কলকাতা: সুপ্রিম কোর্টে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) সংক্রান্ত মামলার শুনানি ফের একদিন পিছিয়ে গেল (supreme court da hearing)। সোমবার এই মামলার বিস্তারিত শুনানি না হলেও শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছে, মঙ্গলবার থেকে এই মামলায় প্রয়োজনে রোজ শুনানি হতে পারে।
মঙ্গলবার থেকে ডিএ মামলায় গতি
সোমবার রাজ্যের তরফে অনুরোধ জানানো হয়েছিল, মামলার শুনানি যেন আগামী সোমবারে স্থগিত রাখা হয়। কিন্তু বিচারপতি সঞ্জয় কেরোল সেই আর্জি সাফ খারিজ করে দেন। ফলে মঙ্গলবার থেকে ডিএ মামলার বিচারিক প্রক্রিয়ায় বড় গতি আসতে চলেছে বলেই মনে করছে কর্মচারী মহল।
এদিকে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ স্পষ্ট ভাষায় রাজ্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার আদালতে জানিয়েছে যে কেন্দ্রীয় হারে বকেয়া ডিএ মেটাতে গেলে সরকারের “কোমর ভেঙে যাবে”। অথচ প্রতি বছর দুর্গাপূজা উপলক্ষে ক্লাবগুলিকে অনুদান বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাহলে সেই অর্থ আসছে কোথা থেকে? আর সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য নিয়ে কেন এই অনীহা? এই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে যৌথ মঞ্চ।
শীর্ষ আদালতের প্রতি ভরসা রেখে তারা আশা করছেন, অবশেষে ন্যায় মিলবে, এবং বহু প্রতীক্ষিত কেন্দ্রীয় হারে ডিএ সহ বকেয়ার রূপরেখাও স্পষ্ট হবে।
মামলার পটভূমি
গত ১৬ মে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল, ৬ সপ্তাহের মধ্যে মোট বকেয়ার অন্তত ২৫ শতাংশ মিটিয়ে দিতে হবে। কিন্তু রাজ্য সে নির্দেশ পালন না করে হলফনামা দিয়ে সময় চায় ৬ মাস। এমনকি, রাজ্যের প্রস্তাব ছিল যে বকেয়া কর্মীদের না দিয়ে কোর্টের কাছে টাকা জমা রাখা হোক, যতদিন না মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে।
এ নিয়ে কয়েকটি সরকারি কর্মী সংগঠন আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করেছে। সেই সবকিছু নিয়েই শুনানি চলাকালীনই শীর্ষ আদালতের তরফে নিয়মিত শুনানির বার্তা এল।
ডিএ ফারাক ও আর্থিক পরিসংখ্যান
বর্তমানে রাজ্যের সরকারি কর্মীরা ১৮ শতাংশ হারে ডিএ পান। অপরদিকে, কেন্দ্রীয় কর্মচারীরা পাচ্ছেন ৫৫ শতাংশ হারে ডিএ। অর্থাৎ, ৩৭ শতাংশ ফারাক রয়ে গিয়েছে।
রাজ্য সরকারের হিসেবে, সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ: ১১,৮৯০.১৮ কোটি টাকা এবং পেনশনপ্রাপ্তদের বকেয়া ১১,৬১১.৪৫ কোটি।
সিঙ্ঘভির সাফাই
রাজ্যের পক্ষে সর্বোচ্চ আদালতে সওয়াল করেছেন অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। তাঁর যুক্তি, পুরো বকেয়া ডিএ একবারে মেটাতে গেলে রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি আরও সঙ্কটজনক হয়ে উঠবে।
কী হতে চলেছে সামনে?
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, রাজ্যের সরকারি কর্মীরা কেন্দ্রীয় হারে ডিএ আদৌ পাবেন কি না? পেলে কবে থেকে? বকেয়ার কী পরিমাণ মিলবে এবং আদালতের অবস্থানই বা কী হবে?
এই প্রশ্নগুলির উত্তর মেলাতেই হয়তো এবার প্রতিদিন শুনানি শুরু করতে চলেছে দেশের শীর্ষ আদালত। কর্মী মহলে জেগেছে নতুন আশার আলো।