বিহার জয়ের পর ‘আপ্লুত’ বঙ্গ-বিজেপিকে সাবধানবানী তথাগতের!

Tathagata -roy-warns-bjp-after-bihar-victory-focus-on-organisation-not-celebration

বিহার বিধানসভা নির্বাচনে এনডিএ–র ঐতিহাসিক জয়ের পর রাজনৈতিক মহলে উৎসবমুখর পরিবেশ স্পষ্ট। বিজেপি (Bengal BJP) শিবিরে যেমন উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে, তেমনই উঠে আসছে সতর্কতার বার্তাও। এই প্রেক্ষাপটেই বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা ও প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায় (Tathagata Roy) সামাজিক মাধ্যমে এক দীর্ঘ পোস্টে দলকে সতর্ক করেছেন। তাঁর মন্তব্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতির প্রেক্ষাপটে তা তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

Advertisements

তথাগত রায়ের বক্তব্য, বিহারে বিজেপির জয় অবশ্যই আনন্দের, তবে এর ফলে আত্মতুষ্টিতে ভোগা বিপজ্জনক হতে পারে। তিনি ২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের উদাহরণ টেনে বলেন, সে সময় লোকসভা নির্বাচনে সাফল্যের উত্তেজনায় দল অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েছিল এবং সংগঠনমূলক প্রস্তুতি দুর্বল ছিল। ফলে তৃণমূল কংগ্রেস বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসে।

   

রায়ের কথায়, “২০১৯ সালের লোকসভা জয়ে আমরা এতটাই আত্মহারা হয়ে পড়েছিলাম যে মনে করেছিলাম পশ্চিমবঙ্গ জয় অনিবার্য। সেই আত্মবিশ্বাসের ফলেই সংগঠন মজবুত করার বদলে প্রদর্শনমূলক প্রচারে জোর দেওয়া হয়েছিল।” তাঁর মতে, পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সেই ভুল থেকে এখনই শিক্ষা নেওয়া জরুরি, কারণ আগামী বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত সময় হাতে কম।

বুথ সংগঠন ও গ্রাউন্ড লেভেল টিম তৈরির পরামর্শ

তথাগত রায় স্পষ্টভাবে বলেছেন, নির্বাচনী সাফল্য ধরে রাখতে হলে বিজেপিকে বুথ কমিটি থেকে শুরু করে অঞ্চল ও জেলা স্তরে শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। তিনি কঠোর ভাষায় উল্লেখ করেছেন, দলের মধ্যে পদলোভ ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বরং অগ্রগতিকে বাধা দিচ্ছে।

তাঁর মতে, শুধু দিল্লির নেতাদের বড় বড় সভা বা প্রচার যথেষ্ট নয়—ভোট জেতার জন্য গ্রাসরুট স্তরের প্রস্তুতি অত্যন্ত জরুরি।

তৃণমূলের সাংগঠনিক শক্তিকে অবমূল্যায়ন নয়

তথাগত রায় ২০২১ সালের প্রেক্ষাপট টেনে বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস ওই সময় নির্বাচনী কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শে সংগঠনকে শিকড় স্তর পর্যন্ত মজবুত করেছিল। পাশাপাশি বিজেপির মধ্যেই তথ্য সংগ্রহের জন্য গুপ্তচর নেটওয়ার্ক তৈরি করে বলে তিনি দাবি করেন। এই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি সতর্ক করেন—প্রতিপক্ষকে হালকাভাবে নিলে ভুলই হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রায়ের এই মন্তব্যে স্পষ্ট যে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক বাস্তবতায় সংগঠিত দলই সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে। তাই তাঁর বক্তব্য বিজেপির অভ্যন্তরীণ সংস্কার ও পুনর্গঠনের একটি পরোক্ষ নির্দেশ।

শুভেন্দু অধিকারীকেই মুখ্যমন্ত্রীপদে সামনে আনার দাবি

তথাগত রায়ের পোস্টে সবচেয়ে আলোচিত অংশটি হলো তাঁর নেতৃত্ব সংক্রান্ত মন্তব্য। তিনি বলেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প হিসেবে জনগণের সামনে পরিষ্কারভাবে একজন নেতাকে তুলে ধরতে হবে। আমার মতে এই মুহূর্তে সেই ব্যক্তি শুভেন্দু অধিকারী।”

Advertisements

তিনি আরও যোগ করেছেন, শুভেন্দু অধিকারী শুধু জনসংযোগেই দক্ষ নন, তিনি ২০২১ সালে নিজস্ব আসনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাজিত করে নজির সৃষ্টি করেছেন। তাই তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী–প্রতিপ্রার্থী হিসেবে সামনে আনলে বিজেপির শক্তি আরও বাড়তে পারে।

তবে তিনি এটিও বলেন যে, দলের অন্যান্য নেতাদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এবং শমীক ভট্টাচার্য বা সুকান্ত মজুমদারদের মতো নেতারা নিজ নিজ ক্ষেত্র দক্ষতার সঙ্গে সামলাচ্ছেন।

আসন্ন নির্বাচন—সময় কম, চ্যালেঞ্জ বেশি

তথাগত রায়ের মতে, আগামী পাঁচ মাস পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁকে উদ্ধৃত করে বলা যায়, “রাতারাতি সংগঠন গড়ে ওঠে না। এখনই পরিকল্পনা ও কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন।”

তিনি তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থনৈতিক সমস্যার প্রসঙ্গ তুলেছেন এবং বলেছেন জনগণের অসন্তোষকে সঠিক দিশা দিতে হবে। কিন্তু সেই ক্ষোভ সংগঠিত রাজনৈতিক শক্তির মাধ্যমে প্রকাশ পেলে তবেই নির্বাচনে ফল আসবে।

রাজনৈতিক মহলের প্রতিক্রিয়া

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তথাগত রায়ের বক্তব্য বিজেপির ভেতরকার বাস্তব পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে। কিছু পর্যবেক্ষকের মতে, দীর্ঘদিন রাজনীতিতে যুক্ত থাকা রায়ের অভিজ্ঞতা এবং পূর্বের নির্বাচনের বিশ্লেষণ দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা হতে পারে।

তবে বিরোধীরা বলছে, এই মন্তব্যে প্রমাণ হচ্ছে বিজেপির অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা আরও বেড়েছে। বিজেপির অনেক কর্মীও বলছেন, রায়ের কথায় বাস্তবতা আছে এবং এখনই সংগঠন শক্তিশালী করার সময়।