‘ন্যায় চাইলে অপরাধী বানায় সরকার’—আন্দোলনে উত্তাল শিক্ষক সমাজ

চাকরি হারিয়ে একটিমাত্র দাবি নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে (Teacher Protest) বসেছিলেন কিছু শিক্ষক। তাঁদের অবস্থানস্থল বিকাশভবন চত্বরে। সেই জায়গাতেই প্রশাসনের লাঠির ঘায়ে রক্তাক্ত হতে হল তাঁদের।…

Teacher Protest, West Bengal, Peaceful Protest, Education Job Termination, Human Rights Violation

চাকরি হারিয়ে একটিমাত্র দাবি নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে (Teacher Protest) বসেছিলেন কিছু শিক্ষক। তাঁদের অবস্থানস্থল বিকাশভবন চত্বরে। সেই জায়গাতেই প্রশাসনের লাঠির ঘায়ে রক্তাক্ত হতে হল তাঁদের। অথচ, আশ্চর্যের বিষয়, এখন সেই আন্দোলনকারীদের মধ্যেই পাঁচজনকে বিধাননগর উত্তর থানায় হাজিরা দিতে নির্দেশ পাঠিয়েছে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা সরকারি সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন এবং সরকারি কর্মীদের হুমকি দিয়েছেন।

চিন্ময় মণ্ডল, যিনি এই আন্দোলনের অন্যতম মুখ, তিনি বলেন, “১৯ ও ২০ তারিখে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, না গেলে আমাদের বিরুদ্ধে ৩৫(৬) ধারায় মামলা হবে। প্রশ্ন হল, আমরা যাঁরা রক্তাক্ত হলাম, যাঁরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছিলাম, কোনও অস্ত্র বা হিংসার উপকরণ আমাদের সঙ্গে ছিল না—আমাদের বিরুদ্ধেই কেন এই মামলা?”

   

প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত মাটি কামড়ে পড়ে আছেন এই চাকরি হারানো শিক্ষকরা। তাঁদের মূল দাবি, পূর্বে প্রাপ্ত চাকরি বাতিল হওয়া অন্যায়। আদালতের পর্যবেক্ষণ মেনেই তাঁরা নতুন করে মূল্যায়নের দাবি জানিয়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে বসেছিলেন। কিন্তু সেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেই প্রশাসনের এই কড়া পদক্ষেপ প্রশ্ন তুলছে অনেকের মনে।

চিন্ময়ের মতো আরও অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, “আমরা কি তবে এই দেশের নাগরিক নই? আমাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদও কি অপরাধ হয়ে দাঁড়াল?”
বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে তরজা। রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, “দিদির কথার ওপর ভরসা রাখা উচিত। আন্দোলন যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য না হয়ে দাঁড়ায়।” কিন্তু এই বক্তব্য আন্দোলনকারীদের মনে ভরসা জোগাতে পারছে না। বরং তাঁরা মনে করছেন, তাঁদের কণ্ঠস্বর রোধ করতেই প্রশাসন এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে।

আইনজীবীদের একাংশ বলছেন, “যেখানে আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ, যেখানে কোনও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চোখে পড়েনি, সেখানে এই ধরনের এফআইআর এবং তলব প্রশ্নবিদ্ধ।”

Advertisements

শিক্ষক আন্দোলনকারীরা বারবার দাবি করছেন, তাঁদের হাতে ছিল না কোনও অস্ত্র, তাঁদের ছিল না হিংসার কোনও পরিকল্পনা। তাঁরা শুধু চেয়েছিলেন তাঁদের ন্যায্যতা ফিরে পেতে। সেই চাওয়াকেই এখন যেন অপরাধ বানিয়ে তোলা হচ্ছে।

এই ঘটনাকে ঘিরে রাজ্যজুড়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। সাধারণ নাগরিকদের একাংশ বলছেন, “যদি প্রতিবাদ করাও অপরাধ হয়, তবে গণতন্ত্র কোথায়?”

চাকরিহারাদের আন্দোলন একটি বৃহত্তর প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে—আমাদের সমাজে ন্যায়বিচার কতটা সহজলভ্য? শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের বক্তব্য রাখাও কি আজ নিরাপদ নয়?

শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলনের কী পরিণতি হবে, তা সময় বলবে। তবে এখনই স্পষ্ট, এই ঘটনা শুধু চাকরি হারানো পাঁচজন শিক্ষকের নয়, বরং এটি সমগ্র সমাজের বাকস্বাধীনতা এবং প্রতিবাদের অধিকারের এক কঠিন পরীক্ষা।