শিলিগুড়িতে এক জনসভায় পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গের নেওটিয়া গোষ্ঠীর হাতে চা বাগানের জমি বিক্রি করে দিচ্ছেন, যা তরাই-ডুয়ার্স অঞ্চলের অর্থনীতি ও চা শ্রমিকদের জীবিকার উপর মারাত্মক আঘাত হানছে।
শুভেন্দু আরও অভিযোগ করেছেন, মমতা সরকার চা শ্রমিকদের মজুরি বন্ধ করেছেন, তিস্তা নদীকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন এবং তরাই-ডুয়ার্সে গাছের সংখ্যা কমিয়ে পরিবেশ ধ্বংস করছেন। তিনি তৃণমূল কংগ্রেসকে ‘চোর’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “এই চোরেদের শাস্তি দিতে হবে। তাদের বাংলা থেকে তাড়াতে হবে।”
চা বাগানের জমি বিক্রির অভিযোগ
শুভেন্দু অধিকারী শিলিগুড়ির জনসভায় বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেওটিয়াদের হাতে চা বাগানের জমি তুলে দিচ্ছেন। উত্তরবঙ্গের চা বাগানগুলি এই অঞ্চলের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। কিন্তু তৃণমূল সরকার এই জমি বিক্রি করে শিল্পপতিদের পকেট ভরছে।” তিনি দাবি করেন, চা বাগানের জমি বিক্রির এই প্রক্রিয়া শ্রমিকদের জীবিকা হুমকির মুখে ফেলেছে।
তিনি বলেন, “চা বাগানের শ্রমিকরা দিনরাত পরিশ্রম করে এই শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছে। কিন্তু তৃণমূলের দুর্নীতির কারণে তাদের জীবন ধ্বংস হচ্ছে।” শুভেন্দু অভিযোগ করেন, এই জমি বিক্রির পিছনে রয়েছে তৃণমূলের নেতাদের আর্থিক স্বার্থ, যা উত্তরবঙ্গের অর্থনীতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
চা শ্রমিকদের মজুরি বন্ধের অভিযোগ
শুভেন্দু আরও অভিযোগ করেছেন, মমতা সরকার চা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করছে। তিনি বলেন, “চা শ্রমিকরা দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে। তাদের মজুরি বন্ধ করা হয়েছে, তাদের সন্তানদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের কোনো ব্যবস্থা নেই।” তিনি দাবি করেন, তৃণমূল সরকারের অবহেলার কারণে চা শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছে।
শুভেন্দু বলেন, “মমতা সরকার শ্রমিকদের কথা ভাবে না। তারা শুধু নিজেদের স্বার্থ দেখছে। আমরা চা শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার জন্য রাস্তায় নামব।” তিনি উত্তরবঙ্গের শ্রমিকদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
তিস্তা নদী ধ্বংসের অভিযোগ
তিস্তা নদী নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “তিস্তা উত্তরবঙ্গের জীবনরেখা। কিন্তু মমতা সরকারের ভুল নীতির কারণে এই নদী ধ্বংসের মুখে। তিস্তার জল ব্যবস্থাপনা নিয়ে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।”
তিনি অভিযোগ করেন, তৃণমূল সরকার কেন্দ্রের সঙ্গে তিস্তার জল বণ্টন নিয়ে সহযোগিতা করছে না, যার ফলে উত্তরবঙ্গের কৃষক ও সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। শুভেন্দু বলেন, “তিস্তাকে বাঁচানোর জন্য আমরা আন্দোলন করব। এই সরকারের অপশাসন আর সহ্য করা হবে না।”
তরাই-ডুয়ার্সে পরিবেশ ধ্বংস
শুভেন্দু অধিকারী তরাই-ডুয়ার্সের পরিবেশ ধ্বংসের জন্য তৃণমূল সরকারকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, “তরাই-ডুয়ার্সের সবুজ বনাঞ্চল এই অঞ্চলের গর্ব। কিন্তু মমতা সরকারের আমলে গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। অবৈধভাবে গাছ কাটা হচ্ছে, বনাঞ্চলের জমি অন্য কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, তৃণমূলের দুর্নীতির কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। শুভেন্দু বলেন, “এই অঞ্চলের পরিবেশ রক্ষার জন্য আমরা কঠোর পদক্ষেপ নেব। তৃণমূলের এই ধ্বংসলীলা বন্ধ করতে হবে।”
দলকে আগামী কর্মসূচি জানিয়ে দিলেন মমতা, ভাষার রক্ষায় পথে নামার ডাক
তৃণমূলকে ‘চোর’ আখ্যা ও হুঁশিয়ারি
শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল কংগ্রেসকে ‘চোর’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “এই সরকার বাংলার সম্পদ লুট করছে। চা বাগানের জমি বিক্রি, শ্রমিকদের মজুরি বন্ধ, তিস্তার ধ্বংস, বন ধ্বংস—এসব তৃণমূলের দুর্নীতির প্রমাণ।” তিনি দাবি করেন, মমতা সরকারের শাসনকালে উত্তরবঙ্গের অর্থনীতি ও পরিবেশ ধ্বংসের মুখে।
তিনি বলেন, “এই চোরেদের শাস্তি দেওয়া উচিত। বাংলার মানুষ তৃণমূলের অপশাসন আর মেনে নেবে না। আমরা তাদের বাংলা থেকে তাড়াতে বদ্ধপরিকর।” শুভেন্দু বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে জন আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন।
শুভেন্দু অধিকারীর শিলিগুড়ির জনসভায় করা এই বিস্ফোরক মন্তব্য বাংলার রাজনৈতিক ময়দানে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। চা বাগানের জমি বিক্রি, শ্রমিকদের মজুরি বন্ধ, তিস্তা নদী ও তরাই-ডুয়ার্সের পরিবেশ ধ্বংসের অভিযোগ তুলে তিনি তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন।
অন্যদিকে, তৃণমূল এই অভিযোগগুলিকে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। এই বিতর্ক উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে এবং আগামী দিনে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে সংঘাত আরও তীব্র হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।