কলকাতা: তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভা নেতৃত্বে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থান ঘিরে এবার প্রকাশ্যে দলীয় অস্বস্তি। সদ্য লোকসভার মুখ্য সচেতকের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন বর্ষীয়ান সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সিদ্ধান্ত ঘিরে শাসকদলের অন্দরমহলে জল্পনার পারদ চড়েছে, এ কি শুধুই ‘আস্থাহীনতা’র প্রতিক্রিয়া, না কি এর গভীরে রয়েছে দলীয় অন্তঃকলহ? এরই মধ্যে জল্পনা উস্কে কল্যাণের প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (suvendu adhikari praises kalyan banerjee)৷
সোমবার তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভায় নতুন দলনেতা হিসেবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণা করেন। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জায়গায় এই বদল ঘিরেই জলঘোলা শুরু। ঠিক তার পরপরই পদত্যাগ করেন কল্যাণ। জানান, “নেত্রী যদি বিশ্বাস না রাখেন, তাহলে মুখ্য সচেতক পদে থাকার অর্থ নেই।”
তবে এই ইস্তফার পেছনে আরেকটি প্রেক্ষাপটও রয়েছে, সাংসদ মহুয়া মৈত্রের সঙ্গে তাঁর চলতি দ্বন্দ্ব। দিন কয়েক আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নাম না করে মহুয়াকে কটাক্ষ করে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন কল্যাণ। সেই সংঘাতের আঁচ কি ইস্তফার সিদ্ধান্তেও পড়েছে? প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে।
এই পরিস্থিতিতে আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রতিক্রিয়া। মঙ্গলবার বাগডোগরা বিমানবন্দরে তিনি বলেন, “কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় একজন শিক্ষিত, সংগ্রামী নেতা। ২০১১ সালের আগে সিপিএম বিরোধী আন্দোলনে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।”
তৃণমূলের অন্দরের খবর, কল্যাণের ইস্তফার পরে অভিষেক নিজে ফোন করে তাঁকে কিছুদিন আগের মতোই দায়িত্বে থাকতে অনুরোধ করেছেন। আগামী ৭ আগস্ট দিল্লিতে তাঁদের মুখোমুখি বৈঠকেরও সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি, অভিষেক নাকি বুঝিয়ে দিয়েছেন, অতিরিক্ত ‘মান-অভিমান’ না করাই শ্রেয়।
তবে ক্ষোভ আড়াল করেননি কল্যাণ। লোকসভায় সহকারী দলনেত্রী কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে অনুরোধ করেছেন, যেন তাঁকে পিছনের সারিতে একটি আসন বরাদ্দ করা হয়। তাঁর মন্তব্য, “আমার প্রয়োজন ফুরিয়েছে।” পাশাপাশি একরাশ স্নায়ুবিদ্ধ বার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও, “এবার দিদিই দল চালান।”
সবমিলিয়ে, লোকসভার প্রথম সারিতে জায়গা বদলের পাশাপাশি এখন তৃণমূলের অন্দরে আবেগ, অভিমান, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও নেতৃত্বের অবস্থান ঘিরে এক নতুন অধ্যায়ের শুরু বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।