মিলন পণ্ডা, কাঁথি (পূর্ব মেদিনীপুর): পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে আবারও উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়। নন্দীগ্রামে একটি কর্মসূচিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নিজেকে (Suvendu Adhikari ) “ছোট চৌকিদার” হিসেবে উল্লেখ করে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু করেছেন। তবে তাঁর এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন কাঁথি সাংগঠনিক জেলা যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা কাঁথি পুরসভার পুরপ্রধান সুপ্রকাশ গিরি। তিনি শুভেন্দুকে কটাক্ষ করে বলেছেন, “চৌকিদার তো চোর হে, বাংলার মানুষের পাহারাদার একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।”
নন্দীগ্রামের একটি সভায় শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, “আপনাদের কাছে আমি ২৬-এর লড়াইয়ে সকলের সহযোগিতা চাইব। আমি আপনাদের ছোট চৌকিদার হিসেবে কাজ করব। বড় চৌকিদার হলেন নরেন্দ্র মোদি। আমি আপনাদের আনন্দে একবার আসব, কিন্তু দুঃখে সাথে সাথে পৌঁছে যাব। গণতন্ত্র থাকবে, শান্তি থাকবে।” তাঁর এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামে বিজেপির প্রচারকে জোরদার করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে এই “চৌকিদার” মন্তব্য নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে।
সুপ্রকাশ গিরি শুভেন্দুর এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, “শুভেন্দু অধিকারী বুঝতে পেরেছেন যে মোদির চৌকিদার ইমেজ বাংলায় আর কাজ করছে না। তাই তিনি নিজেকে ছোট চৌকিদার বলে বাংলায় বড় চৌকিদার হতে চাইছেন। এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি শুধু নিজের দলকেই ছোট করেননি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও ব্যঙ্গ করেছেন। মোদির চৌকিদার স্লোগান যেখানে বাংলায় ব্যর্থ, সেখানে শুভেন্দু কীভাবে চৌকিদার হয়ে বাংলার মানুষের মন জয় করবেন?”
সুপ্রকাশ আরও বলেন, “বাংলায় কোনও চৌকিদারের প্রয়োজন নেই। শুভেন্দুও চৌকিদার নন, মোদিও চৌকিদার নন। চৌকিদারের নামে কাগজে মুড়ে টাকা দেওয়ার ঘটনা আমরা দেখেছি। বাংলার মানুষের একমাত্র পাহারাদার হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিই বাংলার মানুষের বিপদে ছুটে যান, তাঁদের পাশে দাঁড়ান।” তিনি শুভেন্দুর বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ চালিয়ে বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী যে দলের সঙ্গে ছিলেন, সেই তৃণমূল কংগ্রেসকে ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে তিনি বাংলার মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। এখন চৌকিদার সেজে তিনি বাংলার মানুষের মন জয় করতে পারবেন না।”
এই বিতর্কের পটভূমিতে ২০২১ সালের নন্দীগ্রাম বিধানসভা নির্বাচনের কথাও উঠে এসেছে। সেই নির্বাচনে শুভেন্দু অধিকারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ১,৯৫৬ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন। তবে মমতা এই ফলাফলের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছেন, অভিযোগ করে যে নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। তিনি দাবি করেছিলেন, একটি বুথে ৫০০ ভোটার থাকলেও ১,০০০ ভোট পড়েছিল এবং ভিভিপ্যাট গণনা করা হয়নি। এই মামলা এখনও বিচারাধীন। শুভেন্দু অধিকারীও এই মামলা অন্য রাজ্যে স্থানান্তরের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন, যার শুনানি ২০২২ সালের জানুয়ারিতে স্থগিত রাখা হয়েছিল।
এই ঘটনা ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। সুপ্রকাশ গিরির এই মন্তব্যে তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে। তারা মনে করছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূলই বাংলার মানুষের প্রকৃত পাহারাদার। অন্যদিকে, বিজেপি সমর্থকরা শুভেন্দুর “চৌকিদার” মন্তব্যকে তাঁর জনসংযোগের কৌশল হিসেবে দেখছেন। তবে এই বিতর্ক কীভাবে ২০২৬-এর নির্বাচনের রাজনৈতিক সমীকরণকে প্রভাবিত করবে, তা সময়ই বলবে।
এই ঘটনার পর কাঁথি ও নন্দীগ্রামের রাজনৈতিক মহলে আলোচনা তুঙ্গে। সুপ্রকাশ গিরির মন্তব্যে শুভেন্দুর পুরনো দল তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়েছে। একই সঙ্গে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে “পাহারাদার” হিসেবে উল্লেখ করে তৃণমূলের শক্তিশালী নেতৃত্বের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন সুপ্রকাশ। এই বিতর্ক নন্দীগ্রামে ২০২৬-এর নির্বাচনী লড়াইকে আরও তীব্র করবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।