আবারও সরব শুভেন্দু (Suvendu-Adhikari)। এবার দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের রথযাত্রা নিয়ে মমতা বন্দোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তিনি। তিনি দিঘায় আয়োজিত রথযাত্রাকে ‘ফ্লপ শো’ বলে কটাক্ষ করেছেন। এবং রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সরকারের পরিকল্পনা ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার উপর তীব্র সমালোচনা করেছেন। শুভেন্দু অধিকারী তাঁর মন্তব্যে দিঘার রথযাত্রার ব্যর্থতার পাশাপাশি মমতার কলকাতাকে লন্ডন বানানোর পরিকল্পনা এবং দিঘাকে গোয়া বানানোর পরিকল্পনা নিয়েও ব্যাঙ্গাত্মক মন্তব্য করেছেন।
শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য (Suvendu-Adhikari)
শুভেন্দু অধিকারী, (Suvendu-Adhikari) যিনি একসময় তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা ছিলেন এবং বর্তমানে বিজেপির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা, দিঘার রথযাত্রা নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছেন। তিনি বলেন, “দিঘার রথযাত্রা একেবারে ফ্লপ শো। সাত হাজার পুলিশ নামিয়েও প্রকৃত ভক্তদের আকর্ষণ করতে পারেনি সরকার।
মানুষের আস্থা ও ভক্তির বিষয়ে টেন্ডার বের করে কাজ হবে না।” তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে তৃণমূল সরকার কলকাতা, সুন্দরবন, দার্জিলিং এবং দিঘাকে গোয়া তে পরিণত করার বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তা ব্যর্থ হয়েছে।
শুভেন্দু (Suvendu-Adhikari) তাঁর মন্তব্যে তৃণমূল সরকারের বেশ কয়েকটি প্রকল্পের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “প্রথমে বলেছিলেন কলকাতাকে লন্ডন বানাবেন। বিগ বেনের নকল করে রাস্তায় বসিয়ে দিলেন, ভাবলেন কলকাতা লন্ডন হয়ে গেল। সুন্দরবনকে আফ্রিকার জঙ্গল বানানোর স্বপ্ন দেখলেন, পরে বুঝলেন তা সম্ভব নয়, তাই অনুপ্রবেশের সুবিধা করে নির্বাচনে কাজে লাগানোর চেষ্টা করলেন।
দার্জিলিংকে সুইজারল্যান্ড বানানোর কথা বলে হম্বিতম্বি করলেন, কিন্তু পরিকাঠামো উন্নয়নের সামর্থ্য না থাকায় বিভাজনের রাজনীতি শুরু করলেন। আর দিঘাকে গোয়া বা পুরীর মতো বানানোর কথা বলে শেষমেশ তীর্থক্ষেত্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়লেন। কিন্তু ভক্তি ও আস্থা
কি পুলিশ দিয়ে তৈরি করা যায়?”
দিঘার রথযাত্রা ও বিতর্ক
দিঘায় এবারের রথযাত্রা ছিল রাজ্য সরকারের একটি উচ্চাভিলাষী উদ্যোগ। তৃণমূল সরকার দিঘাকে একটি আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। এরই অংশ হিসেবে দিঘায় রথযাত্রার আয়োজন করা হয়, যা পুরীর বিখ্যাত রথযাত্রার আদলে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল। সরকারের দাবি ছিল, এই রথযাত্রা দিঘাকে ধর্মীয় ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে নতুন পরিচিতি দেবে।
কিন্তু শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu-Adhikari) মতে, এই উদ্যোগ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন যে, সাত হাজার পুলিশ মোতায়েন করা সত্ত্বেও রথযাত্রায় প্রকৃত ভক্তদের অংশগ্রহণ ছিল নগণ্য। তিনি বলেন, “তীর্থক্ষেত্রের মাহাত্ম্য ও পরম্পরা কয়েক মাসের প্রচারে তৈরি করা যায় না। মানুষের আস্থা ও ভক্তি জোর করে সৃষ্টি করা সম্ভব নয়।” তাঁর এই মন্তব্যে দিঘার রথযাত্রাকে ‘ফ্লপ শো’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে।
দ্বিতীয় টেস্টে ভারতের সম্ভাব্য তিন পরিবর্তন, বিশ্রামে বুমরাহ!
তৃণমূলের সমালোচনা
অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে। তৃণমূলের এক মুখপাত্র বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu-Adhikari) রাজনৈতিক স্বার্থে এই ধরনের মন্তব্য করছেন। দিঘার রথযাত্রা একটি সফল উদ্যোগ ছিল, যেখানে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। তাঁর মন্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং বিভ্রান্তিকর।” তৃণমূল দাবি করেছে যে, রথযাত্রার আয়োজন স্থানীয় জনগণের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি করেছিল এবং এটি দিঘার পর্যটন সম্ভাবনাকে আরও উজ্জ্বল করেছে।
সমাজে প্রভাব
শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu-Adhikari) এই মন্তব্য দিঘার রথযাত্রার সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, এটি পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন ও ধর্মীয় উৎসবের আয়োজনের প্রকৃতি নিয়ে বৃহত্তর আলোচনার সূত্রপাত করেছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের।
দিঘাকে গোয়া বা পুরীর মতো গন্তব্যে রূপান্তরিত করার সরকারের পরিকল্পনা অনেকের কাছে উচ্চাভিলাষী বলে মনে হলেও, এই ধরনের উদ্যোগে স্থানীয় অর্থনীতির উন্নতি ও পর্যটন বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে বলেও মনে করেছে রাজ্য সরকার। তবে শুভেন্দুর মন্তব্যে এই প্রশ্ন উঠেছে যে, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কতটা কার্যকর হতে পারে।
সামাজিক মাধ্যমে এই বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একদল মানুষ শুভেন্দুর মন্তব্যকে সমর্থন করে বলেছেন যে, সরকারের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ ধর্মীয় আবেগকে ক্ষুণ্ন করতে পারে। অন্যদিকে, তৃণমূল সমর্থকরা এই মন্তব্যকে রাজনৈতিক প্ররোচনা বলে সমালোচনা করেছেন।
দিঘার রথযাত্রাকে ‘ফ্লপ শো’ বলে শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu-Adhikari) কটাক্ষ তৃণমূল সরকারের পর্যটন ও ধর্মীয় উদ্যোগের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাঁর মন্তব্যে কলকাতা, সুন্দরবন, দার্জিলিং এবং দিঘার উন্নয়ন পরিকল্পনার ব্যর্থতার কথা উঠে এসেছে। তৃণমূল এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করলেও, এই বিতর্ক রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।