কলকাতা: বঙ্গে এসআইআর (SIR) ঢুকল বলে! তার আগে খোঁজ মিলল “দেশের জাল নথি তৈরির রাজধানী” (Fake Certificates) বলে পরিচিত গ্রামের! জেটি থেকে নেমেই মাত্র মিনিট পাঁচেকের হাটা পথ। রঙচটা ভবনটির বাইরে হলুদ-কালো বোর্ডের উপর জ্বলজ্বল করছে বর্তমান মানেরেগার হার। সুন্দরবনের (Sundarbans) পাঠানখালি গ্রাম পঞ্চায়েত ভবনটিই জন্মের ভুয়ো শংসাপত্র তৈরির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
গ্রামে সর্বসাকুল্যে ৪০০০ পরিবারের বাস। আর গত ২ বছরে প্রায় ৩৫০০ ভুয়ো জন্মের শংসাপত্র তৈরি করে দেওয়া হয়েছে এই গ্রামপঞ্চায়েত থেকে। যা পরে জাল পাসপোর্ট তৈরিতেও ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। পঞ্চায়েতের অস্থায়ী কর্মী গৌতম সর্দার পাঠানখালিরই বাসিন্দা।
তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় ইউনিটের সঙ্গে যার বেশ ভালোমত ওঠাবসা ছিল, নথি জালের মূল অভিযুক্ত হিসেবে গ্রেফতার হন ৭ জুন। পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছে, পাঠানখালির অভিযুক্তরা বড় চক্রের একটি অংশমাত্র। একজন অসৎ পঞ্চায়েত কর্মীর জন্য গোটা গ্রামের নাম বদনাম হয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন পাঠানখালির বাসিন্দারা।
“আমরা লজ্জিত” বলছেন পঞ্চায়েত প্রধান
পাঠানখালি, তেঁতুলতলি, বোর্তালি, জেলেপাড়া, গোপালকাটা, কামারপাড়া, নবগোপাল এবং তালতলা–এই ৮ টি গ্রাম নিয়ে গঠিত পাঠানখালি গ্রাম পঞ্চায়েত। সর্বমোট প্রায় ১৫ হাজার ভোটার রয়েছেন এই পঞ্চায়েতের অধীনে। কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, জাল পাসপোর্ট চক্রের তদন্তে তাঁদের কাছে সুন্দরবনের এই গ্রামের নাম উঠে আসে। প্রায় ৪০০ জন বাংলাদেশী নাগরিককে ভারতের জাল পাসপোর্ট দেওয়া হয়েছিল বলে জানায় পুলিশ।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, পঞ্চায়েত প্রধান সুচিত্রা ভুঁইয়া পঞ্চায়েতের অস্থায়ী কর্মী হিসেবে গোপাল সর্দারকে নিয়োগ করেছিলেন। প্রধানের লগইন তথ্য নিয়ে সরকারের ‘জন্ম মৃত্যু তথ্য’ পোর্টালে নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে লগ ইন করে নেন গোপাল। প্রধান জানিয়েছেন, গত দেড় বছরে প্রায় ৩৫০০ ভুয়ো জন্মের শংসাপত্র ইস্যু করা হয়েছে আমাদের গ্রামপঞ্চায়েত থেকে। সাধারণ ভাবে যে সংখ্যাটা হওয়া উচিৎ মাত্র ১৫০-২০০। গোপাল সর্দারের এই আচরণে আমরা লজ্জিত বলেন প্রধান সুচিত্রা ভুঁইয়া।
“দেশের জাল জন্মের শংসাপত্র তৈরির রাজধানী” তকমা
শুধুমাত্র পঞ্চায়েত প্রধান নন, গোপাল সর্দারের এই কাণ্ডকারখানায় মুখ পুড়েছে তাঁর পরিবারেও। গোপালের ভাই গৌতম সর্দার বলেন, “আমাদের এই গ্রামে থাকা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। আমরা রাস্তায় বেরোলে গ্রামবাসীরা আমাদের নিয়ে ঠাট্টা করে, কটূক্তি শোনায় যে আমার ভাইয়ের জন্য পুরো গ্রামটাই বদনাম হয়ে গিয়েছে”।
গ্রামের এক বাসিন্দা দীপালি মুন্ডা বলেন, “আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি, আমাদের গ্রামে বসে কোনও ব্যক্তি এই ধরণের কাজ করে চলেছে। লোকজন এখন পাঠানখালি গ্রাম পঞ্চায়েতকে দেশের ভুয়ো জন্মের শংসাপত্র তৈরির রাজধানী বলে মন্তব্য করে।