দিল্লির লালকেল্লার কাছে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর সারা দেশে যখন আতঙ্ক ও সতর্কতা, তখনই রাজনৈতিক মহলে নতুন চাঞ্চল্য ছড়াল শুভেন্দু অধিকারীর দাবিতে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা জানিয়েছেন, তাঁকে পাকিস্তান থেকে ফোনে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ থেকেও প্রায়ই হুমকি ফোন পেয়েছেন বলেও অভিযোগ নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক।
বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু বলেন, “আমি দু’দিন আগেই পাকিস্তান থেকে হুমকি ফোন পেয়েছি। আমাকে বাংলাদেশ থেকেও প্রতিদিন হুমকি দেওয়া হয়। আমার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর তো সবার জানা।’’ তবে ঠিক কী ধরনের হুমকি দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি।
দিল্লি বিস্ফোরণের তদন্ত এখন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের হাতে। এরই মধ্যে কলকাতা ও রাজ্যের একাধিক জায়গায় পুলিশের নাকা-তল্লাশি চলছে, বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। এই আবহেই শুভেন্দুর এমন দাবি রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল।
‘তৃণমূল খাগড়াগড় ভুলে গিয়েছে’, পাল্টা তোপ শুভেন্দুর
শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেন, দিল্লির ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারকে দোষারোপ করে রাজ্য সরকার আসলে নিজেদের দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে। তাঁর কথায়, “দিল্লি বিস্ফোরণ নিয়ে এখন তৃণমূলের নেতারা বড় বড় কথা বলছেন। এঁরা খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সময় কোথায় ছিলেন?”
তিনি আরও বলেন, “মুর্শিদাবাদ তো জঙ্গিদের ঘাঁটি। এই রাজ্যকে জঙ্গিরা সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা বলে মনে করে। তাই এখানে ওরা হামলা করে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী থাকায় ওদের এই মনোভাব তৈরি হয়েছে। আনসারুল বাংলা মাদ্রাসা তো এখানে চলত। ওরা তিনবার ভোট দিয়েছে, এটা সবাই জানে।”
তৃণমূলের সমালোচনায় শুভেন্দুর এই আক্রমণ শুধু রাজ্য রাজনীতিকেই উত্তপ্ত করেনি, বরং নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রশ্নেও নতুন করে বিতর্ক ছড়িয়েছে।
‘বাংলাদেশ যোগ স্পষ্ট’, দাবি শুভেন্দুর Suvendu Adhikari Death Threat Pakistan
দিল্লি বিস্ফোরণের পর এখন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা NIA-র হাতে গোটা বিষয়টির তদন্ত। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার একাধিক জায়গায় অভিযান চালিয়েছে তারা। সেই প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, “ত্রিপুরাতেও তল্লাশি চলছে। ওটা বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা রাজ্য। ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার খবর অনুযায়ী, এই বিস্ফোরণের ঘটনায় বাংলাদেশ যোগ পরিষ্কার।”
তিনি দাবি করেন, “পশ্চিমবঙ্গে একাধিক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন সক্রিয় রয়েছে। তাদের কার্যকলাপ সবচেয়ে বেশি মালদা ও মুর্শিদাবাদে। আগেও প্রমাণিত হয়েছে, এই জেলাগুলি থেকে জঙ্গিরা ধরা পড়েছে। ক্যানিং থেকেও বেশ কিছু গ্রেপ্তারি হয়েছিল।”
দিল্লি বিস্ফোরণ নিয়ে দেশজুড়ে উদ্বেগ
প্রসঙ্গত, সোমবার দিল্লির লালকেল্লার কাছে ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় অন্তত ১৩ জনের, আহত বহু। বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্পষ্ট জানানো হয়—এটি ‘জঙ্গি হামলা’।
এরপরই গোটা দেশজুড়ে জারি হয়েছে নিরাপত্তা সতর্কতা। পশ্চিমবঙ্গেও বাড়ানো হয়েছে পুলিশি নজরদারি। কলকাতা পুলিশের তরফে শুরু হয়েছে নাকা-তল্লাশি, সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে শুভেন্দু অধিকারীর দাবি রাজ্যের রাজনৈতিক তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। একদিকে কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্ত চলছে, অন্যদিকে রাজ্যের শাসক ও বিরোধীপক্ষের রাজনৈতিক তরজাও তীব্রতর হচ্ছে।


