পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের (Sukanta) একটি বিস্ফোরক মন্তব্য। তিনি অভিযোগ করেছেন, তৃণমূল কংগ্রেস নেতা এবং রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম মুর্শিদাবাদ সফরে গিয়ে ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’ গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে দাওয়াতে-ইসলামের ‘ফায়ার ব্র্যাণ্ড’ হিসেবে কাজ করছেন।
সুকান্তর (Sukanta) দাবি, মুর্শিদাবাদের সার্কিট হাউসে জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠকে ফিরহাদের শরীরী ভাষা এবং আচরণ দাওয়াতে-ইসলামের কৌশলগত নির্দেশ প্রদানের ইঙ্গিত দেয়। এই মন্তব্য রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।সুকান্ত মজুমদার এক্স প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, “কলকাতা ছেড়ে ফিরহাদ হাকিম মুর্শিদাবাদে পৌঁছে গেছেন।
সার্কিট হাউজে জুতো খুলে রেখে, আরামদায়ক সোফায় শরীর এলিয়ে তিনি সম্ভবত জেলাশাসককে দাওয়াতে-ইসলামের কৌশল বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। একজন উচ্চশিক্ষিত আমলার সঙ্গে তাঁর শরীরী ভাষা অন্তত তাই বলছে।” এই মন্তব্যে ফিরহাদ হাকিমের উদ্দেশ্য নিয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে , যা তৃণমূল কংগ্রেস তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
তৃণমূল কংগ্রেস (Sukanta) এই অভিযোগকে ‘বিষাক্ত এবং সাম্প্রদায়িক’ বলে সমালোচনা করেছে। তারা আরও বলেছে , “ফিরহাদ হাকিম একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী এবং মেয়র। তিনি মুর্শিদাবাদে প্রশাসনিক কাজে গিয়েছিলেন, যা তাঁর দায়িত্বের অংশ। সুকান্ত মজুমদারের এই মন্তব্য সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের চেষ্টা এবং তৃণমূলের ইমেজ নষ্ট করার রাজনৈতিক কৌশল।”
তৃণমূলের মতে, (Sukanta) “‘গ্রেটার বাংলাদেশ’ বলে কোনো বিষয় নেই। এটি বিজেপির মনগড়া অভিযোগ, যা জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে।”ফিরহাদ হাকিম, যিনি কলকাতা পোর্ট কেন্দ্র থেকে তিনবারের বিধায়ক এবং ২০১৮ সাল থেকে কলকাতার মেয়র, এই অভিযোগের জবাবে বলেন, “আমি মুর্শিদাবাদে প্রশাসনিক কাজে গিয়েছিলাম।
এই ধরনের মন্তব্য আমার ধর্মীয় পরিচয়কে লক্ষ্য করে করা হচ্ছে, যা দুর্ভাগ্যজনক। আমি ভারতের নাগরিক এবং আমার কাজ দেশের উন্নয়নের জন্য।” তিনি আরও বলেন, বিজেপি এই ধরনের মন্তব্যের মাধ্যমে রাজ্যে সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইছে।
‘দাওয়াতে-ইসলাম’ (Sukanta) একটি ইসলামী প্রচারমূলক সংগঠন, যা ধর্মীয় শিক্ষা ও সংস্কারের উপর জোর দেয়। তবে, সুকান্তর মন্তব্যে এই সংগঠনের সঙ্গে ফিরহাদের কোনো সংযোগ থাকার বিষয়টি কোনো প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত নয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই অভিযোগ বিজেপির একটি কৌশল হতে পারে, যার মাধ্যমে তারা ফিরহাদের ধর্মীয় পরিচয়কে ব্যবহার করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে চাইছে।
সামাজিক মাধ্যমে এই বিতর্ক তীব্র আকার ধারণ করেছে। তৃণমূল সমর্থকরা সুকান্তর মন্তব্যকে ‘সাম্প্রদায়িক এবং বিষাক্ত’ বলে সমালোচনা করছেন। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “ফিরহাদ হাকিমের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ বিজেপির হতাশা প্রকাশ করে। তারা সাম্প্রদায়িকতার মাধ্যমে ভোট কাড়তে চাইছে।” অন্যদিকে, বিজেপি সমর্থকরা সুকান্তর পক্ষে বলছেন, “ফিরহাদের মুর্শিদাবাদ সফরের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করা উচিত।
জনগণের জানার অধিকার আছে।”মুর্শিদাবাদ, যেখানে মুসলিম জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য, সেখানে এই ধরনের মন্তব্য সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি করেছে।
বিজেপি(Sukanta) এবং তৃণমূলের মধ্যে এই বাকযুদ্ধ ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনীতিকে আরও উত্তপ্ত করবে।”এই বিতর্কের প্রেক্ষিতে তৃণমূল দাবি করেছে, ফিরহাদ হাকিমের মুর্শিদাবাদ সফর ছিল সম্পূর্ণ প্রশাসনিক। তিনি জেলার উন্নয়নমূলক প্রকল্প পর্যালোচনা এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার জন্য সেখানে গিয়েছিলেন।
ট্রেনের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে AI, ভারতীয় রেলের বড় পদক্ষেপ
তবে, সুকান্তর (Sukanta) মন্তব্য এই সফরকে একটি বিতর্কিত রূপ দিয়েছে।এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ফিরহাদ হাকিমের দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে তিনি সবসময় তৃণমূলের একজন প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত। তবে, এই ধরনের অভিযোগ তাঁর ইমেজের উপর প্রভাব ফেলবে কিনা তা সময় বলবে । আগামী দিনে এই বিতর্ক কীভাবে রাজনৈতিক সমীকরণকে প্রভাবিত করে, তাও দেখার বিষয়।