কাঁথিতে তৃণমূলের ঝটিকা দখল, শুভেন্দুকে হুঁশিয়ারি যুবনেতার

মিলন পণ্ডা, কাঁথি: শুভেন্দু অধিকারীর গড় পূর্ব মেদিনীপুর কাঁথিতে সময়সীমার অনেক আগেই বিজেপি পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করল শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। কাঁথি ১ ব্লকের…

কাঁথিতে তৃণমূলের ঝটিকা দখল, শুভেন্দুকে হুঁশিয়ারি যুবনেতার

মিলন পণ্ডা, কাঁথি: শুভেন্দু অধিকারীর গড় পূর্ব মেদিনীপুর কাঁথিতে সময়সীমার অনেক আগেই বিজেপি পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করল শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। কাঁথি ১ ব্লকের হৈপুর গ্রাম পঞ্চায়েত গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ নিয়ে দখল করেছিল বিজেপি। মাত্র ২ বছর কম সময়ের মধ্যে বিজেপি পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অশোক সামন্ত সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক (বিডিও) কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দেন।

এরপর গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করতে প্রক্রিয়া শুরু করে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। বুধবার ভোটাভুটিতে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা এবার প্রধান পদে শপথ নেন নিতাই দাস। শুভেন্দু’র গড় কাঁথিতে বিজেপি থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত ছিনিয়ে নেওয়ার পর কার্যত হুঁশিয়ারি দেন তৃণমূলের যুবনেতা সুপ্রকাশ গিরি। ২৬ শে বিধানসভা নির্বাচনে জেলা থেকে বিজেপিকে উৎখাত করার দাগ দেন যুবনেতা। শুভেন্দু জেলায় একের পর এক গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে সমবায় সমিতি হাতছাড়া রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। তাহলে কি বিধানসভা নির্বাচনে একুশের থেকে আসন কমে যাবে বিজেপির এমনই প্রশ্ন উঠতে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে!

   

পদত্যাগ করা নিয়ে কার্যত বিজেপি দলীয় নেতৃত্বের গোষ্ঠীকোন্দলকে দায়ী করেছেন বিদায়ী প্রধান। যদিও পাল্টা বিজেপি জেলা নেতৃত্বরা শাসক দলের মিথ্যা মামলা ও ফাঁসানোর নিজেদের দলে অনার অভিযোগ এনেছেন। পাল্টা অভিযোগে কার্যত কাঁথির রাজনীতিতে সরগরম।

জানা গিয়েছে, গত ২৩ শে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কাঁথি ১ ব্লকের হৈপুর গ্রাম পঞ্চায়েত ২৩ টি আসন। বিজেপির ঝুলিতে যায় ১২ টি আসন। তৃণমূলের ঝুলিতে যায় ১১ টি আসন। সংখ্যাগরিষ্ঠ দিক থেকে এগিয়ে থাকার ফলে বিজেপি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করে। পঞ্চায়েতের প্রধান হিসেবে শপথ নেন অশোক সামন্ত। উপপ্রধান হিসেবে শপথ নেন বিজেপি প্রতিকে জেতা হিমাংশু শেখর দলাই। কিন্তু মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে তেডুবি গ্রাম সংসদ থেকে বিজেপির প্রতিকে জেতা তনুশ্রী জানা বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগদান করোন। এরফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ দিক থেকে বিজেপি থেকে এগিয়ে যায় তৃণমূল।

তৃণমূল ১২ টি ও বিজেপি ১১ আসন হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ দিক থেকে এগিয়ে গেলেও পঞ্চায়েত নির্বাচনে আড়াই বছর না হওয়া পর্যন্ত প্রধানের থেকে যান অশোক সামন্ত। কিন্তু শাসক দল স্থায়ী সমিতি ও সঞ্চালক নিজেদের দখলে রাখে। এরমাঝে হৈপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন খুলনেশ্বরী গ্রামে সরকারি গাছ চুরির অভিযোগ উঠে।

জনৈক্য এক স্থানীয় বাসিন্দা কাঁথি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। নাম জড়ায় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অশোক সামন্ত, খুলনেশ্বরী সংসদ বিজেপি সদস্য সুকন্যা জানা সহ তো অনেকেই। তদন্তে নেমে পুলিশ সুকন্যা জানা স্বামী অনন্ত জানা’কে গ্রেফতার করে। অভিযোগ থাকায় বেপাওা হয়ে যায় প্রধান অশোক সামন্ত। হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়ে মুক্তি পান। যদিও এখন এই মামলা বিচারাধীন।

গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সহ একাধিক দুর্নীতি নিয়ে সরব হন গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরোধী তথা রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। এদিকে দলের নেতাদের অসহযোগিতায় কোপে পড়েন প্রধান অশোক সামন্ত। কাঁথি ১ ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক (বিডিও) অমিতাভ বিশ্বাসের কাছে গত ২৩ মে ইস্তফা পত্র জমা দেন প্রধান অশোক সামন্ত। ৩ জুন প্রধানের এই ইস্তাফা পত্র গ্রহণ করেন বিডিও।

তারপরেই পঞ্চায়েত দখল করতেই প্রক্রিয়া শুরু করে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। বুধবার প্রধান পদে বসার জন্য পঞ্চায়েত অফিসের ভোটাভুটি হয়। তৃণমূলের ১২ জন সদস্য উপস্থিত হন, বিজেপি ১০ জন সদস্য উপস্থিত হন। ভোটাভুটিতে প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন নিতাই দাস। তারপরেই আবির খেলাতে মেতে উঠেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরা।

