রাজ্য রাজনীতিতে ফের উত্তেজনার পারদ চড়াচ্ছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইচ্ছাকৃতভাবে সমাজে বিভ্রান্তি ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়াতে ভুয়ো ভিডিও প্রচার করছেন। সেই সূত্রেই তাঁর সাফ বক্তব্য, “সাইবার অপরাধ আইন অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।”
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যে উত্তেজনার আবহ। বিশেষ করে মোথাবাড়ি, মহেশতলা এবং সামশেরগঞ্জ-এর মতো এলাকায় সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা নিয়ে শাসক দলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শুভেন্দু। তিনি অভিযোগ করেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ বললেও বাস্তবে তা মানছেন না। বরং ধর্মীয় সংহতি বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছেন তিনি।
শুভেন্দুর অভিযোগ, দিল্লির একটি পুরনো ও মিথ্যা ভিডিও — যেখানে এক মহিলা ও শিশুর ওপর অত্যাচারের ভুয়ো দৃশ্য দেখানো হয়েছে — সেই ভিডিও-কে ঘিরেই বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, “ভুয়ো ভিডিওর মাধ্যমে সামাজিক উত্তেজনা ছড়ানো হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই এসব ভিডিওর উৎস ও প্রচারকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। এতে শান্তি নষ্ট হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “জনতা সব বুঝে গিয়েছে। এই মিথ্যাচারের রাজনীতি আর চলবে না। মুখ্যমন্ত্রী গুজব ছড়িয়ে আসল প্রশ্ন থেকে সরে যেতে চাইছেন। তাই এখনই তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।”
সাইবার আইনে কী মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে? এই প্রশ্নে রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, কোনও ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে সমাজে ভুয়ো খবর বা হিংসা উস্কে দেওয়ার মতো ভিডিও বা বার্তা ছড়ালে তথ্যপ্রযুক্তি আইন তথা আইটি অ্যাক্ট (Section 66F বা 153A IPC) অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা যেতে পারে।
তবে মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি কোনও ভিডিও পোস্ট করেছেন কিনা, তা নিয়ে এখনও পরিষ্কারভাবে কিছু প্রমাণ সামনে আসেনি।
তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে যদিও শুভেন্দুর অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এক নেতার বক্তব্য, “বিজেপি হারে হারে বুঝে গিয়েছে, বাংলায় তাদের জায়গা নেই। তাই মানুষকে ভুল পথে চালানোর জন্য এভাবে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করছে।”
তবে যেভাবে শুভেন্দু মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সাইবার অপরাধে মামলা করার দাবি তুলেছেন, তাতে রাজ্য রাজনীতি যে আরও উত্তপ্ত হতে চলেছে, তা নিশ্চিত।
রাজ্য রাজনীতির এই নয়া পর্বে সত্য-মিথ্যার লড়াই কতদূর গড়াবে, তা সময় বলবে। তবে বিভ্রান্তিমূলক ভিডিও, ধর্মীয় উত্তেজনা এবং সাইবার অপরাধ— এই তিনটি ইস্যু ঘিরেই আগামী দিনে আরও তীব্র রাজনৈতিক মোকাবিলা দেখা যেতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা।