য নিয়োগ পরীক্ষা পরিচালনা করে। প্রায় ২৩ লক্ষ প্রার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু ২৫,৭৫৩টি নিয়োগপত্র জারি করা হয়, যা সরকারি পদের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যায়।

তদন্তে (president) দেখা গেছে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। ওএমআর শিটে কারচুপি, মেধা তালিকায় জালিয়াতি এবং কিছু প্রার্থীর শূন্য উত্তরপত্র জমা দেওয়া সত্ত্বেও চাকরি পাওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠে। কিছু প্রার্থী ঘুষ দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

২০২২ সালের এপ্রিলে কলকাতা হাইকোর্ট(president) এই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে প্রতারণামূলক ঘোষণা করে সমস্ত ২৫,৭৫৩টি নিয়োগ বাতিল করে দেয়। ২০২৫ সালের ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট এই রায় বহাল রাখে, বলে যে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াটি ‘দূষিত এবং সমাধানের অযোগ্য’।

তবে আদালত স্বীকার করে যে কিছু প্রার্থী ‘নির্দোষ’, অর্থাৎ তারা ন্যায্যভাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই শিক্ষকদের ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫ পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তবে তাদের পুনর্বহালের জন্য নতুন পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।

শিক্ষকদের আবেদন ও প্রতিবাদ

‘নির্দোষ’ শিক্ষকরা রাষ্ট্রপতির (president) কাছে তাদের আবেদনপত্রে বলেছেন, “আমি আন্তরিকভাবে এবং গভীরভাবে আপনার কাছে, রাষ্ট্রের প্রধান এবং সর্বোচ্চ সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করছি, যাতে আমাকে এই শাস্তি থেকে রক্ষা করা হয়।” তারা দাবি করেছেন যে তারা মেধার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছিলেন এবং অন্যদের দুর্নীতির জন্য তাদের শাস্তি দেওয়া অন্যায়। তারা আরও বলেছেন, যদি তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়, তবে তাদের ও তাদের পরিবারের জন্য ‘স্বেচ্ছায় ইচ্ছামৃত্যু’র অনুমতি দেওয়া হোক।

এই শিক্ষকরা, যাদের অনেকেরই সাত থেকে আট বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা রয়েছে, গত ৩৪ দিন ধরে কলকাতার বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ করছেন। ১২ এপ্রিল থেকে এসপ্ল্যানেডের ওয়াই-চ্যানেলে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্নায় বসেছেন। ২২ এপ্রিল তারা ডব্লিউবিএসএসসি’র আচার্য সদন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন, দাবি করে যে ‘দূষিত’ এবং ‘নির্দোষ’ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হোক।

রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (president) এই শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেছেন, “আমি যারা চাকরি হারিয়েছেন তাদের সঙ্গে আছি। তাদের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমি সবকিছু করব।” তিনি এই রায়কে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের ‘ষড়যন্ত্র’ বলে সমালোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, তিনি এই শিক্ষকদের জন্য জেলে যেতেও প্রস্তুত। তবে, তিনি দুর্নীতির কথা সরাসরি স্বীকার না করে নিয়োগে অনিয়মের কথা উল্লেখ করেছেন।

রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, ২০১৬ সালের নিয়োগে ৯২% প্রার্থী যোগ্য ছিলেন। তিনি ১১ এপ্রিল বলেছিলেন, ডব্লিউবিএসএসসি ২১ এপ্রিলের মধ্যে ‘নির্দোষ’ ও ‘ ঘুষ দিয়ে চাকরি পাওয়া ’ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করবে। কিন্তু এই তালিকা এখনও প্রকাশিত হয়নি, যা শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়িয়েছে।

Advertisements

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও রাষ্ট্রপতির (president)কাছে চিঠি লিখে এই শিক্ষকদের জন্য ন্যায়বিচারের আবেদন করেছেন। তিনি বলেছেন, “অনেক ‘নির্দোষ’ শিক্ষক প্রায় এক দশক ধরে কাজ করছেন। তাদের চাকরি বাতিল করলে লক্ষ লক্ষ ছাত্র শিক্ষকবিহীন ক্লাসরুমে থাকবে। এটি তাদের মনোবল ভেঙে দেবে এবং তাদের পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস কেড়ে নেবে।” তিনি রাষ্ট্রপতিকে, যিনি নিজেও একজন শিক্ষক ছিলেন, এই অবিচারের মানবিক মূল্য বোঝার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করে বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট বারবার ‘নির্দোষ’ ও ‘দূষিত’ প্রার্থীদের তালিকা চেয়েছে, কিন্তু রাজ্য সরকার তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

শিক্ষকদের দুর্দশা

এই শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেই, যেমন মীনাক্ষী নামে একজন শিক্ষক, বলেছেন, “আমার সব নথি আছে। আমি প্রতিটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়েছি। আমি অযোগ্য নই। তারা আমাদের উপর অযোগ্যতার দাগ লাগিয়ে চাকরি কেড়ে নিয়েছে। আমরা কারও কাছে টাকা দিয়ে চাকরি পাইনি।” তিনি আরও বলেন, নতুন পরীক্ষায় বসার মানসিক অবস্থা তাদের নেই, কারণ তাদের পরিবার ও সন্তান রয়েছে।

অন্য একজন শিক্ষক রজত হালদার বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। সুপ্রিম কোর্ট আমার মতো ‘নির্দোষ’ প্রার্থীর প্রতি গুরুতর অবিচার করেছে।”

অশিক্ষক কর্মীদের অবস্থা

শিক্ষকদের পাশাপাশি, ২,৪৮৩ জন গ্রুপ সি এবং ৪,৫৫০ জন গ্রুপ ডি কর্মীও চাকরি হারিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট (president) তাদের জন্য কোনো অস্থায়ী স্বস্তি দেয়নি। তারা বিক্ষোভ করছেন এবং প্রতিশ্রুত মাসিক ভাতা না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। গ্রুপ সি কর্মী অমিত মণ্ডল বলেন, “আমরা অনেকেই যোগ্য এবং নির্দোষ ছিলাম। আমরা আমাদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে এবং শুধুমাত্র ‘নির্দোষ’দের ভাতা দেওয়ার দাবি জানাই।”

পডকাস্টে দু কোটি ভিউ তবুও মাল্যর দাবি কি আদৌ সত্য ? তথ্য কি বলছে

সরকারের পদক্ষেপ

সুপ্রিম কোর্ট ১৭ এপ্রিল নির্দেশ দেয়, রাজ্য সরকারকে ৩১ মে’র মধ্যে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে এবং ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। ৩০ মে রাজ্য সরকার ৯ম থেকে ১২শ শ্রেণির শিক্ষকদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করে। কিন্তু অশিক্ষক কর্মীদের জন্য কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়নি, যা তাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা বাড়িয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের ‘নির্দোষ’ (president) শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের চাকরি হারানোর ঘটনা শিক্ষা ব্যবস্থা এবং হাজার হাজার পরিবারের জন্য একটি সংকট তৈরি করেছে। রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের আবেদন এবং চলমান প্রতিবাদ তাদের ন্যায়বিচারের লড়াইকে তুলে ধরে। রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ এবং স্বচ্ছ তালিকা প্রকাশ এই সংকট সমাধানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ এবং লক্ষ লক্ষ ছাত্রের শিক্ষার মান এখন নির্ভর করছে দ্রুত ও ন্যায়সঙ্গত পদক্ষেপের উপর।