SSC কাণ্ডে সুপ্রিমকোর্টে খারিজ রাজ্যের রিভিউ পিটিশন

পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিলের মামলায় রাজ্য সরকার ও স্কুল সার্ভিস কমিশনের (Supreme Court) দায়ের করা রিভিউ পিটিশন খারিজ করেছে সুপ্রিম…

TMC MLA Nirmal Ghosh Reacts After Daughter-in-Law’s Name Appears in Tainted SSC Candidate List

পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিলের মামলায় রাজ্য সরকার ও স্কুল সার্ভিস কমিশনের (Supreme Court) দায়ের করা রিভিউ পিটিশন খারিজ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এই রায়ে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চাকরি ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।

২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে সুপ্রিম কোর্ট গত এপ্রিল মাসে পুরো প্যানেল বাতিল করেছিল। এরপর রাজ্য সরকার ও এসএসসি রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেছিল, কিন্তু সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। এই রায় রাজ্যের শিক্ষক সমাজ ও রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করেছে।

   

২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে এসএসসির মাধ্যমে নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক এবং গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি পদে প্রায় ২৫,৭৩৫ জনের নিয়োগ হয়েছিল। কিন্তু এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়, এবং হাইকোর্ট এই প্যানেল বাতিলের নির্দেশ দেয়।

এরপর সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হলে, প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ গত ৩ এপ্রিল, ২০২৫-এ পুরো প্যানেল বাতিল করে দেয়। আদালত জানায়, যোগ্য ও অযোগ্য প্রার্থীদের আলাদা করা সম্ভব হয়নি বলে পুরো প্যানেল বাতিল করা হলো। এই রায়ে শিক্ষকদের চাকরি বাতিল হয় এবং অযোগ্য প্রার্থীদের বেতন ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

রাজ্য সরকার ও এসএসসি এই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য ৩ মে, ২০২৫-এ সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন দায়ের করে। তারা দাবি করে, এত বিপুল সংখ্যক শিক্ষকের চাকরি বাতিল হলে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। বিশেষ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ক্ষতি হবে। পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদও আবেদন করে বলেছিল, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকদের চাকরি বহাল রাখা হোক।

সুপ্রিম কোর্ট আংশিকভাবে এই আবেদন মেনে নিয়ে বলেছিল, অযোগ্য বলে চিহ্নিত না হওয়া শিক্ষকরা ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫ পর্যন্ত চাকরি চালিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু সম্প্রতি রিভিউ পিটিশন খারিজ হওয়ায় চাকরি ফেরতের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে গেছে।

এই রায়ের পর চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা হতাশা প্রকাশ করেছেন। অনেকে বিকাশ ভবনের সামনে বিক্ষোভ করছেন এবং রাজ্য সরকারের কাছে ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছেন। তারা বলছেন, যোগ্য প্রার্থীরাও অযোগ্যদের সঙ্গে একযোগে চাকরি হারিয়েছেন, যা অন্যায়। কিছু শিক্ষক সংসদে এই ইস্যু তোলার জন্য সাংসদদের কাছে চিঠি দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।

Advertisements

তবে, আইনজীবী ও সিপিএম নেতা বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য স্পষ্ট জানিয়েছেন, “রিভিউ পিটিশনের মাধ্যমে চাকরি ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। নতুন পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে হবে।” এই মন্তব্যে অনেক শিক্ষক হতাশ হয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, রাজ্য সরকারকে ৩১ মে, ২০২৫-এর মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হয়েছিল। শিক্ষা দপ্তর ও এসএসসি জানিয়েছে, তারা নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এবারের পরীক্ষায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ওএমআর শিটের সঙ্গে কার্বন পেপার দেওয়া হবে। 

প্যানেলের মেয়াদ কমিয়ে ছয় মাস করা হতে পারে। তবে, চাকরিহারা শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেই নতুন পরীক্ষায় অংশ নিতে অনিচ্ছুক। তারা বলছেন, বছরের পর বছর চাকরি করার পর আবার পরীক্ষা দেওয়া তাদের জন্য অবিচার।

এই রায় রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্ক তৈরি করেছে। বিরোধী দলগুলো রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে বলছে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি না হলে এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস সরকার দাবি করছে, তারা চাকরিহারাদের পাশে আছে এবং নতুন নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও শিক্ষকদের পক্ষে কথা বলেছেন, কিন্তু আদালতের নির্দেশ মানতে বাধ্য।

ব্রিটিশদের ভয়ে পালিয়ে জার্মানিতে! বাম রাজ্যে নেতাজীর অপমান

সুপ্রিম কোর্টের রিভিউ পিটিশন খারিজের ফলে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। যদিও আদালত নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে, তবু চাকরিহারাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। এই ঘটনা শিক্ষা ব্যবস্থা এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার গুরুত্ব তুলে ধরেছে। আগামী দিনে নতুন নিয়োগ কীভাবে হয় এবং চাকরিহারারা কী পদক্ষেপ নেন, তা নিয়ে সবার নজর থাকবে।