‘সংসদে বাংলায় বলতে হবে ইউসুফ পাঠানকে’, চ্যালেঞ্জ সুকান্তর

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Sukanta) বাংলা ভাষা ও বাঙালি পরিচয় নিয়ে সাম্প্রতিক বক্তব্যের জবাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি…

Sukanta challeges pathan to speak bengali

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Sukanta) বাংলা ভাষা ও বাঙালি পরিচয় নিয়ে সাম্প্রতিক বক্তব্যের জবাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি মমতার এই বক্তব্যকে “তুচ্ছ রাজনীতি” বলে আখ্যা দিয়ে দাবি করেছেন, আসন্ন ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের জনগণ, বিশেষ করে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর ক্ষুব্ধ।

মুর্শিদাবাদে সাম্প্রতিক হিংসার পর হিন্দু ভোটে ফাটল ধরানোর জন্য মমতা বাংলা ভাষার প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন বলে অভিযোগ করেছেন সুকান্ত। তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) সাংসদদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন, আগামী ২১ জুলাই থেকে শুরু হতে চলা সংসদের অধিবেশনে ইউসুফ পাঠান, কীর্তি আজাদ এবং সাকেত গোখলের মতো সাংসদদের বাংলায় ভাষণ দিতে হবে, যাতে মমতার বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসার প্রমাণ মেলে।

   

সুকান্ত মজুমদার বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তুচ্ছ রাজনীতি করছেন। নির্বাচন কাছে আসছে, আর গোটা পশ্চিমবঙ্গ, বিশেষ করে বাঙালি হিন্দুরা তাঁর উপর ক্ষুব্ধ। মুর্শিদাবাদের ঘটনার পর সবাই একত্রিত হয়েছে এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়। হিন্দু ভোটে ফাটল ধরাতে মমতা বাংলা ভাষার প্রসঙ্গ তুলেছেন।

আমরা মমতাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি, ২১ জুলাই থেকে সংসদের অধিবেশন শুরু হচ্ছে। বাংলার সব সাংসদ, বিজেপি হোক বা টিএমসি, সবাইকে লোকসভা এবং রাজ্যসভায় একটি করে বাংলা ভাষণ দিতে হবে। টিএমসি’র সব সাংসদই যেহেতু বাঙালি হওয়া উচিত, কারণ টিএমসি শুধু বাংলায় আছে, আমরা দেখতে চাই ইউসুফ পাঠান, কীর্তি আজাদ এবং সাকেত গোখলে বাংলায় ভাষণ দিচ্ছেন কি না। এটাই প্রমাণ করবে মমতা বাংলা ভাষাকে কতটা ভালোবাসেন।”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি কলকাতায় একটি প্রতিবাদ সভায় বাংলা ভাষা ও বাঙালি পরিচয় নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালি অভিবাসীদের উপর হয়রানি করা হচ্ছে এবং তাঁদের “বাংলাদেশি” বলে অপমান করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, “বাংলা ভাষায় কথা বলা মানেই কেউ বাংলাদেশি নয়। আমি এখন থেকে আরও বেশি বাংলায় কথা বলব। যদি পারেন, আমাকে আটক করে দেখান।” তিনি আরও দাবি করেন, ২২ লাখ বাঙালি অভিবাসী শ্রমিক বিভিন্ন রাজ্যে বৈধ পরিচয়পত্র নিয়ে কাজ করছেন, এবং তাঁদের বাংলাদেশি বলে অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।

মমতার এই বক্তব্যের জবাবে সুকান্ত মজুমদার টিএমসি’র লোকসভা প্রার্থী নির্বাচনের সমালোচনা করে বলেন, টিএমসি বাঙালি পরিচয়ের কথা বললেও তাঁদের প্রার্থী তালিকায় ইউসুফ পাঠান, কীর্তি আজাদের মতো বহিরাগতদের স্থান দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, “টিএমসি বাংলার গর্বের কথা বলে, কিন্তু তাঁদের প্রার্থীরা বাংলার নয়। ইউসুফ পাঠান গুজরাটের, কীর্তি আজাদ বিহারের। এরা কি বাংলা বলতে পারেন? এটা টিএমসি’র দ্বৈত চরিত্র।” সুকান্ত আরও অভিযোগ করেন, মমতা বাংলা ভাষার প্রসঙ্গ তুলে ভোটের রাজনীতি করছেন এবং হিন্দু ভোট বিভাজনের চেষ্টা করছেন।

Advertisements

মুর্শিদাবাদে গত এপ্রিলে ওয়াকফ (সংশোধন) আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জেরে সহিংসতার ঘটনায় বিজেপি মমতা সরকারকে হিন্দুবিরোধী বলে অভিযোগ করেছে। সুকান্ত দাবি করেন, এই ঘটনায় পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল, এবং মমতা “হিন্দুদের ভয় দেখিয়ে বাংলাদেশের মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছেন।” তিনি বলেন, “মুর্শিদাবাদে হিন্দু মহিলাদের উপর অত্যাচার হয়েছে, বাড়িঘর লুট হয়েছে। পুলিশ নীরব ছিল। এটা রাজ্য-প্রযোজিত দাঙ্গা।”

টিএমসি এই অভিযোগের পাল্টা জবাব দিয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিজেপি বাঙালি পরিচয়ের বিরুদ্ধে ঘৃণার রাজনীতি করছে। আমরা জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে কাজ করি।” তিনি আরও বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে টিএমসি বাংলার সংস্কৃতি ও পরিচয় রক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। টিএমসি’র রাজ্যসভার সাংসদ সাকেত গোখলে বলেন, “বিজেপি বাঙালি অভিবাসীদের বাংলাদেশি বলে অপমান করছে। আমরা এর বিরুদ্ধে রাস্তায় নামব।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বিতর্ক ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাংলার রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ তৈরি করবে। বিশ্লেষক সুজিত ঘোষ বলেন, “মমতা বাংলা ভাষা ও পরিচয়ের প্রসঙ্গ তুলে বাঙালি ভোটারদের একত্রিত করার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে, বিজেপি হিন্দু ভোট একত্রিত করতে মুর্শিদাবাদের ঘটনাকে হাতিয়ার করছে।”

সিনে প্রেমীদের জন্য সুখবর! রূপালি পর্দায় ফের ছুটবেন ‘দ্য ফ্লাইং শিখ’

তিনি আরও বলেন, সুকান্তের সংসদে বাংলা ভাষণের চ্যালেঞ্জ টিএমসি’র প্রার্থী নির্বাচনের কৌশলের দুর্বলতাকে তুলে ধরার প্রয়াস।সামাজিক মাধ্যমে এই বিতর্ক তীব্র আকার নিয়েছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “মমতা বাংলার গর্বের কথা বলেন, কিন্তু তাঁর দলের সাংসদরা বাংলা বলতে পারেন না। এটা দ্বৈত চরিত্র।” আরেকজন লিখেছেন, “বিজেপি বাঙালি অভিবাসীদের অপমান করছে। মমতা ঠিকই বাংলা ভাষার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।”

এই বাকযুদ্ধ আগামী দিনে বাংলার রাজনীতিতে আরও তীব্র হতে পারে। সংসদে বাংলা ভাষণের চ্যালেঞ্জ কীভাবে টিএমসি গ্রহণ করে এবং এর রাজনৈতিক প্রভাব কী হয়, তা নিয়ে সবার নজর রয়েছে।