কাঁথি ১ ব্লকের হৈপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নিতাই দাস বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর ফলাফল বিজেপি ছিল ১২ টি আসন, আমরা (তৃণমূল ) ১১ টি আসন। নির্বাচনের ছয় মাসের মধ্যে বিজেপির একজন পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলে যোগদান করেন। তারপরেই আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করি। মুখ্যমন্ত্রী নিয়ম করেছিল পঞ্চায়েত আড়াই বছর থাকতে পারবে, সেই জন্য আমরা পঞ্চায়েতে আমরা বোর্ড গঠন করতে পারিনি। স্থায়ী সমিতি থেকে সঞ্চালক আমাদের দখলে থাকে। তারপরেই কোনোভাবে পঞ্চায়েত চালাতে পারছিল না। মানুষের ঠিক মতন পরিষেবাও দিচ্ছিল না৷”

Advertisements

তিনি আরও বলেন, “বিজেপির প্রধান, উপপ্রধান থেকে একাধিক বিজেপি প্রতীকে জেতা পঞ্চায়েত সদস্যই নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা নিয়ে গণ্ডগোল শুরু হয়েছিল। বাধ্য হয়ে প্রধান পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। আগামী দিনে এই পঞ্চায়েত কিভাবে উন্নয়ন ও অগ্রগতি করা যায় সচেষ্ট হবো। পঞ্চায়েতে আসার আগে ৮ কোটি টাকার কাজ করেছিলাম৷”

যদিও গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি’র প্রতীক উপপ্রধান রয়েছেন। তার উত্তরে নিতাইবাবু বলেন, “আড়াই বছর পর ওই উপপ্রধানে বিরুদ্ধে আমরা অনাস্থা ডাকবো। কারণ আমাদের সংখ্যা বেশি। প্রধানের সঙ্গে উপপ্রধান পদত্যাগ করতে পারত৷”

পদত্যাগ করার কারণ দলীয় গোষ্ঠীকোন্দল দায়ী করেছেন বিদায়ী প্রধান। কাঁথি ১ ব্লকের হৈপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান অশোক সামন্ত বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে বিজেপির এক পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলে যোগদান করেছিল। দলের গোষ্ঠীকোন্দল রয়েছে। দলীয় কিছু নেতৃত্ব অসহযোগিতার রয়েছে। খুবই অসম্মানিত বোধ করেছি তাই আমি পদত্যাগ দিয়েছি। দলের রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েও কোন সুফল মেলেনি৷” কিছুটা আক্ষেপ সুরে বলেন, “জনগণের পরিষেবা দেওয়ার জন্যই প্রধান পদে বসে ছিলাম। দলের চক্রান্ত ষড়যন্ত্রের শিকার হলাম৷”

হৈপুর গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করার পর কার্যত বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে নিশানা করেন। কাঁথি সাংগঠনিক জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি তথা কাঁথি পুরসভার পুরপ্রধান সুপ্রকাশ গিরি বলেন, “মাত্র একটি আসনে পিছিয়ে ছিলাম। নিয়মমাফিক তারা পঞ্চায়েত দখল করেছিল। দু বছরের মধ্যে তিনি পঞ্চায়েত পরিচালনা করতে পারেননি। যিনি প্রধান ছিলেন যিনি মানুষের উন্নয়নের টাকা চুরি করেছেন। মাত্র দু বছরে ভারতীয় জনতা পার্টি পরিচালিত পঞ্চায়েত দুর্নীতি করেছে বাধ্য হয়েছেন তিনি পদত্যাগ করতে। গাছ চুরি থেকে বিভিন্ন প্রকল্পে চুরি করেছেন। মানুষকে প্রকল্প দেয়নি৷”

কার্যত পঞ্চায়েত দখল করে শুভেন্দু অধিকারীকে নিশানা করেন যুবনেতা সুপ্রকাশ গিরি। তিনি বলেন, “এরা নাকি সরকার দখল করবে! যারা দু’বছর পঞ্চায়েত চালাতে পারেনা। হৈপুর গ্রাম পঞ্চায়েত দিয়ে শুরু করলাম, শুভেন্দু অধিকারী তৈরি থাকো? এখনও তিন বছর বাকি আছে, কিভাবে উন্নয়ন করতে হয় দেখিয়ে দেব”।

কটাক্ষ সুরে বলেন, “সাংসদ থেকে বিধায়ক থাকার পরও মানুষের কোন উন্নয়ন করতে পারেনি৷” পঞ্চায়েতে উপপ্রধান পদত্যাগ না করা নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, “নৈতিকভাবে তিনি থাকতে পারেন না। কারণ প্রধান চলে গিয়েছে, সঞ্চালক চলে গিয়েছে। পদের জন্য তিনি বসে রয়েছেন। যদি মানবিকতা থাকে, তাহলে আমাদের দলে আসুন, যদি লজ্জা থাকে আজকে পদত্যাগ করুন৷”

প্রধানের পদত্যাগ নিয়ে কার্যত তৃণমূল নেতাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ও হুমকি অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি জেলা নেতৃত্বরা। কাঁথি সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি সোমনাথ রায় বলেন, “তৃণমূল নেতৃত্বরা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানকে নানাভাবে ধমক ও হুমকি দিয়েছেন। মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছেন। তৃণমূলের নেতারা প্রধানকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছে। দু-একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি যেতে পারে, কিন্তু আমাদের ভোটার রয়েছে৷”