২৬-এর বিধানসভায় ভোটই দিতে পারবেন না শুভেন্দু? নতুন আইনের দাবি বিরোধী দলনেতার

লোকসভা নির্বাচনের পর শুভেন্দু অধিকারীকে কার্যত এই প্রথমবার সমস্ত নেতৃত্বের সঙ্গে একসাথে দেখা গেল। সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিজেপির বর্ধিত কার্যকরণী সভা। আর সেখানেই…

calcutta high court did not allow suvendu adhikari to sit on dharna in front of raj bhavan , শুভেন্দু অধিকারীকে রাজভবনের সামনে ধরনায় বসার অনুমতি দিল না কলকাতা হাইকোর্ট

লোকসভা নির্বাচনের পর শুভেন্দু অধিকারীকে কার্যত এই প্রথমবার সমস্ত নেতৃত্বের সঙ্গে একসাথে দেখা গেল। সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিজেপির বর্ধিত কার্যকরণী সভা। আর সেখানেই নিজের ভবিষ্যৎ রাজনীতির ব্লু প্রিন্ট তুলে ধরলেন রাজ্যের বিরোধী দল নেতা। মঞ্চে উপস্থিতবঙ্গ বিজেপির তাবড় নেতৃত্ব। উপস্থিত ছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনশলও। তাঁদের সামনেই বিরোধী দল নেতা বলেন যে আগামী বিধানসভা তে হয়তো তিনি ভোটই দিতে পারবেন না। শুভেন্দু (Suvendu Adhikari) তাঁর নিজের বর্তমান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের যৌক্তিকতা বোঝাতে চাইলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সামনে? বিশেষজ্ঞরা সেরকমই ইঙ্গিত পাচ্ছেন শুভেন্দুর বক্তব্যে।

মঞ্চে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু বলেন – “অনেক দূরে পৌঁছে গেছি আমরা। আমার সংগঠনের ব্যাপারে যা বক্তব্য ছিল সুনীলজীকে দিল্লিতে গিয়ে জানিয়ে এসেছি ওয়ান টু ওয়ান। উনি আমাকে ওনার প্রেশিয়াস ৪৫ মিনিট দিয়েছেন। বাংলাকে কি করে বাঁচাতে হবে? যশস্বী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহজী তাঁর বাড়িতে আমাকে ৪৫ মিনিট টাইম দিয়েছেন। আমি বলে এসেছি”।

   

কোথাও না কোথাও গিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সঙ্গে তাঁর যথেষ্ট হৃদ্যতা রয়েছে, সেটাই কি বুঝিয়ে দিতে চাইলেন শুভেন্দু? তারপরেই তাঁর বিস্ফোরক উক্তি “এই যে আমার হাতে আপনারা কালি দেখছেন না? ২৬ শে হয়তো আমাকেও ভোট দিতে দেবেনা।” আর এরপরই ভোট পরবর্তী হিংসা এবং উপনির্বাচনের ভোট দিতে না দেওয়াকে নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন শুভেন্দু।

শুভেন্দুর বিস্ফোরক অভিযোগ যে তিনি হিন্দু বলেই তাঁকে ভোট দিতে দেওয়া হবে না। শুভেন্দুর আরও দাবী যে, ৫০ জন জিহাদিকে হয়ত তার বাড়ির সামনে বসিয়ে রাখা হবে। এরপরই মানিকতলায় ভোটের দিন তৃণমূলের রিগিং, ছাপ্পা নিয়ে অভিযোগ করেন শুভেন্দু । রায়গঞ্জ, বাগদায় হিন্দুদেরকে ভোট দিতে যেতে দেওয়া হয়নি, এরকম মারাত্মক অভিযোগও করেন শুভেন্দু। শাসকদলের মুসলিম তোষণ নিয়ে রীতিমতন হুঁশিয়ারি দিতে দেখা যায় শুভেন্দুকে।

তবে শুভেন্দুর স্পষ্ট বক্তব্য যে তিনি হাল ছাড়ছেন না। বরং রাজ্যের শাসকদলকে পরিষ্কার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নতুন আইনের। সায়েন্স সিটির অডিটোরিয়ামের মঞ্চে দাঁড়িয়ে শুভেন্দুর মুখে এদিন এক বিশেষ আইনের কথা শোনা গেল। শুভেন্দুর দাবি যে আগামী দিনে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে এপিক কার্ড দেখার ক্ষমতা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি ইতিমধ্যেই এই নিয়ে তাঁর কাজ শুরু করে দিয়েছেন। শুভেন্দু দাবি করেন, আগামী দিনে ‘উপদ্রুত এলাকা আইন’ জারি করে যাতে পশ্চিমবঙ্গে ভোট হয় তার ব্যবস্থা তিনি করছেন। শুভেন্দু বলেন, ইতিমধ্যেই রাজ্যপালের সাথে তিনি কথা বলেছেন। ইলেকশন কমিশনের আধিকারিকদের সঙ্গেও এই বিষয়ে মিটিং করতে চান তিনি।

অর্থাৎ ভোটে খারাপ ফলাফলের দায় প্রকারান্তরে তৃণমূলের রিগিংয়ের উপরেই ঠেলেছেন শুভেন্দু। সেই সঙ্গে এই নিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্লু প্রিন্ট জানিয়ে দলকেও পরিষ্কার বার্তা দিতে চেয়েছেন তিনি এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের। একদিকে সংগঠন নিয়ে নিজের বার্তা পৌঁছে দেওয়া, অপরদিকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সর্বোচ্চ স্তরে কথা। শুভেন্দু যে রীতিমত পরিশ্রম করছেন তাঁর প্রমাণ দিতে চাইছেন প্রতিপদে।

শুভেন্দু যখন এই ঘোষণা করছেন মঞ্চে দাঁড়িয়ে, তখন সেই মঞ্চেই উপস্থিত কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। বর্তমানে তিনি রাজ্যের সভাপতিও বটে। গত কয়েকদিনে বিজেপির বিভিন্ন বৈঠকে নাম না করে শুভেন্দুর সমালোচনা করেছেন তিনি। এমনটাই অনেকে মনে করছেন। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ঘুরিয়ে সুকান্তকেও বার্তা দিলেন শুভেন্দু? বিজেপির অনেক নেতাদের মতে এ কার্যত হওয়ারই ছিল। তবে হারের কারণ নিয়ে খোলা মঞ্চে মিডিয়ার সামনে তিনি যে কোনও বক্তব্য রাখবেন না, একথা পরিষ্কার করে জানান বিরোধী দলনেতা।

আজকের এই বর্ধিত কার্যকরণী সভায় শুভেন্দু কি বলবেন সেদিকে নজর ছিল অনেকেরই। লোকসভা নির্বাচনের পর কার্যত প্রথমবার এইভাবে সকলের মুখোমুখি হলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। এর আগেও লোকসভায় হারের ময়না তদন্তের বৈঠক হয়েছিল । রুদ্ধদ্বার সেই বৈঠকে শোনা যায়, দিলীপ ঘোষ প্রবল অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে সেই বৈঠকে ছিলেন না শুভেন্দু। আজ এই বৈঠকে মঞ্চে ছিলেন দিলীপও। প্রাক্তন রাজ্য সভাপতিকেও নিজের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কথা শোনালেন শুভেন্দু? সাম্প্রতিক আবহে সেই সম্ভাবনা যথেষ্টই যুক্তিসঙ্গত বলেই মনে করা হচ্ছে ।