‘সম্রাট নিরো’ র সঙ্গে তুলনা করে সমাজ মাধ্যমে মমতাকে কটাক্ষ শুভেন্দুর

Suvendu Adhikari Mocks Mamata Banerjee on Social Media, Compares Her to ‘Emperor Nero আরো একবার মমতা বন্দোপাধ্যায় কে কটাক্ষ করে সমাজ মাধ্যমে লিখলেন শুভেন্দু অধিকারী…

suvendu-adhikari-mocks-mamata-emperor-nero-comparison

Suvendu Adhikari Mocks Mamata Banerjee on Social Media, Compares Her to ‘Emperor Nero

   

আরো একবার মমতা বন্দোপাধ্যায় কে কটাক্ষ করে সমাজ মাধ্যমে লিখলেন শুভেন্দু অধিকারী (suvendu adhikari)। পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক হিংসা ও অশান্তির অভিযোগের মধ্যে রাজনৈতিক মহলে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন এবং রাজ্যের ইতিহাসকে কেন্দ্র করে। বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারী সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, রাজ্যে যখন অশান্তি ও সহিংসতার আগুন জ্বলছে, তখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাগরিকদের ‘শুভনন্দন’ জানানোর পরিবর্তে দাঙ্গাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিলে জনগণ নিজেদের সুরক্ষিত বোধ করতেন।

তিনি (suvendu adhikari) আরও ঘোষণা করেছেন, আগামী বছর থেকে ২০ জুন রাজ্যে সরকারিভাবে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ হিসেবে পালিত হবে, যা রাজ্যের ঐতিহাসিক পরিচয় ও শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের অবদানের স্মরণে উৎসর্গীকৃত।

অশান্তির প্রেক্ষাপটে সমালোচনা (suvendu adhikari)

শুভেন্দু অধিকারী (suvendu adhikari) অভিযোগ করেছেন, রাজ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা, সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও সরকার নীরব ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, “রোম যখন পুড়ছিল, নিরো বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। রাজ্যে অশান্তির আগুন জ্বলছে, আর সরকার গান গাইছে। কিন্তু সুরটা বেসুরো হয়ে গেছে।” তিনি দাবি করেন, দাঙ্গাকারী ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ না নিয়ে সরকার জনগণের নিরাপত্তার প্রতি উদাসীন। তিনি ‘বরাহ-নন্দন’ উল্লেখ করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান, যাতে নাগরিকরা নিরাপদ বোধ করেন।

‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ নিয়ে বিতর্ক

শুভেন্দু অধিকারী জোর দিয়ে বলেন, পশ্চিমবঙ্গের নাম ও ইতিহাস কখনো মুছে ফেলা যাবে না। তিনি শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, “১৯৪৭ সালে তাঁর ঐতিহাসিক উদ্যোগের ফলে ২০ জুন বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভায় ভোটাভুটির মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই দিনটি পশ্চিমবঙ্গের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি ঘোষণা করেন, আগামী বছর থেকে ২০ জুন সরকারিভাবে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালিত হবে।

তিনি তৃণমূল সরকারের উদ্দেশে অভিযোগ করেন, সরকার পশ্চিমবঙ্গের নাম ও ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, “‘পশ্চিম’ শব্দটি রক্তাক্ত ইতিহাসের স্মৃতি বহন করে। এটি ভোলানো যাবে না। বিদ্রুপের বিষয়, সরকারের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সেই বেদনাদায়ক অধ্যায়কে আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলছে।”

‘হিন্দুরা মরুক’ দিলীপের মন্তব্য ঘিরে উত্তাল রাজনীতি, ভিডিয়ো সামনে এনে খোঁচা দেবাংশুর

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের সময় শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গকে ভারতের অংশ হিসেবে রাখার প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাঁর উদ্যোগে বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভায় ২০ জুন ভোটাভুটি হয়, যার ফলে পশ্চিমবঙ্গ ভারতের একটি রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মরণ করেই শুভেন্দু অধিকারী ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালনের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই দিনটি রাজ্যের জনগণের জন্য গর্বের এবং ইতিহাসের সঙ্গে তাদের সংযোগ রক্ষার প্রতীক।

সরকারের প্রতিক্রিয়া

তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগের প্রত্যুত্তরে বলেছে, রাজ্যে শান্তি বজায় রাখতে সরকার কঠোরভাবে কাজ করছে। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, “বিরোধীরা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাইছে। রাজ্যে অশান্তির খবর অতিরঞ্জিত করা হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে বিজেপি জনগণের মনোযোগ অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করছে। তৃণমূল দাবি করেছে, সরকার ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং রাজ্যের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব কেবল প্রশাসনিক সুবিধার জন্য ছিল।

সামাজিক প্রভাব

রাজ্যে অশান্তির অভিযোগ এবং ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ নিয়ে বিতর্ক সামাজিক মাধ্যমে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনেকে মনে করছেন, এই ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, রাজ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংযম ও সহযোগিতা প্রয়োজন। একজন বাসিন্দা বলেন, “আমরা চাই না রাজনীতির নামে বিভেদ বাড়ুক। আমাদের শান্তিতে বাঁচতে দিন।”

রাজনৈতিক মতবিরোধ

বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে এই বিতর্ক রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে। বিজেপি দাবি করছে, তৃণমূল সরকার অশান্তি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ এবং ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে, তৃণমূল বলছে, বিজেপি সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টি করে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাইছে। এই পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালনের প্রস্তাব রাজ্যের জনগণের মধ্যে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

ভবিষ্যৎ প্রভাব

‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালনের প্রস্তাব রাজ্যের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয় নিয়ে নতুন আলোচনার সূচনা করেছে। অনেকে মনে করছেন, এই দিনটি পালন রাজ্যের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান জানানোর একটি সুযোগ হতে পারে। তবে, বর্তমান অশান্তির প্রেক্ষাপটে এই প্রস্তাব কতটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের জনগণ এখন শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রত্যাশা করছেন, এবং রাজনৈতিক দলগুলোর উপর দায়িত্ব পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা।

পশ্চিমবঙ্গে অশান্তির অভিযোগ এবং ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ নিয়ে বিতর্ক রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির জটিলতাকে তুলে ধরেছে। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের অবদান ও রাজ্যের ঐতিহাসিক পরিচয়কে সামনে রেখে শুভেন্দু অধিকারীর প্রস্তাব একদিকে গর্বের বিষয় হলেও, অশান্তির প্রেক্ষাপটে এটি নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সরকারের উপর এখন দায়িত্ব শান্তি ফিরিয়ে আনা এবং ইতিহাসের প্রতি সম্মান জানিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করা। পশ্চিমবঙ্গের নাম ও ইতিহাস রক্তাক্ত সংগ্রামের সাক্ষী, এবং এই স্মৃতি কখনো মুছে ফেলা সম্ভব নয়।