নয়াদিল্লি: ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলায় আজই শীর্ষ আদালতে শেষ শুনানি৷ সওয়াল-জবাবে টানটান উত্তেজনা তৈরি হয়েছে৷ এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না জানালেন, ২৬ হাজার চাকরি বাতিল সংক্রান্ত মামলায় আসল ওএমআর শিট না থাকার সমস্যা হচ্ছে। আসল তথ্য জানা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। এই ক্ষেত্রে আদালত কী করতে পারে, প্রশ্ন তুললেন খোদ প্রধান বিচারপতি৷
স্কুলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে৷ এমনটাই উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর তদন্ত রিপোর্টে। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির এজলাসেও সে কথা জানান সিবিআইয়ের আইনজীবী। ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের রায়কেও সমর্থন জানিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এই মামলায় প্রধান বিচারপতি সিবিআইয়ের বক্তব্য জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী বলেন, “এসএসসি নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। সাদা খাতা জমা দিয়েও চাকরি পেয়েছেন অনেকে। হাই কোর্টের রায় একেবারেই যথার্থ। উচ্চ আদালতের রায়ই বহাল রাখা হোক।” এর আগের শুনানিতে শীর্ষ আদালতও জানিয়েছিল, যোগ্য ও অযোগ্যদের পৃথক করা সম্ভব না হলে, পুরো প্যানেল বাতিল করা হবে।
এদিনের শুনানিতে আইনজীবী মনিন্দর সিং বলেন, “এসএসসি বারবার জানিয়েছে যে, তাদের পক্ষে যোগ্য-অযোগ্য পৃথকীকরণ সম্ভব হচ্ছে না। এসএসসি বা বোর্ড তো নয়ই, রাজ্য সরকারও এর কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি। যোগ্য ও অযোগ্যের সংখ্যা কত, তা বলতে পারেনি।” সেই প্রেক্ষিতেই “পুরনো প্যানেল বাতিল করে ফের নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া উচিত’’ বলে সওয়াল করেন তিনি৷
সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, “নায়সা আমাদের জানায় তাদের কাছে কোনও ডেটা নেই। পরবর্তীতে আমরা ডেটা স্ক্যানটেক থেকে তথ্য সংগ্রহ করি। এরপর পঙ্কজ বনশলের (নায়সার প্রাক্তন কর্তা) কাছ থেকে ডেটা সংগ্রহ করা হয়। দুটো ডেটাকে আমরা মিলিয়ে দেখি।”
সিবিআইয়ের দাবি, “ডেটা স্ক্যানটেক ও পঙ্কজ বনশলের তথ্য মিলে গিয়েছে। পঙ্কজ বনশলের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য একেবারেই নির্ভুল।” সিবিআইয়ের আইনজীবীর আরও দাবি, “এসএসসির কাছে থাকা ডেটা কারসাজি করা হয়েছে৷ পঙ্কজ বনশলের কাছ থেকে পাওয়া ডেটায় কোনও রকম কারসাজি হয়নি।”
গত ২২ এপ্রিল স্কুল সার্ভিস কমিশন-এর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রায় ঘোষণা করেছিল কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ৷ তাঁরা যোগ্য-অযোগ্য পৃথক করতে না পেরে ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল ঘোষণা করেন। রাতারাতি চাকরি হারান ২৫,৭৫৩ জন। সেই সঙ্গে যাঁরা মেয়াদ-উত্তীর্ণ প্যানেলে চাকরি পেয়েছিলেন কিংবা সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের বেতন ফেরত দেওয়ার নির্দেশও দেন বিচারপতি। চার সপ্তাহের মধ্যে ১২ শতাংশ হারে সুদ-সহ বেতন ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়৷
উচ্চ আদালতের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার। পৃথক ভাবে মামলা করে রাজ্যের শিক্ষা দফতর, এসএসসি এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। গত ৭ মে সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি উঠলে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ চাকরি বাতিল মামলায় অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয়। সেই সময় শীর্ষ আদালত বলেছিল, যোগ্য-অযোগ্যদে আলাদা করা সম্ভব হলে, গোটা প্যানেল বাতিল করা যুক্তি সঙ্গত হবে না।