তারকেশ্বর শ্রাবণী মেলা ২০২৫: মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে প্রস্তুতি তুঙ্গে, জেলা প্রশাসনের নয়া উদ্যোগ

চন্দননগর: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা মেনেই জোরকদমে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে তারকেশ্বরের ঐতিহ্যবাহী শ্রাবণী মেলাকে (Tarakeswar Shravani Mela) ঘিরে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও বিভিন্ন দপ্তরের…

তারকেশ্বর শ্রাবণী মেলা ২০২৫: মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে প্রস্তুতি তুঙ্গে, জেলা প্রশাসনের নয়া উদ্যোগ

চন্দননগর: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা মেনেই জোরকদমে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে তারকেশ্বরের ঐতিহ্যবাহী শ্রাবণী মেলাকে (Tarakeswar Shravani Mela) ঘিরে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও বিভিন্ন দপ্তরের শীর্ষ আধিকারিকদের একাধিক বৈঠকে উঠে এসেছে একগুচ্ছ কার্যকরী পরিকল্পনা। মূল লক্ষ্য, পুণ্যার্থীদের নির্বিঘ্ন যাত্রা ও মেলাকে রাজ্যের অন্যতম ধর্মীয় উৎসবে পরিণত করা।

বৈঠক সূত্রে জানা গিয়েছে, এবছর ১০ জুলাই থেকে শুরু হবে শ্রাবণী মেলা (Tarakeswar Shravani Mela)। তার আগেই, ৮ জুলাই তারিখে রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী — অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, পুলক রায় ও বেচারাম মান্না — পরিদর্শন করবেন বৈদ্যবাটি থেকে তারকেশ্বর পর্যন্ত যাত্রাপথ। তাদের সঙ্গে থাকবেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিক ও জরুরি পরিষেবার প্রতিনিধিরা।

   

প্রতিবছরের মতোই, লাখ লাখ ভক্ত বৈদ্যবাটির নিমাইতীর্থ ঘাট থেকে গঙ্গার জল সংগ্রহ করে প্রায় ৩৭ কিমি পথ হেঁটে পৌঁছবেন তারকেশ্বরের (Tarakeswar Shravani Mela) তারকনাথ মন্দিরে। সেই জল ঢালা হয় শিবলিঙ্গে, যা শ্রাবণ মাসে বিশেষ পুণ্যফলদায়ী বলে মনে করা হয়।

জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর পুণ্যার্থীদের জন্য গরম ও ঠান্ডা জলের জলসত্র তৈরি করবে। পাশাপাশি, পূর্ত দপ্তর মেলার আগেই সংস্কার করেছে বৈদ্যবাটি-তারকেশ্বর রাস্তা। ভক্তদের যাত্রাপথে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে ১৫০ মিটার অন্তর অন্তর বসানো হচ্ছে ৩০০-র বেশি অস্থায়ী ডাস্টবিন। প্রতিটি পঞ্চায়েত নিজ নিজ এলাকার দায়িত্বে আলো ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা করবে।

বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অনলাইনে আবেদন করে তাদের ভাণ্ডারের অনুমতি নিতে পারবে। এছাড়া, ওয়েবসাইট মারফত মেলার গাইড ম্যাপ, মন্দিরের তথ্য এবং যোগাযোগের বিশদ বিবরণ পাওয়া যাবে।

পথের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলিতে যেমন বৈদ্যবাটি ও কামারকুণ্ডু রেলগেট, সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ ও জিআরপি মোতায়েন করা হবে। হুগলি গ্রামীণ ও কমিশনারেটের পুলিশ ওয়াচ টাওয়ার থেকে নজরদারি চালাবে। পূর্ব রেল বিশেষ ট্রেন চালানোর ঘোষণা করেছে যাতে পুণ্যার্থীদের যাতায়াত আরও সহজ হয়।

Advertisements

তারকেশ্বরের মন্দির (Tarakeswar Shravani Mela) কলকাতা থেকে প্রায় ৫৬ কিমি দূরে অবস্থিত। হাওড়া থেকে ট্রেনে ঘণ্টা দেড়েকের পথ। তারপরে কিছুটা পথ পায়ে হেঁটে পৌঁছতে হয় বিখ্যাত শিবমন্দিরে, যেখানে বাবা তারকনাথ বিরাজমান।

মন্দির সংলগ্ন রয়েছে ‘শিবগঙ্গা’ বা দুধপুকুর। কালীমাতা মন্দির ও মোহন্ত মহারাজের আশ্রম রয়েছে পার্শ্ববর্তী এলাকাতেই। শ্রাবণ মাসে এখানে জল ঢাললে মনোবাসনা পূর্ণ হয়—এই বিশ্বাসই লাখো পুণ্যার্থীর আকর্ষণের কেন্দ্র।

ষোড়শ শতকে বিপ্রদাস তাঁর ‘মনসা মঙ্গল’ কাব্যে নিমাইতীর্থ ঘাটের উল্লেখ করেছিলেন। কিংবদন্তি অনুযায়ী, শ্রীচৈতন্য স্বয়ং এই ঘাটে এসেছিলেন। এই ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব মেলাকে আরও গৌরবান্বিত করে তুলেছে।

শেষ কথা, বেচারাম মান্না বলেন, “শ্রাবণী মেলা (Tarakeswar Shravani Mela) আজ আর শুধু তারকেশ্বর বা হুগলির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। মুখ্যমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় একে গঙ্গাসাগরের মতো আন্তর্জাতিক স্তরে তুলে ধরার চেষ্টা চলছে। আগেকার দিনের অন্ধকার রাস্তা ও দুর্দশা আজ অতীত।” এই বছরের শ্রাবণী মেলা রাজ্যের ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে আবারও হয়ে উঠতে চলেছে এক গর্বের উৎসব।