বাজিপোড়ানোয় বাধা দিতে তেলেনিপাড়ায় তলোয়ার নিয়ে মৌলবাদী হামলা

telinipara-diwali-attack-west-bengal

হুগলি: দীপাবলির রাতে হুগলির তেলেনিপাড়ায় ঘটে গেল এক চ্যাঞ্চল্যকর ঘটনা। আলো উৎসবের আনন্দ যখন চারিদিকে, তখন হঠাৎই তলোয়ার হাতে একদল দুষ্কৃতী হানা দেয় স্থানীয় দলিত বস্তিতে। অভিযোগ, বাজি পোড়ানোয় আপত্তি জানানোকে কেন্দ্র করেই এই হামলার সূত্রপাত। ঘটনায় আহত হয়েছেন এক আরএসএস কর্মী, যিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।

Advertisements

স্থানীয় সূত্রে খবর, সোমবার রাতে তেলেনিপাড়ার দলিত বস্তির বাসিন্দারা প্রতিবছরের মতোই দীপাবলি পালন করছিলেন। মোমবাতি, প্রদীপ আর বাজির আওয়াজে মেতে উঠেছিল গোটা পাড়া। ঠিক সেই সময় একদল যুবক সেখানে গিয়ে বাজি বন্ধ করতে বলেন। কথাকাটাকাটি শুরু হয়, মুহূর্তের মধ্যে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। অভিযোগ, কিছুজন হাতে তলোয়ার, দা নিয়ে আক্রমণ চালায় উৎসব উদযাপনকারীদের উপর।

দ্রৌপদী মুর্মুর কপ্টার অবতরণে ধস, হেলিপ্যাডে ফাটল

চোখের পলকে আনন্দঘন পরিবেশ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলাকারীরা স্থানীয় নয়, বাইরের অঞ্চল থেকে এসেছিল। এক আরএসএস কর্মী মারাত্মকভাবে আহত হন, তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার পর বিজেপির পক্ষ থেকে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

দলের দাবি, পুলিশকে ঘটনার আগেই ফোন করা হয়েছিল, কিন্তু অভিযুক্তদের নাম শুনে তারা নীরব থাকে। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের অভিযোগ, “যখনই হামলাকারীদের পরিচয় অন্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর হয়, তখন প্রশাসন চোখ বন্ধ করে থাকে।

Advertisements

এটা রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থার চূড়ান্ত ব্যর্থতা।” অন্যদিকে, স্থানীয় তৃণমূল নেতারা এই অভিযোগ খারিজ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, “ঘটনাটি সম্পূর্ণ ভুল বোঝাবুঝির ফল। কিছু যুবকের মধ্যে সামান্য বাকবিতণ্ডা হয়েছিল, কিন্তু রাজনৈতিক রং লাগিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করা হচ্ছে।”

তবে বাসিন্দাদের বক্তব্য অন্যরকম। তাঁদের দাবি, এ ধরনের ঘটনা তেলেনিপাড়ায় নতুন নয়। কয়েক বছর আগেও সম্প্রদায়ভিত্তিক উত্তেজনা দেখা গিয়েছিল এই এলাকায়। তারা আশঙ্কা করছেন, প্রশাসন যদি এবারও কঠোর না হয়, তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয় থানার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “আইন নিজের হাতে নেওয়া কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। কারা এই হামলায় যুক্ত, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

এদিকে দীপাবলির রাতে এমন হামলায় সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত। সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনার ভিডিও ও ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, যা নিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়েছে। রাজ্যের বিরোধীরা প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের সমালোচনা করছেন, অন্যদিকে শাসক দল বলছে, “এই রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা করছে এক বিশেষ গোষ্ঠী।”