মঙ্গলবার ৭ জানুয়ারি, ২০২৫, গোটা পশ্চিমবঙ্গের নজর ছিল সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) দিকে। ২৬ হাজার চাকরিহারা শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য যে মামলাটি শীর্ষ আদালতে (Supreme Court) শুনানি হওয়ার কথা ছিল, তা শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে গেল। এখন ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫-এ এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। সুপ্রিম কোর্টে(Supreme Court) এদিন সিবিআই-কে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং ১৫ জানুয়ারির মধ্যে মামলার সব পক্ষকে হলফনামা জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
শীর্ষ আদালতের (Supreme Court) শুনানি পিছিয়ে যাওয়ার পর ২৬ হাজার চাকরিহারা শিক্ষকদের মধ্যে হতাশার পাশাপাশি আরও একবার ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। চাকরিহারা শিক্ষকেরা দাবি করছেন, ‘‘আমাদের আন্দোলন ততদিন চলবে, যতদিন না আমরা চাকরি ফেরত পাচ্ছি। আমাদের এই লড়াই শেষ হবে না, যতদিন না আমরা ন্যায়বিচার পাব। সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) ওপর আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে।’’
অন্যদিকে, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী এক মহিলা শিক্ষক বলেন, “আজকের দিনে, আমাদের দীর্ঘ অপেক্ষার আরও কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা খুবই হতাশ। আমাদের অসম্মানের দিন আরও বাড়ল। একদিকে, আমরা অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত, অন্যদিকে, অসুবিধা মোকাবিলা করতে করতে আমাদের সম্মান হারানোর দিনগুলি আরও দীর্ঘ হচ্ছে। কিন্তু রাজপথ ছাড়ব না। যতদিন না আমাদের চাকরি ফিরে পাচ্ছি, ততদিন এই আন্দোলন চলবে।”
এছাড়া, অন্য এক চাকরিহারা শিক্ষক বলেন, ‘‘এটা আমাদের জীবনের অন্যতম বড় লড়াই। যখন জীবনের মরণ-বাঁচন সঙ্গী হয়, তখন আমাদের থেমে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’’ তাঁদের মধ্যে অনেকেই বলেছেন, যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা যেন দ্রুত হয়, কারণ তারা আর সহ্য করতে পারছেন না।
এই মামলার সিবিআই তদন্তের প্রতি সম্পূর্ণ নজর রাখা হচ্ছে। ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট গত বছর ২২ এপ্রিল রায় ঘোষণা করে। ওই রায়ের ভিত্তিতে ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল ঘোষণা করা হয়। এর ফলস্বরূপ, ২৫,৭৫৩ জন শিক্ষক চাকরি হারান। আদালত সেই সময় ১২ শতাংশ সুদ সহ বেতন ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল, যার ফলে চাকরিহারা হওয়া এই শিক্ষকরা আপাতত অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন।
বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ, যাঁরা গত বছর এই মামলার রায় দিয়েছিলেন, তাঁদের রায়ের পর থেকে রাজ্যের স্কুলে নিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন করে আইনগত জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি, এর আগে সুপ্রিম কোর্টে শুনানির সময় এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে সন্দেহও উত্থাপিত হয়েছিল। সিবিআইয়ের তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, ৫,০০০’রও বেশি নিয়োগে দুর্নীতি ছিল, এবং এই বিষয়টি রাজ্য সরকারও আগেই মেনে নিয়েছিল।
আজকের শুনানি ছিল চাকরিহারা শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বলা এবং তাদের বক্তব্য শোনার দিন। কিন্তু বেঞ্চের পরিবর্তিত কম্পোজিশনের কারণে নতুন করে পুরো বিষয়টি শোনানোর প্রয়োজন ছিল। এ বিষয়ে আইনজীবী ফিরদৌস বলেন, “আজকের বেঞ্চের সাথে আগের বেঞ্চের কম্পোজিশন ভিন্ন ছিল। তাই আমাদের পুরনো বিষয়টি নতুন করে শুনতে হচ্ছিল। এর ফলে, ১৫ জানুয়ারি আবার শুনানি হবে, যেদিন নতুন বেঞ্চের সামনে বিষয়টি পুনরায় তুলে ধরা হবে।”
এদিন, সুপ্রিম কোর্টের শুনানি শেষ হলেও বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা জানিয়েছেন যে, তাঁদের আন্দোলন কোনওভাবেই থামবে না। ‘‘আমরা ২৪ ঘণ্টার অনশনে আছি, আমরা রাস্তায় আছি, আর যতদিন আমাদের চাকরি ফিরে না আসছে, ততদিন আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। আমাদের সম্মান এবং অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে,’’ এমনটাই বলছেন চাকরিহারা শিক্ষকরা।
এই মুহূর্তে, তাদের পরিস্থিতি অনেকটা কঠিন। দীর্ঘদিন ধরে বেকার থাকার ফলে, তাদের জীবনে চরম অর্থনৈতিক সংকটও নেমে এসেছে। তবে তারা যে কোনো পরিস্থিতিতেই সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সংকল্পে দৃঢ়, তা পরিষ্কার। তাঁরা বিশ্বাস করেন যে, শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে তাদের ন্যায়বিচার মেলে যাবে।
এদিনের শুনানি পিছিয়ে যাওয়ায় আরও কিছুদিন ধরে ২৬ হাজার চাকরিহারা শিক্ষকের অপেক্ষা বাড়ল, কিন্তু তাঁদের মধ্যে আস্থা রয়েছে যে, সুপ্রিম কোর্টে তাদের কাছে ন্যায়বিচার আসবে। ১৫ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানির মাধ্যমে এই দীর্ঘ অপেক্ষার পরিসমাপ্তি ঘটবে, এমনটাই আশা করছেন আন্দোলনকারীরা। তবে যে অঙ্গীকার তারা করেছেন, তা হলো, ‘‘ততদিন পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ব না, যতদিন না আমরা ন্যায়বিচার পাই।’’