নন্দীগ্রামের (Nandigram) রাজনৈতিক উত্তাপ আবারও বাড়ল। শহীদ স্মরণ অনুষ্ঠানের প্রেক্ষাপটে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি কড়া সমালোচনা করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তার দাবি, নন্দীগ্রামের প্রতি তৃণমূলের সহানুভূতি কৃত্রিম। রাজ্যস্তরের নেতৃত্বহীন শহীদ স্মরণ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শুভেন্দুর মন্তব্য আরও একবার রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক উস্কে দিয়েছে।
তৃণমূলের কর্মসূচিকে ‘কৃত্রিম’ বললেন শুভেন্দু
শুভেন্দু অধিকারী স্পষ্ট ভাষায় জানান, নন্দীগ্রামে তৃণমূল কংগ্রেসের বর্তমান উদ্যোগকে তিনি প্রাকৃতিক বা স্বতঃস্ফূর্ত বলে মনে করেন না। তিনি বলেন, “ওদের অধিকার আছে শহীদ স্মরণ করার। আমি তা নিয়ে কিছু বলব না। তবে এটি প্রকৃত অনুভূতির প্রকাশ নয়, একেবারে কৃত্রিম। যারা সেই সময় তৃণমূলের আন্দোলনের সঙ্গে ছিলেন, তারা আজ অনুপস্থিত। বরং সেই সময় যারা তৃণমূলের পাশে দাঁড়াননি, তারাই এখন আসছেন দলের হুকুম পালন করতে।”
আন্দোলনের ঐতিহ্য ও বর্তমান বাস্তবতা
নন্দীগ্রামের ভূমি আন্দোলন তৃণমূলের উত্থানের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত। সেই আন্দোলনের সময় অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথে নেমেছিলেন। কিন্তু শুভেন্দুর অভিযোগ, বর্তমান তৃণমূল নেতৃত্ব সেই আন্দোলনের প্রকৃত সৈনিকদের ভুলে গেছে। শুভেন্দু বলেন, “যারা প্রকৃতপক্ষে আন্দোলনের অংশ ছিলেন, তাদের আজ আর তৃণমূলের কর্মসূচিতে দেখা যায় না। বর্তমান কর্মসূচি শুধুমাত্র দলের নির্দেশ পালনকারী কিছু কর্মী ও বিধায়কের উপস্থিতিতে সম্পন্ন হচ্ছে।”
তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিভাজনের ইঙ্গিত
শুভেন্দুর বক্তব্যে উঠে এসেছে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিভাজনের প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, “নন্দীগ্রামের আন্দোলনের সময় যারা সত্যিকারের লড়াই করেছিলেন, তারা এখন দল থেকে দূরে সরে গেছেন। তৃণমূল কংগ্রেসে এখন যারা শীর্ষে রয়েছেন, তাদের অনেকেই সেই সময় আন্দোলনের পাশে ছিলেন না। ফলে বর্তমান কর্মসূচিগুলি কেবলমাত্র দলে শৃঙ্খলা বজায় রাখার একটি প্রচেষ্টা মাত্র।”
শহীদ স্মরণে রাজনৈতিক রং
নন্দীগ্রামের শহীদ স্মরণ বরাবরই রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। শুভেন্দুর বক্তব্যে সেই বিতর্ক আরও তীব্র হলো। তিনি বলেন, “নন্দীগ্রামের শহীদদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে না। বরং এই স্মরণ কর্মসূচিগুলি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। যারা সত্যিকারের আন্দোলনের সময় আত্মবলিদান করেছিলেন, তাদের স্মরণে এখন কোনও আন্তরিকতা নেই। এটি শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রচারের একটি মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া
শুভেন্দুর এই মন্তব্যের পর তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে পাল্টা প্রতিক্রিয়া এসেছে। দলের স্থানীয় নেতৃত্বের দাবি, শুভেন্দু অধিকারী এখন বিজেপির মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন। তৃণমূলের এক স্থানীয় নেতার মতে, “শুভেন্দু অধিকারীর এই ধরনের মন্তব্য তার হতাশা প্রকাশ করে। তিনি নিজেই একসময় তৃণমূলের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, অথচ এখন দল ছেড়ে বিরোধী শিবিরে গিয়ে নন্দীগ্রামের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন।”
রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে
নন্দীগ্রামের মাটি বরাবরই রাজনৈতিক লড়াইয়ের সাক্ষী। শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য তৃণমূলের বর্তমান নেতৃত্ব এবং শহীদ স্মরণ কর্মসূচি নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিরোধী দলনেতার কটাক্ষে তৃণমূলের রাজ্য ও স্থানীয় নেতৃত্ব উভয়েই অস্বস্তিতে পড়েছে।
নন্দীগ্রামের প্রতি তৃণমূলের সহানুভূতি সত্যিই কৃত্রিম কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে মতবিরোধ থাকলেও শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য রাজ্যের রাজনীতিতে তীব্র প্রভাব ফেলেছে। নন্দীগ্রামের আন্দোলনের প্রকৃত উত্তরাধিকার কার, তা নিয়ে তৃণমূল ও শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে এই তরজা আগামী দিনে আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।