পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ময়দানে নতুন বিতর্কের ঝড় (Suvendu Adhikari)। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শহীদ মঞ্চের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করে বলেছেন, “দেশের সংবিধানে নির্বাচন কমিশনই সর্বোচ্চ।
নির্বাচন কমিশন যা করবে, তাই হবে। রোহিঙ্গা মুসলিম এবং বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার তালিকায় রাখা হবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজন ‘চোর’, তাঁর ভাইপো একজন ‘চোর’, পুরো পরিবারই ‘চোর’।” শুভেন্দুর এই বিস্ফোরক মন্তব্য রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে।
শুভেন্দুর মন্তব্যের প্রেক্ষাপট
শুভেন্দু অধিকারীর এই বক্তব্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি সাম্প্রতিক মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এসেছে, যেখানে তিনি নির্বাচন কমিশনের কার্যকলাপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। শুভেন্দু দাবি করেছেন, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত এবং তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে অবৈধভাবে ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা মুসলিম এবং বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দল বাংলার রাজনীতিতে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করছে। এটা গণতন্ত্রের প্রতি অপমান।” শুভেন্দুর এই অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তাঁদের ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির অভিযোগকে আরও জোরদার করেছে।
মমতা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে ‘চোর’
অভিযোগশুভেন্দু অধিকারী তাঁর বক্তব্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে ‘চোর’ বলে আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পুরো পরিবার দুর্নীতিতে জড়িত। তারা বাংলার সম্পদ লুট করছে।” তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, তৃণমূল সরকারের আমলে রাজ্যে দুর্নীতি বেড়েছে, এবং মমতার পরিবার এই দুর্নীতির কেন্দ্রবিন্দু।
শুভেন্দু বলেন, “বাংলার মানুষ এই দুর্নীতি আর সহ্য করবে না। আমরা তৃণমূলের এই লুটপাটের রাজনীতির বিরুদ্ধে রাস্তায় নামব।” তাঁর এই মন্তব্য তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিজেপির আক্রমণাত্মক কৌশলের একটি অংশ বলে মনে করা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক
শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্যে নির্বাচন কমিশনের সর্বোচ্চ ক্ষমতার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “সংবিধানে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। কেউ এর বিরুদ্ধে যেতে পারে না।” তিনি অভিযোগ করেছেন, তৃণমূল কংগ্রেস ভোটার তালিকায় অবৈধভাবে রোহিঙ্গা মুসলিম এবং বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছে, যা গণতন্ত্রের মূলমন্ত্রের বিরুদ্ধে।
শুভেন্দু বলেন, “নির্বাচন কমিশন এই অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধ করবে। আমরা নিশ্চিত করব যে ভোটার তালিকা থেকে অবৈধ নামগুলি বাদ দেওয়া হয়।” তাঁর এই বক্তব্য পশ্চিমবঙ্গে নাগরিকত্ব এবং ভোটার তালিকা নিয়ে চলমান বিতর্ককে আরও তীব্র করেছে।
তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া
শুভেন্দু অধিকারীর এই বিস্ফোরক মন্তব্যের জবাবে তৃণমূল কংগ্রেস তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তৃণমূলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী মিথ্যা অভিযোগ তুলে বাংলার মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর পরিবার বাংলার মানুষের কল্যাণে কাজ করে চলেছেন।”
তিনি আরও বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী নিজে তৃণমূলের নেতা ছিলেন। তিনি কীভাবে এখন এই ধরনের অভিযোগ তুলছেন? এটা তাঁর রাজনৈতিক সুবিধাবাদিতার প্রমাণ।” তৃণমূল দাবি করেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যে উন্নয়নের কাজ অব্যাহত রয়েছে, এবং বিজেপি এই উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
শুভেন্দু অধিকারীর এই মন্তব্য পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে চলমান রাজনৈতিক সংঘাতকে আরও তীব্র করেছে। বিশেষ করে নাগরিকত্ব এবং ভোটার তালিকা নিয়ে বিজেপির অবস্থান এবং তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া রাজ্যের রাজনীতিতে একটি স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে উঠেছে। শুভেন্দুর ‘চোর’ মন্তব্য মমতা এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে বিজেপির আক্রমণাত্মক কৌশলের একটি অংশ।
এই ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে বিজেপি তৃণমূলের জনসমর্থনের ভিত্তিকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে, তৃণমূল দাবি করছে, এই অভিযোগগুলি ভিত্তিহীন এবং জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে।জনসমুদ্রে শহীদ দিবসএই বিতর্কের মধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেসের শহীদ দিবসের সমাবেশে ধর্মতলায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটেছে।
তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষ দাবি করেছেন, ২০ লক্ষেরও বেশি মানুষ এই সমাবেশে অংশ নিয়েছেন, যা তৃণমূলের প্রতি জনগণের অটুট সমর্থনের প্রমাণ। তিনি বলেন, “শুভেন্দু অধিকারীর মতো নেতারা এই জনসমর্থন দেখে ঈর্ষান্বিত। তারা মিথ্যা অভিযোগ তুলে জনগণের মনোযোগ অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করছেন।” শহীদ দিবসের এই সমাবেশ তৃণমূলের শক্তি প্রদর্শন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
SSC মামলায় রাজ্যের বড় জয়, নিয়োগে হস্তক্ষেপ করল না সুপ্রিম কোর্ট
শুভেন্দু অধিকারীর এই বিস্ফোরক মন্তব্য পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে ‘চোর’ অভিযোগ এবং রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপির আক্রমণকে আরও তীব্র করেছে।
তৃণমূল এই অভিযোগগুলিকে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর বলে প্রত্যাখ্যান করলেও, এই বিতর্ক রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আগামী দিনে এই তরজা কীভাবে রাজনৈতিক সমীকরণকে প্রভাবিত করে, তা দেখার বিষয়।