তারকেশ্বর: শ্রাবণী মেলা (Tarakeswar Shrabani Mela) মানেই লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর ভিড়, গঙ্গাজল কাঁধে নিয়ে দীর্ঘ পদযাত্রা, তারকেশ্বর মন্দিরে শিবের পুজো। এই ঐতিহ্যবাহী মেলায় এবার যুক্ত হচ্ছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। এই প্রথমবারের মতো পুণ্যার্থীদের জন্য চালু হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট, যেখানে মেলার প্রায় সবরকম তথ্য এক ছাঁদের তলায় মিলবে। জল ঢালার সময়, ট্রেন-বাসের সময়সূচি, শৌচালয়ের অবস্থান, পানীয় জলের ব্যবস্থা, চিকিৎসা কেন্দ্র, এমনকি কোথায় বিনামূল্যে খাবার পাওয়া যাবে – সব কিছু জানতে এবার শুধুই প্রয়োজন একটি স্মার্টফোন।
আগামীকাল, অর্থাৎ ১০ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে এবারের শ্রাবণী মেলা (Tarakeswar Shrabani Mela), চলবে ১৮ অগস্ট পর্যন্ত। তার আগে মঙ্গলবার পর্যটন দফতরের সভাকক্ষে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসে রাজ্য সরকার। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের সাতজন মন্ত্রী – অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সুজিত বসু, পুলক রায়, বেচারাম মান্না, স্নেহাশিস চক্রবর্তী ও ইন্দ্রনীল সেন। এছাড়াও ছিলেন হুগলি জেলার জেলাশাসক মুক্তা আর্য, এসডিও, বিভিন্ন সরকারি দফতরের আধিকারিকরা এবং স্থানীয় বিধায়করা।
বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল মেলা ঘিরে সার্বিক প্রস্তুতি ও আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয়। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয় এই মেলায়, তাই শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে মেলা সম্পন্ন করতে প্রতিটি দফতরের সহযোগিতা প্রয়োজন।”
তারকেশ্বর শহরের রাস্তাগুলি সরু। পুণ্যার্থীর সংখ্যা বাড়লে সমস্যা আরও জটিল হয়। হুগলি গ্রামীণ জেলার পুলিশ সুপার জানান, নিরাপত্তার দিকটি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। ভিড় নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন থাকবে বিশেষ বাহিনী। পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদেরও সহমর্মিতা ও সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়েছে।
মন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, “রাজ্যের ১৬টি ঘাট থেকে গঙ্গাজল সংগ্রহ করে পুণ্যার্থীরা যাত্রা শুরু করেন। সেই যাত্রাপথে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। গঙ্গার ধারে বসানো হয়েছে জাল, যাতে কেউ দুর্ঘটনাবশত জলে পড়ে না যান।”
প্রযুক্তির সাহায্যে এবার মেলা আরও সংগঠিত ও সহজ হতে চলেছে। নতুন ওয়েবসাইটে থাকবে লাইভ আপডেট, জরুরি নম্বর, রুট ম্যাপ, মেডিক্যাল হেল্প ডেস্ক, এবং ট্রাফিক নির্দেশনাও। অনেকাংশে এই ওয়েবসাইট পুণ্যার্থীদের জন্য ডিজিটাল গাইড হিসেবেই কাজ করবে।
পরিবহণ ব্যবস্থাকেও ঢেলে সাজানো হয়েছে। তারকেশ্বর থেকে ধর্মতলা, বালি ব্রিজ ও হাওড়াগামী অতিরিক্ত সরকারি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি রেল কর্তৃপক্ষকেও অনুরোধ করা হয়েছে রাতভর বিশেষ ট্রেন চালু রাখার জন্য।
এক কথায় বলা যায়, এবার শ্রাবণী মেলায় পুণ্যার্থীদের অভিজ্ঞতা আগের থেকে অনেক বেশি আরামদায়ক ও সুরক্ষিত হতে চলেছে। ধর্মীয় ভক্তি ও আধুনিক প্রযুক্তির যুগলবন্দীতে তারকেশ্বরের শ্রাবণী মেলা পাচ্ছে নতুন মাত্রা। এখন শুধু দিন গোনা শুরু – ভগবান শিবের আশীর্বাদ নিতে প্রস্তুত রাজ্যের লাখো মানুষ।