নিজস্ব সংবাদদাতা, তমলুক: আরজিকর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় যখন উত্তাল গোটা রাজ্য, ঠিক সেই সময় পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের ডহরপুর তপসিলি হাইস্কুলে সামনে এল চাঞ্চল্যকর ঘটনা। অভিযোগ, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এই উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেবদুলাল দাস ছাত্রীদের উপর শ্লীলতাহানি, কুরুচিকর মন্তব্য এবং যৌন হেনস্থা চালিয়ে আসছিলেন। এদিন ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও স্থানীয়রা প্রধান শিক্ষককে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান এবং শেষমেশ পুলিশ এসে তাকে গ্রেপ্তার (Principal Arrested) করে নিয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বিদ্যালয়ে নবম থেকে একাদশ শ্রেণির বহু ছাত্রী অভিযোগ করেছে, পড়াশোনার অজুহাতে প্রধান শিক্ষক তাদের একান্তে ডেকে কোলে বসিয়ে কুপ্রস্তাব দিতেন, শরীরে অশ্লীলভাবে স্পর্শ করতেন এবং একাধিকবার গাল টিপতেন। শুধু তাই নয়, কেউ বাথরুমে গেলে সেখানেও প্রধান শিক্ষক উপস্থিত থাকতেন বলে অভিযোগ। এই ধরনের ঘটনার কারণে গত দুই বছরে প্রায় ডজনখানেক ছাত্রী অন্য স্কুলে ভর্তি হতে বাধ্য হয়েছে।
সোমবার দুপুরে ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জড়ো হয়ে প্রধান শিক্ষককে অফিস থেকে টেনে বের করে এনে বিক্ষোভে সামিল হন। “প্রধান শিক্ষক এই স্কুলে চাই না” — এই স্লোগানে মুখরিত হয় বিদ্যালয় চত্বর। পরিস্থিতি ক্রমে উত্তপ্ত হতে থাকলে তমলুক থানার পুলিশ ও স্থানীয় কাউন্সিলর দেবশ্রী দাস মাইতি ঘটনাস্থলে পৌঁছান।
বিক্ষোভকারী অভিভাবক শ্রাবণী দলুই বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে এই শিক্ষক ছাত্রীদের গায়ে হাত দিচ্ছে, বাথরুমে দাঁড়িয়ে থাকছে। স্কুলে যদি এভাবে হয়, রাস্তায় আমাদের মেয়েরা কীভাবে নিরাপদ থাকবে?” তিনি আরও জানান, “প্রধান শিক্ষককে সরানো না হলে আমরা মেয়েদের অন্য স্কুলে ভর্তি করব।”
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তমলুক মহকুমা পুলিশ আধিকারিক আফজাল আবরার জানান, “ছাত্রীর অভিভাবক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। আমরা অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছি এবং হাসপাতালে পরীক্ষা করানো হয়েছে। আপাতত তিনি সুস্থ রয়েছেন। ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।”
বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষিকা সঙ্গীতা নায়ক বলেন, “ছাত্রীদের অভিযোগের পরেই স্কুল চত্বর উত্তাল হয়ে ওঠে। তমলুক থানায় অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে এবং প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।”
স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর দেবশ্রী দাস মাইতি বলেন, “যদি দোষী প্রমাণিত হয়, তবে আইন অনুযায়ী শাস্তি পেতে হবে। আমি ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের পাশে রয়েছি।” তিনি আরও জানান, এর আগে অনেক অভিভাবক মৌখিকভাবে অভিযোগ করলেও লিখিত অভিযোগ না থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এই ঘটনায় তমলুক জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। একদিকে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোতে নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ, অন্যদিকে শিক্ষাঙ্গনেই যৌন হেনস্থার অভিযোগ—দু’টি ঘটনাই মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করেছে। এখন দেখার, আইনের পথে এই ঘটনার সঠিক বিচার কত দ্রুত হয়।