হিন্দু গণহত্যা স্মরণে পদযাত্রায় শুভেন্দু, মেরুকরণের চেষ্টা দাবি তৃণমূলের

শনিবার কলকাতার কলেজ স্কোয়ারে ১৯৪৬ সালের ‘দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস’-এর ৭৯তম বার্ষিকী স্মরণে একটি পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে (Suvendu)। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর(Suvendu Adhikari) নেতৃত্বে এই…

Suvendu rally

শনিবার কলকাতার কলেজ স্কোয়ারে ১৯৪৬ সালের ‘দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস’-এর ৭৯তম বার্ষিকী স্মরণে একটি পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে (Suvendu)। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর(Suvendu Adhikari) নেতৃত্বে এই পদযাত্রা হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর ঘটে যাওয়া গণহত্যার নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশ্যে আয়োজিত।

তবে তৃণমূল এই মিছিলকে রাজনৈতিক মেরুকরণের একটি নতুন অধ্যায় হিসেবে কটাক্ষ করেছে। বিজেপি এই ঘটনাকে ‘হিন্দু গণহত্যা’ হিসেবে তুলে ধরে ধর্মীয় বিভাজনের বিষয়টিকে সামনে আনার চেষ্টা করছে, অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস এই পদযাত্রাকে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির প্রচেষ্টা হিসেবে সমালোচনা করেছে। এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে রাজনৈতিক চাপানউতোরকে আরও তীব্র করেছে।

   

১৯৪৬ সালের ১৬ই অগস্ট মুসলিম লিগের ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে’-র ডাকের পর কলকাতায় ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটে । এই হিংসায় প্রায় ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন, যার মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর ব্যাপক আক্রমণ হয়েছিল। এই ঘটনা ভারতের বিভাজনের পথকে ত্বরান্বিত করেছিল এবং ইতিহাসে একটি অন্ধকার অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত।

শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে এই পদযাত্রা এই ঘটনাকে ‘হিন্দু গণহত্যা’ হিসেবে উপস্থাপন করে বিজেপির হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডাকে শক্তিশালী করার প্রয়াস হিসেবে দেখছে ঘাসফুল বাহিনী। পদযাত্রায় বিজেপি নেতা-কর্মীরা গোপাল মুখোপাধ্যায় ওরফে ‘গোপাল পাঁঠা’র সাহসিকতার কথা তুলে ধরেন, যিনি এই হিংসার সময় হিন্দু সম্প্রদায়কে রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “আমরা ইতিহাসের সত্যকে তুলে ধরছি। ১৯৪৬ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নৃশংস হামলা হয়েছিল, এবং গোপাল পাঁঠার মতো বীররা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। এই পদযাত্রা সেই শিকারদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধের প্রতিজ্ঞা।” তবে, বিজেপির এই পদক্ষেপকে তৃণমূল সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে।

তৃণমূল কংগ্রেস এই পদযাত্রার তীব্র সমালোচনা করেছে। তারা বলছে “বিজেপি ইতিহাসকে বিকৃত করে হিন্দু-মুসলিম বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করছে। ১৯৪৬ সালের হিংসায় হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। শুভেন্দু অধিকারী এই পদযাত্রার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়াতে চাইছেন।”

Advertisements

তারা আরও অভিযোগ করেন, বিজেপি এই ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি করছে। তৃণমূলের দাবি, এই পদযাত্রা বাংলার সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে ক্ষুণ্ন করতে পারে।

এই পদযাত্রা পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে চলমান রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে আরও তীব্র করেছে। বিজেপি তাদের হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডার মাধ্যমে হিন্দু ভোটারদের একত্রিত করার চেষ্টা করছে, বিশেষ করে এমন একটি সময়ে যখন দ্য বেঙ্গল ফাইলস সিনেমা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। এই সিনেমাও ১৯৪৬ সালের হিংসার উপর ভিত্তি করে তৈরি, এবং তৃণমূল এটিকে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের হাতিয়ার হিসেবে দেখছে।

সাধারণ মানুষের মধ্যে এই পদযাত্রা মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কেউ কেউ এটিকে ইতিহাসের একটি বেদনাদায়ক অধ্যায় স্মরণ করার প্রয়াস হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ মনে করেন এটি বর্তমান সময়ে ধর্মীয় বিভাজনকে উস্কে দিতে পারে। বিশেষ করে, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এই ধরনের আয়োজন রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।

১ সেপ্টেম্বর থেকে BMW গাড়ির দামে আসছে বিরাট বদল, কেনার খরচ কত হচ্ছে?

১৯৪৬ সালের ‘গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস’-এর স্মরণে শুভেন্দু অধিকারীর পদযাত্রা ইতিহাসের একটি অন্ধকার অধ্যায়কে পুনরুজ্জীবিত করলেও, এটি পশ্চিমবঙ্গে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতিকে আরও জটিল করেছে। বিজেপি এই ঘটনাকে হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডার অংশ হিসেবে ব্যবহার করছে, যখন তৃণমূল এটিকে সম্প্রীতি নষ্টের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে। এই দ্বন্দ্ব বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে, এবং এর প্রভাব আগামী নির্বাচনে দেখা যেতে পারে।