তফসিলি জাতির উপরে তৃণমূলী অত্যাচারে বিস্ফোরক শুভেন্দু

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালে তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচারের ঘটনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে (Suvendu Adhikari)। এই বিষয়ের সরব হয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা…

Suvendu Adhikari

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালে তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচারের ঘটনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে (Suvendu Adhikari)। এই বিষয়ের সরব হয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি দাবি করেছেন যে, গত ১৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের শাসনকালে রাজ্যে এক নজিরবিহীন নৈরাজ্য কায়েম হয়েছে।

তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়, যারা দেশের মূলবাসী এবং সংবিধানে যাদের জল, জঙ্গল ও জমির অধিকার দেওয়া হয়েছে, তাদের উপর অত্যাচারের একাধিক ঘটনা সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে। শুভেন্দু অধিকারী এই বিষয়ে পাঁচটি নির্দিষ্ট ঘটনার উল্লেখ করে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছেন।

   

প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৪ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে পুরুলিয়ার বান্দোয়ান হাসপাতালে। এক আদিবাসী মহিলা তাঁর শিশু সন্তানের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গিয়েছিলেন। অভিযোগ, সেখানে এক বিশেষ সম্প্রদায়ের কর্মী তাঁর সঙ্গে শ্লীলতাহানি করেছেন। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটেছে ১৫ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে মেদিনীপুরের চার্চ স্কুল মাঠে।

একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট চলাকালীন প্রাইমারি শিক্ষক ও ফুটবল রেফারি লক্ষ্মণ মান্ডিকে তৃণমূলের এক নেতা সর্বসমক্ষে লাথি মেরে হেনস্থা করেন। তৃতীয় ঘটনায়, একই দিনে, সরকারি শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনরত চাকরিহারা শিক্ষক সুবল সোরেন সেরিব্রাল অ্যাটাকের কারণে মারা যান।

চতুর্থ ঘটনাটি ঘটেছে ১৮ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে ডেবরা ব্লকের লোয়াদা এলাকায়। আদিবাসী যুবক ‘ডাক্তার সোরেন’-কে আবগারি দপ্তর একটি মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করে এবং হেফাজতে থাকাকালীন তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পঞ্চম ঘটনায়, একই দিনে পুরুলিয়ার পাড়া বিধানসভার লোপানিয়া গ্রামে আদিবাসী প্রৌঢ় ধনঞ্জয় মুদি ওরফে ধনু এক বিশেষ সম্প্রদায়ের হাতে আক্রান্ত হন।

শুভেন্দু অভিযোগ করেছেন যে, এই ঘটনাগুলির ক্ষেত্রে প্রতিটি আদিবাসী পরিবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও তারা সঠিক বিচার পায়নি। তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আদিবাসী ও তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের অধিকার হরণ করছে। এই সরকার তাদের উপর পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে দমন ও অত্যাচার চালাচ্ছে।”

তিনি আরও দাবি করেছেন যে, তৃণমূল সরকারের এই নীতি আদিবাসী সমাজের প্রতি বৈষম্যমূলক এবং সংবিধানবিরোধী।বিরোধী দলনেতা আরও জানিয়েছেন যে, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) আদিবাসী ও তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের পাশে রয়েছে এবং তাদের উপর এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই চালিয়ে যাবে।

Advertisements

তিনি বলেন, “এই সরকারকে বিদায় দিয়ে বিজেপি আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মান ফিরিয়ে দেবে।” তিনি এই ঘটনাগুলির সঠিক তদন্ত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।এই অভিযোগগুলি পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।

তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগগুলিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছে। তৃণমূলের মুখপাত্ররা দাবি করেছেন যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য একাধিক প্রকল্প চালু করেছে, যার মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি উন্নয়ন ও অর্থ কর্পোরেশনের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা এবং দক্ষতা প্রশিক্ষণ। তবে, বিরোধীরা বলছেন, এই প্রকল্পগুলি কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে তফসিলি সম্প্রদায়ের মানুষেরা অত্যাচার ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন।

সাম্প্রতিক অতীতে, বগটুই, সন্দেশখালি এবং ভূপতিনগরের মতো ঘটনাগুলিও রাজ্যে তফসিলি সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচারের অভিযোগকে আরও জোরদার করেছে। এই ঘটনাগুলির প্রেক্ষিতে, মানবাধিকার কর্মীরা এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে পুলিশ মন্ত্রী হওয়ায়, বিরোধীরা দাবি করছেন যে, তৃণমূলের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না।

রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি এই পরিস্থিতিতে, আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের অধিকার ও নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠতে পারে। যা রাজ্যের শাসক দলের অস্বস্তির কারণ হতে পারে।

ইডি-সিবিআই অফিসার সেজে প্রতারণা, ডায়মন্ড হারবারে ফাঁস ভুয়ো চক্র, গ্রেফতার পাঁচ

আবার কেউ কেউ বলছেন বিজেপি এই ঘটনাগুলিকে তুলে ধরে জনমত গঠনের চেষ্টা করছে। তবে নির্বাচন যতই এগিয়ে আসবে ততই শাসক বিরোধী তরজা তীব্র হবে, যতদিন না পর্যন্ত ঠিক হবে বাংলার মসনদে পরিবর্তন হবে না প্রত্যাবর্তন।